মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

সিরিয়ার ভবিষ্যৎ ও আরব বিশ্বের ভূমিকা, সুযোগ না কি চ্যালেঞ্জ?

বিশ্ব আজ টালমাটাল, একের পর এক সংকটে বিপর্যস্ত। স্থিতিশীলতার পথ বারবার হয়ে পড়ছে অনিশ্চিত। এই প্রেক্ষাপটে সময়ের দাবি—দূরদর্শী ও কৌশলগত সমাধান। প্রশ্ন হলো, বহু দশক ধরে কেবল প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থানে থাকা আরব বিশ্ব যদি একবার কোনো ঘটনার নেতৃত্ব নিতে পারত, তাহলে কি শুরু হতো নতুন ইতিহাসের?

ধরা যাক, তারা এক সাহসী উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিল—যার লক্ষ্য, দীর্ঘ যুদ্ধ ও ধ্বংসের পর সিরিয়াকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করা। এক পরিকল্পনা, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপকে পুনর্গঠনের জন্য গৃহীত বিখ্যাত ‘মার্শাল পরিকল্পনা’র আদলে। তাহলে কি আমরা দেখতে পেতাম এক ভিন্ন মধ্যপ্রাচ্য—একটি নতুন সিরিয়া, যেটি আরও স্থিতিশীল, কম সহিংস, এবং মানবাধিকারে শ্রদ্ধাশীল?

সিরিয়া—আরব বিশ্বের রক্তাক্ত হৃদয়

সিরিয়া এমন এক দেশ, যা দীর্ঘকাল ধরে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ষড়যন্ত্রের চরম মূল্য দিয়ে চলেছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটির শহরগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, কোটি কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে, শহীদ হয়েছে লাখো মানুষ। তবু, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভূগোলের দিক থেকে সিরিয়া এমন এক কেন্দ্রবিন্দু, যাকে পাশ কাটানো যায় না।

সিরিয়ার পুনর্গঠন কেবল মানবিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি ভূরাজনৈতিক অপরিহার্যতা। যত দেরি হবে, ততই বাড়বে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার ঝুঁকি। একটি সফল ‘আরব মার্শাল পরিকল্পনা’ শুধু সিরিয়াকে নয়, গোটা আরব অঞ্চলকেই এনে দিতে পারে নতুন দৃঢ়তা ও স্থিতিশীলতা।

শুধু ইট-বালুর নয়, এক সাংস্কৃতিক পুনর্গঠন

এখানে প্রয়োজন শুধুই বিল্ডিং বানানো নয়, বরং মানুষের কল্যাণকে কেন্দ্রে রেখে এক দীর্ঘমেয়াদী ও সৃজনশীল সংস্কার উদ্যোগ। এমন হাসপাতাল, যেখানে প্রতিটি নাগরিক পাবে চিকিৎসা; এমন বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিরপেক্ষ পরিবেশে গড়ে তুলবে নিজেদের; এমন সংবাদমাধ্যম, যা সত্য তুলে ধরবে এবং গণতন্ত্র চর্চায় ভূমিকা রাখবে; আর এমন স্মার্ট অবকাঠামো, যা ভবিষ্যতের সাথে তাল মিলিয়ে চলবে। পাশাপাশি, উৎপাদনশীল অর্থনীতিতে বিনিয়োগ হবে প্রকৃত পুনর্গঠনের ভিত্তি।

শান্তির পক্ষে বিনিয়োগ, দ্বিধার বিপরীতে

দুঃখজনকভাবে, অনেক আরব দেশ এখনো সিরিয়ার সংকটকে দূর থেকে দেখছে, বা আঞ্চলিক জটিলতার জালে বন্দী। কিন্তু কী হতো, যদি তারা নিজেদের অবস্থান বদলে কার্যকর ভূমিকা নিত? শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগ, শিক্ষামূলক মিশন, এবং জাতীয় পুনর্গঠন উদ্যোগে সহায়তা—এসব হতে পারত একটি নতুন পথের সূচনা। এর মধ্য দিয়ে আরবরা পরিণত হতে পারত সিরিয়ার পুনর্গঠনে নেতৃত্বদানকারী এক শক্তিতে।

এখনো আছে ঐতিহাসিক সুযোগ

যদিও সিরিয়া আজ ধ্বংসস্তূপে, তবে আশার আলো একেবারে নিভে যায়নি। সিরিয়ার মানুষ আজও প্রস্তুত পুনর্গঠনের জন্য—শুধু প্রয়োজন স্থায়ী সহায়তা। আরব বিশ্বের হাতে রয়েছে অর্থ ও মানবসম্পদ—যা সঠিকভাবে পরিচালিত হলে বদলে যেতে পারে ইতিহাসের গতিপথ। দরকার শুধু সাহসী সিদ্ধান্ত, নতুন ভাবনা, এবং দেরি না করে কাজে নেমে পড়া।

‘একটি নতুন সিরিয়ার পথে’ আরবদের যাত্রা

এই পরিকল্পনা সফল হলে, তার প্রভাব পড়বে শুধু সিরিয়াতেই নয়—পুরো অঞ্চলে। এটি হতে পারে আরব ঐক্যের এক কার্যকরী রূপরেখা, যেখানে সহযোগিতা কেবল অর্থনীতিতে সীমাবদ্ধ না থেকে মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতেও প্রতিষ্ঠিত হবে।

‘একটি নতুন সিরিয়া’ গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে আরব জাতি নিজেদের প্রতি ও নিজেদের সক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস ফিরে পেতে পারে। আরব ঐক্য তখন শুধু স্লোগান নয়, বাস্তব কাজের প্রতিফলন হয়ে উঠবে।

স্বপ্নের শুরু হয় কাজ দিয়ে

প্রশ্নটা এখন আর শুধু ধারণাগত নয়—এটি একটি বাস্তব আহ্বান। কী হতো যদি আরব বিশ্ব সিরিয়ার জন্য এমন একটি ‘মার্শাল পরিকল্পনা’ গ্রহণ করত? ইতিহাস বলে, কেবল কথা দিয়ে দেশ গড়ে না; গড়ে দৃঢ় সংকল্প ও কাজের মধ্য দিয়ে। সিরিয়া আজ কাজ চায়, আর হয়তো—শুধু হয়তো—এটাই হতে পারে এক নতুন মধ্যপ্রাচ্য গঠনের শুরু।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা