মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

বিপন্ন ২০২৪ এবং ভারতের ধারাবাহিক মুসলিমবিদ্বেষ

বিপন্ন ২০২৪ এবং ভারতের ধারাবাহিক মুসলিমবিদ্বেষ
বিপন্ন ২০২৪ এবং ভারতের ধারাবাহিক মুসলিমবিদ্বেষ। ছবি : মধ্যপ্রাচ্য

২০২৪ সাল ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য এক অনিশ্চিত এবং ভীতিকর অধ্যায় হিসেবে উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে। লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবং এর পরবর্তী সময়ে দেশজুড়ে ধর্মীয় ও জাতিগত সহিংসতা যেন এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। মুসলিম, খ্রিস্টান এবং দলিতদের ওপর সহিংসতা শুধু তাদের অস্তিত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেনি, বরং মানবতার মৌলিক ভিত্তিকেই নড়বড়ে করে দিয়েছে।

নির্বাচনের পর মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশনের প্রতিবেদন বলছে, মাত্র তিন মাসে মুসলিমদের বিরুদ্ধে অন্তত ২৮টি সহিংস হামলার ঘটনা ঘটেছে। দেশটির শীর্ষ নেতৃত্বের ঘৃণামূলক বক্তব্য এই সহিংসতাকে যেন আরো উসকে দিয়েছে। এমনকি মুসলিমদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে উল্লেখ করে তাদের নাগরিক অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াসও দেখা গেছে।

খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অবস্থাও ছিল শঙ্কার মধ্যে। ১৬১টি সহিংস হামলার ঘটনা তাদের ওপর চরম নির্যাতনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ছত্তিশগড় রাজ্যে প্রার্থনালয়ে হামলা, চার্চ ভাঙচুর এবং ধর্মান্তরের মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাদের হয়রানি করা হয়েছে। এসব ঘটনা তাদের শান্তিপূর্ণ উপাসনার অধিকার হরণ করেছে।

এ সময় দলিত সম্প্রদায়ও ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়। শারীরিক নিপীড়ন থেকে শুরু করে যৌন সহিংসতা এবং শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যের মুখোমুখি হয়েছে তারা। 

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) বাস্তবায়ন, অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধন এবং মসজিদ জরিপের অনুমতির মতো সিদ্ধান্তগুলো দেশের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা চরমে নিয়ে গেছে। 

সিয়াসাত ডটকমের বার্ষিক প্রতিবেদনে ২০২৪ সালে ভারতে মুসলিম, দলিত ও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। এসব ঘটনা ভারতের ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মধ্যেই ঘটেছে এবং ঘটতে থাকছে

এক নজরে ২০২৪ সালে সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হলো। ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছে মধ্যপ্রাচ্য টিম। 

জানুয়ারি মাস

৭ জানুয়ারি: উত্তরপ্রদেশের শামলি জেলায় ২৫০ বছরের পুরোনো একটি মসজিদের সামনে আজান দেওয়ায় এক তরুণ মুসলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওমর কুরেশি নামের ওই মুসলিম যুবক জালালাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তার আহাতা গউসগড় গ্রামের মসজিদের সামনে আজান দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরই পেক্ষিতে তাকে ‘শত্রুতা উসকে দেওয়ার’ অভিযোগে ভারতীয় পুলিশ অন্যায়ভাবে আটক করে।

৯ জানুয়ারি: কর্ণাটকের মুদিগেরে বাসস্ট্যান্ডের কাছে মোহাম্মদ মুনাজ (১৮) ও সামির (১৯) নামের দুই মুসলিম কিশোরকে উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদীরা আক্রমণ করে। সামির একটি দোকানে ফোন ঠিক করতে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সামির ও তার সাথে মোহাম্মাদ মুনাজ ফোন নিতে দোকানে গেলে কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা তাদের ওপর হামলা চালায়।

১৪ জানুয়ারি: গুজরাটের বানাসকাঁঠা জেলায় একটি ব্যস্ত সড়কের পাশে নামাজ পড়ার অভিযোগে বাচাল খান (৩৭) নামের এক মুসলিম ট্রাকচালককে আক্রমণ করা হয়।

১৭ জানুয়ারি: গুজরাটের আহমেদাবাদে একজন মুসলিম অটোচালককে আক্রমণ করা হয়। এক হিন্দু যাত্রী অটো থেকে তামাক চিবিয়ে বাইরে থুথু ফেললে তা দুর্ঘটনাক্রমে পাশের এক ব্যক্তির গায়ে পড়ে। এ ঘটনায় উত্তেজিত হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী অটোচালক শেখকে মারধর করে। যাত্রী ভুল স্বীকারও তাদের মারধর থামাতে পারেনি।

