মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

সিরিয়ায় ইসরায়েলি বিমান হামলা: নেতানিয়াহুর উদ্দেশ্য কী?

গত ২ এপ্রিল, বুধবার সিরিয়ার মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হামার সামরিক বিমানবন্দর ও পূর্ব হোমসের বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্র এবং বিমানবন্দর ছিল এই হামলার মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি দারা ও কুনাইত্রা প্রদেশেও ইসরায়েলি সেনাদের স্থল অভিযান ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকে সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলা এখন প্রায় নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

হামলার পেছনে কী বার্তা আছে?

এই সাম্প্রতিক হামলা কেবল সামরিক কৌশলের অংশ নয়, বরং এর মাধ্যমে স্পষ্টভাবে শক্তি প্রদর্শন করতে চেয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজায় যুদ্ধ যখন শেষের দিকে, তখন সিরিয়াকে ব্যবহার করে নেতানিয়াহু আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। তাঁর মূল উদ্দেশ্য—সিরিয়ার সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করে দেশটিকে এমন এক অবস্থায় নিয়ে যাওয়া, যাতে ভবিষ্যতে ইসরায়েলের জন্য কোনো নিরাপত্তা হুমকি তৈরি না হয়।

বাশার আল আসাদের পতনের পর সিরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি ইসরায়েলের জন্য আরও জটিল হয়ে উঠেছে। সেই প্রেক্ষাপটেই ইসরায়েল ধীরে ধীরে সিরিয়ার অস্ত্রভাণ্ডার ও সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করছে। এমনকি পুরনো অস্ত্রাগারও তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। এর মাধ্যমে ইসরায়েল পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছে—সিরিয়ার নতুন সরকার কখনোই শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গড়ে তুলতে পারবে না, যেখানে থাকবে ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান কিংবা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

সিরিয়ায় ইসরায়েলের উদ্দেশ্য কী?

ইসরায়েল চায়, সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো অস্থিতিশীল থাকুক, যাতে সেখানে ইসলামী সামরিক শক্তি গড়ে উঠতে না পারে এবং তাদের প্রভাব বজায় থাকে। দক্ষিণ দামেস্ককে পুরোপুরি নিরস্ত্র অঞ্চলে রূপান্তরের লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে তারা। এই পরিকল্পনায় তারা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক মিত্রদেরও সম্পৃক্ত করছে। তুরস্কের পরিবর্তে রাশিয়াকে সম্ভাব্য অংশীদার হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ সিরিয়ায় এখনো রাশিয়ার উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে এবং ইসরায়েলও তাদের সহযোগিতায় আগ্রহী। রাশিয়া নিজেও ইসরায়েলের মাধ্যমে সিরিয়ায় নিজের হারানো প্রভাব ফিরিয়ে আনতে চাইছে।

ইসরায়েল চাইছে, সিরিয়ার ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে যেকোনো বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বা সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দিতে। পূর্ব হিমস ও হামা অঞ্চলে পরিচালিত হামলাগুলোর লক্ষ্যই হলো—সিরিয়ার সামরিক শক্তিকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া।

কৌশলগত বার্তা

হালবের একটি সাম্প্রতিক চুক্তির পর সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)-এর মিত্র একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে শেখ মাকসুদ ও আশরাফিয়া এলাকা ছাড়তে বাধ্য করার ঘটনাই ছিল এই হামলার প্রেক্ষাপট। এতে বোঝা যায়, ইসরায়েল তুরস্ক ও সৌদি আরবের প্রভাব সীমিত করার বার্তা দিচ্ছে। তারা স্পষ্ট করছে, সিরিয়ার সরকার কোনো সামরিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না, এমনকি সেটিতে মার্কিন সমর্থন থাকলেও, যদি সেটা ইসরায়েলের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়।

সিরিয়ার অবস্থান

সিরিয়ার বর্তমান সরকার শুরু থেকেই বলছে, তারা সামরিক সংঘাতে জড়াতে চায় না। বরং জাতিসংঘ ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর সহায়তায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের মোকাবিলা করতে চায়। যদিও ইসরায়েল এই সরকারের ওপর আস্থা রাখে না, তবু যদি তারা ভবিষ্যতে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তায় হুমকি না হয়, তাহলে কূটনৈতিক সমঝোতার পথ খোলা থাকতে পারে। ইসরায়েল এমন এক পরিস্থিতি গড়ে তুলতে চায়, যেখানে আলোচনার টেবিলেও তাদের অবস্থান শক্তিশালী থাকে। এজন্য তারা হামলা চালিয়ে এখন অর্জিত সুবিধাগুলো ধরে রাখতে চায়, যা ভবিষ্যতে সিরিয়াকে সমঝোতায় বাধ্য করবে।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা