গাজার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী আল-মামদানি (আহলি) হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রটি। রবিবার ভোররাতে চালানো এ হামলায় হাসপাতালের সার্জারি বিভাগ এবং মেডিকেল অক্সিজেন প্ল্যান্ট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী, চিকিৎসক ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের তীব্রতায় হাসপাতালের বড় একটি অংশ ধসে পড়ে। ঘটনাস্থলে তখন রোগী, আহত ব্যক্তি ও নিরাপদ আশ্রয় খোঁজা বাস্তুচ্যুত মানুষ অবস্থান করছিলেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামলার কথা স্বীকার করেছে। তারা দাবি করেছে, ওই হাসপাতালে হামাসের একটি কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছিল। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানান, গোয়েন্দা সংস্থা শাবাকের সহযোগিতায় চালানো এই হামলায় নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে এবং পুরো অভিযান আকাশপথে নজরদারির মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে।
তবে স্থানীয় সূত্রগুলো জানাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। আল-মামদানি হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তারা জানান, শুধু সার্জারি বিভাগ নয়, হাসপাতালের আরও কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা বলেন, হামলার সময় হাসপাতালের ভেতরে থাকা অনেক রোগী ও আহত ব্যক্তিকে রাস্তায় নামিয়ে আনতে বাধ্য হন তারা।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বরশ বলেন, ‘বর্তমান অবস্থা একেবারে বিপর্যয়কর, সেটা ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়। আহত, রোগী, এমনকি চিকিৎসকরাও এখন রাস্তায় অবস্থান করছেন। একের পর এক বোমা হামলা চলছে।’
তিনি আরও জানান, ‘একজন আহত শিশুকে হাসপাতালে স্থানান্তরের সময় অতিরিক্ত যন্ত্রণায় তার মৃত্যু হয়েছে।’
গাজার অন্যতম প্রাচীন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত আল-মামদানি হাসপাতাল, যা দীর্ঘদিন ধরে গাজা শহর ও উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের সার্জিক্যাল সেবা দিয়ে আসছে।
এই হামলা এমন সময় ঘটল, যখন লাগাতার ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম ও জ্বালানির সংকটে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। সরকারি তথ্যমতে, চলমান যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অঞ্চলটির ৩৪টি হাসপাতাল ইতিমধ্যে কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ৯৩৩ জন শহিদ এবং এক লাখ ১৬ হাজার ৪৫ জন আহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
সূত্র: আল আরাবিয়া