২১ জানুয়ারি: মহারাষ্ট্রের মিরা রোডে—যা মূলত মুসলিমঅধ্যুষিত এলাকা—রাম মন্দির উৎসর্গ অনুষ্ঠানের আগে আয়োজিত একটি র‍্যালি নিয়ে হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষ হয়। আতশবাজি ব্যবহারে আপত্তি জানানোকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত। এতে যানবাহন ভাঙচুর এবং র‍্যালিতে অংশ নেওয়াদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১৩ জন মুসলিমকে গ্রেপ্তার এবং চারজন কিশোরকে আটক করা হয়েছে।

২২ জানুয়ারি: তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার নারকেটপল্লী গ্রামে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), বজরং দল, আরএসএস এবং বিজেপির মতো ডানপন্থী সংগঠনের ২০০-২৫০ জন সদস্য মসজিদের পাশের ২,৮৪০ বর্গগজের একটি জমিতে জড়ো হয়। জমিটি ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে নিবন্ধিত। অভিযোগ ওঠে, সেখানে তারা হানুমান মন্দির নির্মাণের চেষ্টা এবং পূজা-অর্চনা চালায়। 

২৩ জানুয়ারি: মহারাষ্ট্রের মিরা রোডের মুসলিম অধ্যুষিত নয়ানগরে বুলডোজার অভিযান চালানো হয়। হিন্দুত্ববাদীদের উদযাপন ও মুসলিমদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর এই অভিযান শুরু হয়। অভিযানে অন্তত ১৫টি মুসলিম স্থাপনা ‘অবৈধ স্থাপনা’ নামে ভেঙে ফেলা হয়। মিরা ভায়ান্দর মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চলবে।’

তেলেঙ্গানার সাঙ্গারেড্ডি জেলায় দৌলতাবাদ এলাকায় হিন্দুত্ববাদী একটি দল এক মুসলিম দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই দিনে কোসগি জামে মসজিদ এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। রাম মন্দির উদ্বোধন উদযাপনের সময় একটি হিন্দুত্ববাদী দল মসজিদের কাছে উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে নাচ-গান করে।

২৫ জানুয়ারি: কেরালায় বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রতিবাদ করায় এক মুসলিম অধিকারকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৬২ বছর বয়সী মোহাম্মদ সেলিম, যিনি ওটায়াল সেলিম নামে পরিচিত, রাম মন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারের সময় বাবরি মসজিদের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ করেন। তিনি ফেসবুকে লাইভ স্ট্রিম করেন, যা কয়েকশত লাইক এবং চার হাজারের বেশি ভিউ পায়।

২৬ জানুয়ারি: বিহারের দরভাঙা জেলার খিরমা গ্রামে রাম মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে একটি হিন্দু মিছিল থেকে মুসলিম কবরস্থানে আতশবাজি নিক্ষেপের অভিযোগ ওঠে। এতে কবরস্থানে আগুন ধরে যায় এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়।

মুজাফফরনগরের খাতাউলি এলাকায় এক মুসলিম তরুণ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। ২৬ বছর বয়সী মতিন—যিনি বিলাল বা বিল্লা নামেও পরিচিত—সেদিন বাজারে শাকসবজি কিনতে বের হয়েছিলেন। বিকেল ৩টার দিকে তিনি পরিবারের এক সদস্যকে ফোন করে জানান, তাকে পুলিশ গুলি করেছে এবং তিনি মিরাটের একটি হাসপাতালে আছেন। হাসপাতালে পৌঁছার পর পরিবারকে দেখতে দেওয়া হয়নি। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা তার মৃত্যুর খবর পান।

২৭ জানুয়ারি: তেলেঙ্গানার সাঙ্গারেড্ডি জেলায় এক ১৯ বছর বয়সী মুসলিম কিশোরকে হিন্দুত্ববাদী সমর্থকরা নগ্ন করে রাস্তায় ঘোরায়। তার বিরুদ্ধে গেরুয়া পতাকার অসম্মান করার অভিযোগ আনা হয়। পরে পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়।

