গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান হামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। গতকাল মঙ্গলবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যত দিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে অস্ত্র ও সামরিক সহায়তা প্রদান করবে, তত দিন তারা এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অংশীদার হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দাবি, এসব অপরাধের দায়ভার ইসরায়েলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রকেও নিতে হবে, কারণ তাদের সহায়তা ছাড়া এই হামলা সম্ভব হতো না।
বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, যদি তাঁর প্রশাসন এই অপরাধ থেকে দূরে থাকতে চায়, তবে অবিলম্বে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ব্রুনো স্টানিও বলেন, ট্রাম্প বলেছেন, গাজার যুদ্ধ ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের বিষয়, যুক্তরাষ্ট্রের নয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যদি সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখে, তাহলে এই যুদ্ধের দায় তার প্রশাসনকেও নিতে হবে।
ব্রুনো স্টানিও আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সেই যুদ্ধগুলোর মাধ্যমে সফল হবে, যা তারা সরাসরি লড়বে না। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তিনি ২,০০০ পাউন্ড ওজনের বোমার চালান স্থগিতের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন, যা তার কথার সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।
২০২৪ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলে ২,০০০ ও ৫০০ পাউন্ড ওজনের ভারী বোমার চালান স্থগিত করেছিল। তবে ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ট্রাম্প সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, যত দিন ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাবে, তত দিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তাদের সামরিক সহায়তা ও অস্ত্র বিক্রি স্থগিত রাখা। পাশাপাশি তারা বলেছে, গাজায় পুনর্গঠন ও ক্ষতিপূরণে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান রাখা উচিত, কারণ এই হামলায় মূলত মার্কিন অস্ত্রই ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, যুদ্ধাপরাধে জড়িত কোনো দেশকে অস্ত্র সহায়তা দেওয়া সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। ১৯৬১ সালের বিদেশি সহায়তা আইনের ৫০২(বি) ধারা অনুযায়ী, যে কোনো দেশ যুদ্ধবিধি লঙ্ঘন করলে সেখানে অস্ত্র সরবরাহ অবৈধ।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েল মার্কিন মানবিক সহায়তা গাজায় পৌঁছানোর পথেও বাধা সৃষ্টি করছে, যা স্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্রের আইনের লঙ্ঘন।
সংগঠনটি বলেছে, ইসরায়েল যদি অবিলম্বে যুদ্ধাপরাধ বন্ধ না করে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তাদের সঙ্গে সব ধরনের সামরিক সহযোগিতা স্থগিত করা। অন্যথায়, ইসরায়েলি বাহিনীর অপরাধের দায় যুক্তরাষ্ট্রকেও নিতে হবে।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি