এক সময় আফগানিস্তানের পথ ধরে চলত বিশাল বিশাল বাণিজ্য কাফেলা। পূর্ব ও মধ্য এশিয়া থেকে ইউরোপের দরজা পর্যন্ত বিস্তৃত এই রুট ছিল নানা সভ্যতার মিলনস্থল। সময়ের পরিক্রমায় সেই ঐতিহাসিক পথ হয়তো হারিয়ে গেছে, কিন্তু নতুন এক অধ্যায় রচিত হচ্ছে—এবার উজবেকিস্তান ও আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে।
সম্প্রতি আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক বিষয়ক উপ-প্রধানমন্ত্রী মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার উজবেকিস্তান সফর করেছেন, যেখানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুন এই উদ্যোগ যেন পুরোনো সেই বাণিজ্য কাফেলারই আধুনিক রূপ!
এই সফরে উজবেকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জামশিদ খোচায়েভ আফগানিস্তানের সঙ্গে একটি যৌথ বাণিজ্য অঞ্চল গঠনের প্রস্তাব দেন। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য নতুন মাত্রা পাবে।
এখানে গড়ে তোলা হবে—
- পাইন বাদাম ও তুলা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা
- প্যাকেজিং ও লজিস্টিক সেবা কেন্দ্র
- খাদ্য উৎপাদন কারখানা
আফগানিস্তানের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে পাইন বাদামের ব্যাপক উৎপাদন হয়, কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়াকরণ সুবিধা না থাকায় দেশটি এর পূর্ণ সুবিধা নিতে পারছে না। অন্যদিকে, উজবেকিস্তানের অত্যাধুনিক প্যাকেজিং ও লজিস্টিক অবকাঠামো রয়েছে। ফলে, এই যৌথ উদ্যোগ উভয় দেশের জন্য লাভজনক হতে পারে।
আফগানিস্তান শুধু বাণিজ্যের পথ নয়, প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। উজবেকিস্তান আফগানিস্তানের তোতি ময়দান এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ দ্রুত শুরু করার পরিকল্পনা করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রকল্প সফল হলে আফগানিস্তানের জ্বালানি খাতে বিপ্লব ঘটতে পারে, যা দেশের শক্তি নির্ভরতা কমিয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনবে।
এছাড়া, উজবেক বিনিয়োগকারীরা আফগানিস্তানের সামাঙ্গন প্রদেশে একটি সিমেন্ট কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করছেন। আফগানিস্তানের নির্মাণ খাতের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেশটির বেশিরভাগ সিমেন্ট এখনো আমদানি করা হয়। নতুন এই প্রকল্প দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করবে।
এই সফরের মাধ্যমে আফগানিস্তান উজবেকিস্তানের বিনিয়োগকারীদের দেশটিতে আরও বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। মোল্লা বারাদার জানিয়েছেন, আফগানিস্তান এখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং উজবেকিস্তানের মতো বন্ধুসুলভ দেশগুলোর সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।
যদি এই যৌথ উদ্যোগ সফল হয়, তবে আফগানিস্তানের অর্থনীতি নতুন গতি পাবে, বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে, এবং সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নত হবে। এটি শুধু দুটি দেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব নয়—এটি একটি নতুন ভবিষ্যতের সূচনা, যেখানে ঐতিহাসিক বাণিজ্য কাফেলার পথ ধরে সমৃদ্ধির এক নতুন যুগের দ্বার উন্মোচিত হবে।
সূত্র : এইচ রেডিও