মহারাষ্ট্রের মিরা রোডে ২২ বছর বয়সী কমার্স শিক্ষার্থী মোহাম্মদ তারিক চৌধুরী হিন্দুত্ববাদীদের হাতে আক্রান্ত হন। তারিক তার বাবার রশিদ টেম্পো সার্ভিসের গাড়ি নিয়ে পণ্য পরিবহন করছিলেন। শান্তিনগর এলাকায় একটি হিন্দুত্ববাদী দল গাড়ি থামিয়ে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নির্মমভাবে মারধর করে। 

ফেব্রুয়ারি মাস 

১ ফেব্রুয়ারি: মহারাষ্ট্রের কোলহাপুরে মুসলিমদের একটি মাদরাসা ভেঙে দেয় পৌর করপোরেশনের উচ্ছেদ দল। এ ঘটনায় মুসলিমরা প্রতিবাদ জানিয়ে স্লোগান তোলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে। উচ্ছেদ কার্যক্রমটি এমন সময়ে সম্পন্ন হয়, যখন পরদিন আদালতে মুসলমানদের পক্ষে দাখিল করা আপিলের শুনানি হওয়ার কথা ছিল।

৪ ফেব্রুয়ারি: উত্তরপ্রদেশের গোঁডা জেলায় ধর্মীয় বই বিক্রির অভিযোগে ইরশাদ ওরফে শেরু নামের এক বই বিক্রেতাকে এন্টি টেররিস্ট স্কোয়াড (এটিএস) আটক করে বলে অভিযোগ ওঠে। তবে এটিএস এবং স্থানীয় পুলিশ এ ঘটনার কথা অস্বীকার করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সাদা পোশাকে থাকা ৪-৫ জন ব্যক্তি শেরুকে নিয়ে যান।

৯ ফেব্রুয়ারি: উত্তরাখণ্ডের হালদওয়ানির বানভুলপুরায় মাদরাসা ও মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হন। মুখ্যমন্ত্রী পুশ্কর সিং ধামির নির্দেশে পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনায় এই প্রাণহানি ঘটে।

একই দিনে, জমি বিরোধ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে তিন মুসলিম যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। বারনাওয়ার আবরার, আসিফ ও সাকিব নামের ওই তিনজনের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও শত্রুতা ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়।

৯ ফেব্রুয়ারি: কর্ণাটকের চিকমাগালুরু জেলায় ‘লাভ জিহাদ’-এর অভিযোগে এক মুসলিম যুবককে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) কর্মীরা মারধর করে। অভিযোগ ছিল, তিনি এক হিন্দু মেয়েকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন।

১১ ফেব্রুয়ারি: আসামের গোলাপাড়া জেলার পাঞ্চরতনা গ্রামে বন বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানের শিকার হয়ে বয়াত আলী নামের এক মুসলিম ব্যক্তি হাইপোথার্মিয়ায় মারা যান। পরিবার তার মৃত্যুকে ‘রাষ্ট্র-সমর্থিত হত্যা’ বলে অভিহিত করেছে।

১২ ফেব্রুয়ারি: হালদওয়ানিতে মসজিদ ও মাদরাসা ভাঙার দু’দিন পর মুসলিমদের বাড়িতে পুলিশি অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বাড়ি ভাঙচুর, পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অভিযোগ ওঠে।

১৩ ফেব্রুয়ারি: মুম্বাইয়ের পনভেল এলাকায় এক মুসলিম পরিবারকে ‘জয় শ্রী রাম’ বলতে বাধ্য করা হয় এবং তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পরিবারের একজন সদস্যকে মারধর করা হচ্ছে, আর তার স্ত্রী ও মেয়ে সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে।

১৩ ফেব্রুয়ারি: হালাল সনদ জালিয়াতির অভিযোগে হালাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার (এইচসিআই) চার কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে উত্তরপ্রদেশের বিশেষ টাস্ক ফোর্স।

১৪ ফেব্রুয়ারি: ভালোবাসা দিবসে ইন্দোরে এক হিন্দু মেয়েকে প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে বজরং দলের কর্মীরা এক মুসলিম যুবককে মারধর করে।

২১ ফেব্রুয়ারি: রাজস্থানের আলওয়ার জেলার কিশনগড় বস এলাকায় গরু জবাইয়ের মিথ্যা  অভিযোগে মুসলিম সম্প্রদায়ের ১২টি বাড়ি ভেঙে দেয় প্রশাসন। অভিযোগ ওঠে, এই বাড়িগুলো গরু জবাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল।

মার্চ মাস  

১৩ মার্চ: মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি শম্ভাজি নগরে একটি মন্দিরের লাউডস্পিকারের শব্দ নিয়ে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনার জেরে রাজ্য পরিবহন বিভাগের একটি বাসে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

