ইউক্রেন সিরিয়ায় ৫০০ টন গমের আটা সহায়তা পাঠিয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (WFP) সঙ্গে মিলে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদেমির জেলনিস্কি।
শুক্রবার ২৭ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ দেওয়া এক পোস্টে জেলেনস্কি জানান, একটি ত্রাণবাহী কাফেলা সিরিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেছে। ইউক্রেনের ‘শস্য থেকে সহায়তা’ উদ্যোগের আওতায় এই ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এ সহায়তা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ৩৩ হাজার পরিবার বা ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
গত ১৩ ডিসেম্বর রাশিয়া সিরিয়ায় গম রপ্তানি স্থগিত করে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশটির নতুন সরকারের বিষয়ে অনিশ্চয়তা এবং আগের বকেয়া অর্থ পরিশোধে বিলম্বের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর পরদিন ইউক্রেন জানায়, তারা সিরিয়ার জন্য খাদ্য সহায়তা দিতে প্রস্তুত, বিশেষ করে বাশার আল-আসাদের সরকারের পতনের পর।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় কার্যালয় (UNOCHA) জানায়, তুরস্ক সীমান্ত হয়ে সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে মানবিক সহায়তা পাঠানো অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, সংস্থাটি জানায়, ‘বাব আল-হাওয়া’ সীমান্ত দিয়ে ২০টিরও বেশি ত্রাণবাহী ট্রাক ইদলিবে প্রবেশ করেছে।
এসব ত্রাণে জাতিসংঘের তিনটি সংস্থার পক্ষ থেকে পাঠানো খাদ্য এবং স্বাস্থ্যসামগ্রী অন্তর্ভুক্ত ছিল।
UNOCHA সতর্ক করে জানায়, ইদলিব ও উত্তর আলেপ্পোর শরণার্থী শিবিরে শীত মৌসুমে প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার মানুষ কঠিন মানবিক সংকটে পড়েছে। শরণার্থীদের বেশিরভাগই তাদের নিজ ভূমিতে ফিরতে চাইলেও মৌলিক সেবার অভাব, ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো এবং বিস্ফোরক সামগ্রীর উপস্থিতি তাদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
UNOCHA-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শুরু থেকে তুরস্কের সীমান্ত হয়ে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় ৭৭৭টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে। এসব ট্রাকে খাদ্য, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং অন্যান্য জরুরি সহায়তা ছিল।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (UNHCR) জানায়, এ পর্যন্ত লেবানন, জর্ডান এবং তুরস্ক থেকে প্রায় ৫৮ হাজার ৩৫০ জন সিরিয়ান শরণার্থী নিজ দেশে ফিরেছে। এদের মধ্যে ২৬ শতাংশ পুরুষ, ২৮ শতাংশ নারী এবং ৪৬ শতাংশ শিশু।
সংস্থাটি আরও জানায়, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে আরও প্রায় ১০ লাখ সিরিয়ান শরণার্থী দেশে ফিরতে পারে। তবে ইদলিবে গিয়ে দেখা গেছে, ফেরত আসা শরণার্থীরা চরম দুর্দশায় আছে। কেউ শিবিরে বাস করছে, কেউ ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে, আবার কেউ উচ্চ ভাড়ার কারণে সমস্যায় পড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়ায় খাদ্য সহায়তা এবং মানবিক কার্যক্রম যতই চলুক না কেন, দেশটির পুনর্গঠন এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শরণার্থীদের সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে।
সূত্র : ইনাব বালাদি