গাজা উপত্যকায় ৬০০ দিন ধরে চলতে থাকা ইসরায়েলি আগ্রাসনে একেবারে ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যখাত। অক্সিজেনের অভাব, ওষুধের সংকট, চিকিৎসা যন্ত্রপাতির ধ্বংস এবং হাসপাতালগুলোর অচলাবস্থা – সব মিলিয়ে মানবিক বিপর্যয় পৌঁছেছে চরমে। হাজারো মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সেখানকার ৩৪টি অক্সিজেন উৎপাদন কেন্দ্রের মধ্যে ২৫টি ইসরায়েলি বোমা হামলায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। অবশিষ্ট ৯টি আংশিকভাবে চালু থাকলেও রোগীদের প্রয়োজন পূরণে তা একেবারেই অক্ষম। আইসিইউ, অপারেশন থিয়েটার, নবজাতক ইউনিট ও জরুরি বিভাগে অক্সিজেনের চাহিদা দ্বিগুণ হলেও সরবরাহ নেই বললেই চলে।
বর্তমানে গাজার ৩৮টি হাসপাতালের মধ্যে ২২টি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় অর্ধেক ওষুধের মজুত ফুরিয়ে গেছে, এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীর ৬৫ শতাংশই অনুপস্থিত। ১০৫টি প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৩০টি এখনো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালে শয্যা দখলের হার ১০৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে—যা চিকিৎসা সেবার ওপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করছে।
চিকিৎসা যন্ত্রপাতির অবস্থাও নাজুক। ইতোমধ্যে গাজার সবগুলো এমআরআই মেশিন এবং ১২টি সিটি স্ক্যান মেশিন ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে রেডিওলজিক্যাল সেবা একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্র চালাতে প্রয়োজনীয় ১১০টি জেনারেটরের মধ্যে সচল রয়েছে মাত্র ৪৯টি, যার অনেকগুলো জ্বালানির অভাবে যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এমন সংকটের মধ্যে কিডনি রোগীদের ৪১ শতাংশ ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে মারা গেছেন আরও ৪৭৭ জন। অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে ৬০ শিশুর—যারা একটু যত্ন পেলে হয়তো বাঁচতে পারত।
সবশেষে, গতকাল ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলের তেল আল-জারতারে অবস্থিত ‘আল-আউদা’ হাসপাতালের মূল ভবনে হামলা চালায়, যা অবশিষ্ট চিকিৎসা সেবাকেও আরও দুর্বল করে দিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, আন্তর্জাতিক সহায়তা ও জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে গাজার পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধসে পড়বে। তখন হাজারো মানুষের জীবন রক্ষা করা আর সম্ভব হবে না।
সূত্র: আল-মায়াদিন