১৩ মার্চ: মহারাষ্ট্রের আকোলায় ১৫ বছর বয়সী মুসলিম ছাত্র আলতামাশ আত্মহত্যা করে। পরিবারের অভিযোগ, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও কয়েকজন শিক্ষক তাকে নিয়মিত মারধর করতেন এবং তার ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে মানসিকভাবে হয়রানি করতেন।

১৬ মার্চ: গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে তারাবির নামাজ পড়ার সময় হিন্দুত্ববাদী একটি দলের হামলায় বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পাঁচজন মুসলিম শিক্ষার্থী আহত হন। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

১৯ মার্চ: রাজস্থানের চিতোরগড় জেলার পাহুনা গ্রামে একটি ধর্মীয় শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শোভাযাত্রার উচ্চ শব্দে আপত্তি জানালে মুসলিম বাসিন্দাদের সঙ্গে হিন্দুদের উত্তেজনা তৈরি হয় এবং পরবর্তীতে উভয় পক্ষের মধ্যে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

২৪ মার্চ: মহারাষ্ট্রের বিড জেলার মাজালগাঁওয়ে হোলি উৎসবের সময় একটি মসজিদের পেছনের দেয়ালে পানির পিস্তল ও রঙ ব্যবহার করে ‘রাম’ শব্দটি লেখা হয়।

২৫ মার্চ: মহারাষ্ট্রের এক মুসলিম অটোরিকশা চালক খান মোহাম্মদ কাদির অভিযোগ করেন হোলি উদযাপনকারী একটি দল তাকে জোরপূর্বক রোজা ভাঙতে বাধ্য করে এবং তার অটোর সামনের কাচ ভেঙে দেয়।

২৬ মার্চ: উত্তরপ্রদেশের বিজনোর জেলায় হোলি খেলার সময় একটি মুসলিম পরিবারকে হয়রানি করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাটি ব্যাপক নিন্দার মুখে পড়ে। শেষ পর্যন্ত হামলাকারীরা পরিবারটিকে ছেড়ে দেয় এবং ‘হর হর মহাদেব’ ও ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দেয়।

২৮ মার্চ: মহারাষ্ট্রের জলগাঁও জেলায় শিব জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রা চলাকালে একটি মসজিদের সামনে উচ্চ শব্দে ডিজে বাজানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাধে। মুসলিম বাসিন্দারা আপত্তি জানালে হিন্দুদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছয়জন আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করে। তবে মুসলিম বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকজন ব্যক্তি নির্দোষ এবং তারা কেবল নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলেন।

এপ্রিল মাস 

১৫ এপ্রিল: উত্তরপ্রদেশে এক মুসলিম ব্যক্তির বিরুদ্ধে হিন্দু নারীকে অপহরণের মিথ্যা অভিযোগ ওঠে। এর জেরে ডানপন্থী একটি দল তার পরিবারের দুটি ঘর পুড়িয়ে দেয়। তবে ওই নারী এক ভিডিও বার্তায় জানান, তিনি স্বেচ্ছায় ওই ব্যক্তির সঙ্গে গিয়েছিলেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ধর্ম জাগরণ সমন্বয় সংঘের আট সদস্যকে আটক করে। এ ঘটনায় পুলিশের অবহেলার জন্য এক ইনচার্জকে বরখাস্ত করা হয় এবং স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (এসএইচও) বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।

১৬ এপ্রিল: রাজস্থানের এক নির্বাচনী সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেন। তিনি ‘এক হন তো সুরক্ষিত হন’ এবং ‘ঘুসপেঠিয়ে’ (অনুপ্রবেশকারী) শব্দ ব্যবহার করে মুসলমানদের ইঙ্গিত করেন। তার এই বক্তব্য বিভিন্ন মহলে সমালোচিত হয়।

১৭ এপ্রিল: রাম নবমীর এক মিছিলে বিজেপি বিধায়ক টি রাজা সিং মুসলিম সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে প্রশ্ন তোলেন, ‘মুসলমানরা কি কোনো কাজ করে, নাকি শুধু ‘জিহাদ’ নিয়ে ব্যস্ত থাকে?’ তার এই বক্তব্যে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

১৮ এপ্রিল: হায়দরাবাদে বিজেপির লোকসভা প্রার্থী মাধবী লতার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি রাম নবমীর মিছিলে একটি জিপে দাঁড়িয়ে তীর ছোঁড়ার ভঙ্গি করছেন। অভিযোগ ওঠে, তিনি সিদ্দাম্বার বাজার মসজিদকে টার্গেট করে এই কাজ করেছেন। এতে নেটিজেনদের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

২৩ এপ্রিল: উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ অভিযোগ করেন, কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে শরিয়া আইন বাস্তবায়নের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, ‘প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং একবার বলেছিলেন, মুসলমানদের দেশের সম্পদের ওপর প্রথম অধিকার রয়েছে। তাহলে দলিত, পিছিয়ে পড়া শ্রেণি ও কৃষকদের অধিকার কোথায়?’ তার এই বক্তব্যকে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের চেষ্টা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

২৫ এপ্রিল: তেলেঙ্গানার এক নির্বাচনী সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ক্ষমতায় এলে রাজ্যে মুসলমানদের জন্য ৪ শতাংশ চাকরির সংরক্ষণ বাতিল করবে বিজেপি। তিনি জানান, এই সংরক্ষণ তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির (এসসি, এসটি, ওবিসি) জন্য পুনর্বণ্টন করা হবে।

এদিন আরেক বক্তব্যে যোগী আদিত্যনাথ অভিযোগ করেন, কর্ণাটকে ওবিসি কোটায় মুসলমানদের চাকরি দেওয়ার মাধ্যমে কংগ্রেস দেশকে ‘ইসলামিকরণ ও বিভাজনের’ দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

২৬ এপ্রিল: অমিত শাহ বলেন, কংগ্রেস সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা আইন করার প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘দেশ কি শরিয়া আইন অনুযায়ী চলবে?’

২৭ এপ্রিল: গুজরাটের বানাসকাঁঠায় এক নির্বাচনী সভায় বিজেপি রাজ্য সভাপতি সি আর পাটিল মুসলিমদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে মন্তব্য করেন। তার এই বক্তব্যও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

মে মাস 

২ মে: গুজরাটের সায়াজিগঞ্জ এলাকায় ফুটপাতে দোকান চালানো এক মুসলিম ব্যবসায়ীকে মারধর ও পুলিশের ভ্যানে টেনে নেওয়ার অভিযোগে দুই পুলিশ সদস্য ও তাদের ড্রাইভারের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

৫ মে: কর্ণাটকের বিজয়াপুরা জেলার বাবালেশ্বর তালুকে এক মুসলিম গরু ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে প্রহারের অভিযোগ ওঠে। হামলাকারীরা বজরং দল নামে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সাথে যুক্ত বলে জানা যায়।

৭ মে: মুম্বাইয়ের বিদ্যাবিহারের সোমাইয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাক্টিভিটির জন্য পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। তিনি গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা নিয়ে পোস্ট করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠে।

৯ মে: আহমেদাবাদের উপকণ্ঠে অবস্থিত ৬০০ বছরের পুরোনো ইমাম শাহ বাবার দরগায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একদল দুষ্কৃতকারী দরগার কবর ভেঙে সেখানে মূর্তি স্থাপন করে।

১২ মে: উত্তরপ্রদেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের এক জনসভায় ভুল করে মুসলিম ভেবে এক সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগ ওঠে।

১৬ মে: হিন্দু রাষ্ট্র সেনার (এইচআরএস) সভাপতি ধনঞ্জয় দেশাই মুসলিম ও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করেন। তিনি এ সম্প্রদায়গুলোকে ‘ভারতের জন্য বোঝা’ এবং ‘রোগ’ বলে উল্লেখ করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার আহ্বান জানান।

জুন মাস 

২ জুন: কর্ণাটকের ফ্রেজার টাউনে ফিলিস্তিনের পক্ষে আয়োজিত একটি বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এসময় ১৫ জন কর্মীকে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আটক করে রাখা হয়।

৩ জুন: উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে এক মুসলিম যুবককে হিন্দু তরুণীর সঙ্গে কথা বলার অভিযোগে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর সদস্যরা তাকে নগ্ন করে পেটায়।

৬ জুন: ছত্তিশগড়ের রায়পুরে গরুর গেশত বহনের অভিযোগে তিন মুসলিম যুবককে হামলা করা হয়। এদের মধ্যে দুইজন ঘটনাস্থলেই মারা যান, আর তৃতীয় ব্যক্তি সাদ্দাম কুরেশি ৭ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

৯ জুন: উত্তরপ্রদেশের সোনপুর গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ৭০ বছর বয়সী মাদরাসা পরিচালক মাওলানা মোহাম্মদ ফারুককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

১২ জুন: মুরাদাবাদের কাছে এক গ্রামে মসজিদের ইমামকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

১৩ জুন: দেরাদুনে বজরং দলের সদস্যরা এক মুসলিম যুবককে হিন্দু নারীর সঙ্গে দেখার অভিযোগে মারধর করে।

১৫ জুন:

• হরিয়ানার মেওয়াটে গোরক্ষকরা গরু জবাই ও মাংস বিক্রির অভিযোগে দুই মুসলিমকে মারধর করে।

• মহারাষ্ট্রের মীরা রোডে ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে কোরবানির জন্য পশু কেনায় মুসলিম পরিবারের ওপর বজরং দলের সদস্যরা হামলা চালায়।

• তেলেঙ্গানার মেদক জেলায় একটি মাদরাসায় ডানপন্থী গোষ্ঠীর হামলায় অনেকেই আহত হন।

১৬ জুন:

• মধ্যপ্রদেশের মন্ডলায় গরু মাংস সংক্রান্ত অভিযোগে মুসলিমদের ১১টি বাড়ি ভেঙে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।

• ওডিশার খুরধায় এক মুসলিম পরিবারের বাড়ি থেকে গোরক্ষকরা মাংস এবং ফ্রিজ নিয়ে যায়।

• হিমাচল প্রদেশের নাহানে এক মুসলিম ব্যবসায়ীর দোকানে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়।

১৭ জুন:

• উত্তরপ্রদেশে গোরক্ষকরা মুসলিম যাত্রীদের গরু মাংস বহনের সন্দেহে অটো রিকশাগুলোতে তল্লাশি চালায় এবং চারটি রিকশা পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

• মহারাষ্ট্রে গরু পরিবহনের অভিযোগে দুই ট্রাক চালককে হয়রানি করা হয়।

• এক মুসলিম যুবককে মন্দিরের কাছে মাংস ফেলার অভিযোগে মারধর করা হয়।

১৮ জুন:

• হরিয়ানায় এক মুসলিম মাংস বিক্রেতা এবং তার দোকানে থাকা দুই হিন্দু ক্রেতার ওপর গোরক্ষকরা হামলা চালায়।

• আলিগড়ে এক মুসলিম যুবককে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

১৯ জুন:

• উত্তরপ্রদেশে এক রিকশাচালককে গরু গোশত  বহনের সন্দেহে মারধর করা হয়।

• হিমাচল প্রদেশের নাহানে মুসলিম দোকানে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

২২ জুন: গুজরাটের আনন্দ জেলায় ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালে ১৫-২০ জনের একটি দল এক মুসলিম যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে।

২৪ জুন: উত্তরপ্রদেশের কুশীনগরে ঈদ-উল-আজহার পড়ার অভিযোগে ১১ জন মুসলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিনে ৮,০০০ বাঙালি মুসলিম বংশোদ্ভূত মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়, যাদের বসবাস ছিল চার দশকের বেশি সময় ধরে।

২৮ জুন: গুজরাটের ভরুচে কোরবানির বিধান নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে দুই মুসলিম আলেমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

৩০ জুন:

• ঝাড়খণ্ডের কোডারমায় এক মুসলিম ইমামকে নারীর ওপর মিথ্যা হামলার অভিযোগে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়।

• রাজস্থানের চুরু জেলায় গরুর গোশত পরিবহনের সন্দেহে দুই হিন্দু ব্যক্তিকে গোরক্ষকরা মারধর করে। পরে দেখা যায়, তাদের গাড়িতে লেবু ছিল।

জুলাই মাস 

১ জুলাই: গুজরাটে এক মুসলিম ব্যক্তিকে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের হাত থেকে বাচাতে গিয়ে আরেক মুসলিম যুবক নিহত হন।

২ জুলাই: ঝাড়খণ্ডে মাওলানা আকবর হোসেন নামে একজন ইমাম নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে হামলার শিকার হন। পরে হাসপাতালে তিনি মারা যান।

৩ জুলাই: উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে দুই মুসলিম ভাই দোকানে পণ্য পরিবর্তনের অনুরোধ করায় জনতার হাতে মারধরের শিকার হন।

৪ জুলাই: কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোর যাওয়ার পথে হায়দরাবাদ থেকে যাত্রা শুরু করা এক মুসলিম ব্যক্তিকে সহযাত্রীরা ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে চুরির মিথ্যা অভিযোগে মারধর করেন।

৭ জুলাই:

• উত্তরপ্রদেশের শামলিতে সাংবাদিক জাকির আলী ত্যাগী, ওয়াসিম আলী ত্যাগীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে একজন মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যার বিষয়ে টুইট করার অভিযোগে মামলা হয়।

• আলিগড়ে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের কর্মীরা এক মুসলিম যুবককে একটি হিন্দু মেয়ের সঙ্গে কথা বলার অভিযোগে নগ্ন করে পিটিয়েছে।

১১ জুলাই: দিল্লিতে কোচিং সেন্টারের মালিক ইবরারকে ধর্মান্তরের অভিযোগ তুলে ডানপন্থী কর্মীরা মারধর করে।

১৫ জুলাই:

• বিহারের নওয়াদায় শোভাযাত্রায় ফিলিস্তিনি পতাকা ওড়ানোর অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

• মহারাষ্ট্রের কোলাপুরের গজাপুর গ্রামে হিন্দুত্ববাদী জনতা একটি মসজিদে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।

১৭ জুলাই:

• উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরে দোকান ও রেস্তোরাঁ মালিকদের ধর্মীয় পরিচয় উল্লেখ করে নাম টাঙানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

• মহররম শোভাযাত্রায় ফিলিস্তিনি পতাকা ওড়ানোর অভিযোগে চার মুসলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

১৮ জুলাই:

• মুজাফফরনগরে কাঁবাড়ি যাত্রার পথে খাবারের দোকানের মালিক ও কর্মচারীদের নাম প্রদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়।

• ছত্তিশগড়ের রায়পুরে তিন মুসলিম গবাদি পশু পরিবহনকারী ব্যক্তি দাঙ্গার ভয়ে ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা যান। তাদের মৃত্যুতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।

২২ জুলাই:

• উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে হিন্দুত্ববাদী কর্মীরা মুসলিম ফল বিক্রেতাদের দোকানে হামলা চালায়।

• একই দিনে, পুলিশ চার মুসলিম কর্মীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে।

২৬ জুলাই: মুজাফফরনগরে কাঁবাড়ি যাত্রায় মুসলিম চালকের গাড়ি ‘কাঁবাড়’-এর সঙ্গে ধাক্কার অভিযোগ তুলে গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং চালককে মারধর করা হয়।

৩০ জুলাই: ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে এক মুসলিম ব্যক্তিকে মারধর করা হয়। তাকে জোর করে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিতে বাধ্য করা হয়।

আগস্ট মাস 

৪ আগস্ট: মহারাষ্ট্রের থানে জেলার ভিত্তলওয়াড়ি এলাকায় জোরপূর্বক ধর্মান্তরের অভিযোগে এক তরুণীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

১০ আগস্ট: ওডিশার সাম্বলপুরে নির্মাণাধীন এক স্থাপনা থেকে ৩৪ জন শ্রমিককে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ সন্দেহে বিজেপির যুব সংগঠন পুলিশের কাছে তুলে দেয়। তবে তদন্তে প্রমাণিত হয়, তারা পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দা। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

১১ আগস্ট: উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে বস্তির বাসিন্দাদের ওপর হামলা চালায় হিন্দু রক্ষা দল নামের একটি সংগঠন। তাদের ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ বলে আখ্যা দিয়ে লাঠি দিয়ে মারধর ও তাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

১৬ আগস্ট: ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরে এক মুসলিম যুবক ও তার বন্ধুরা চা খেতে গেলে হিন্দুত্ববাদী জনতার হাতে হামলার শিকার হন। তাদের নাম জিজ্ঞেস করার পর মুসলিম পরিচয় জানতেই লাঠি দিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

১৭ আগস্ট:

• মহারাষ্ট্রের নাসিক, ছত্রপতি সাম্ভাজিনগর, জলগাঁও এবং আহমেদনগরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেখা দেয়। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতার প্রতিবাদে সাকা হিন্দু সমাজের ডাকা বন্ধ কর্মসূচির সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। নাসিকে সংঘর্ষের সময় পাথর ছোড়াছুড়ির ঘটনায় ছয়জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন।

• বিহারের সামস্তিপুরে গরু পাচারের সন্দেহে এক বৃদ্ধ মুসলিম ব্যক্তিকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি প্রাণভিক্ষা চাইছেন, কিন্তু জনতা তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

১৮ আগস্ট: রাজস্থানের উদয়পুরে এক ১৫ বছর বয়সী মুসলিম কিশোরের ভাড়া করা বাড়ি ভেঙে দেয় স্থানীয় পৌর কর্পোরেশন। অভিযোগ, ওই কিশোর তার হিন্দু সহপাঠীকে ছুরিকাঘাত করেছে। কর্পোরেশনের দাবি, বাড়িটি বন বিভাগের জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত।

১৯ আগস্ট: আসামের কাছাড় জেলায় এক মুসলিম ছাত্রকে তার হিন্দু সহপাঠীর সঙ্গে কথা বলার অভিযোগে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত একদল লোক মারধর করে। পরে ওই ছাত্রকে ‘লাভ জিহাদ’-এর অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

আগস্ট ২১: উত্তর প্রদেশের বেরেলি জেলার পাঞ্জাব পুরা এলাকার ভাকিলো ওয়ালি গলিতে একটি মুসলিম পরিবারের বাড়ি কেনা নিয়ে প্রতিবাদ করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা। প্রতিবাদকারীরা দাবি করেন, মুসলিম পরিবারটি এই এলাকায় থাকতে পারবে না এবং তাদের বাড়ির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে হবে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে, ওই পরিবারটি বাধ্য হয়ে বাড়িটি বিক্রি করে দেয়।

আগস্ট ২২: গাজিয়াবাদের ক্রসিং রিপাবলিক এলাকায় গরুর মাংস পরিবহনের অভিযোগে দুই মুসলিম যুবক আশরাফ ও আমিরকে একটি হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী মারধর করে। জানা গেছে, তাদের গাড়ি দুর্ঘটনায় উল্টে গেলে মাংস রাস্তায় পড়ে যায়। এরপর স্থানীয়রা তাদের আক্রমণ করে।

আগস্ট ২৪: মোহাম্মদ আসলাম নামে এক জোমাটো ডেলিভারি কর্মীকে চার হিন্দু অপমান ও নির্যাতন করে তাকে গালিগালাজ করে, পরবর্তীতে তার শরীরে মদ ঢেলে দেওয়া হয় এবং প্রায় এক ঘণ্টা আটক করে রাখা হয়। জানা গেছে, আসলাম ব্যস্ততার কারণে গ্রাহককে গৌ নামক জায়গা থেকে খাবার সংগ্রহ করতে বলেছিলেন, যা নিয়ে বাকবিতণ্ডার সূত্রপাত হয়।

আগস্ট ২৭: তেলেঙ্গানার চানক্য হাই স্কুলে নামাজ পড়ার সময় কয়েকজন মুসলিম ছাত্রীকে হুমকি ও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মজলিস বাঁচাও তেহরিকের (এমবিটি) মুখপাত্র আমজেদ উল্লাহ খান জানান, বজরং দলের সদস্যরা স্কুলে ঢুকে এই ঘটনা ঘটায়। স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ।

আগস্ট ২৮: উত্তর প্রদেশের একটি গ্রামে পুলিশের তল্লাশির সময় ৫৫ বছর বয়সী এক নারী মারা গেছেন। অভিযোগ ছিল, ওই পরিবার গরুর মাংস মজুত করেছে। মৃত নারীর মেয়ে ফারহানা জানান, পুলিশ কোনো নোটিশ ছাড়াই তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। তার মা রেজিয়া প্রতিবাদ করলে পুলিশ তাকে ধাক্কা দেয়। এরপর তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।

আগস্ট ৩১: হরিয়ানার চরখি দাদরি জেলায় ২২ বছরের সাবির মালিক নামক এক অভিবাসী শ্রমিককে গরুর মাংস খাওয়ার অভিযোগে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আগস্ট ৩১: মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলায় একটি ট্রেনে এক বৃদ্ধ মুসলিম ব্যক্তিকে মারধর করা হয়। অভিযোগ ছিল, তিনি গরুর মাংস বহন করছিলেন। ধূলে এক্সপ্রেসের ইগতপুরি এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। ভিডিওতে দেখা যায়, হামলাকারীরা তাকে হুমকি দেয় এবং বজরং দলকে ডেকে তাকে হত্যার ইঙ্গিত দেয়। এমআইএম নেতা ইমতিয়াজ জালিল এই ঘটনার ভিডিও শেয়ার করে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

সেপ্টেম্বর মাস 

সেপ্টেম্বর ২: উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার নন্দনগর শহরে ১৪ বছরের এক কিশোরীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে এক মুসলিম নাপিতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়। এই ঘটনার জেরে মুসলিম সম্প্রদায়ের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা।

সেপ্টেম্বর ৪: তেলেঙ্গানার আদিলাবাদ জেলার জৈনুর এলাকায় এক মুসলিম অটোচালকের বিরুদ্ধে এক আদিবাসী নারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ডানপন্থী সংগঠনগুলোর ডাকা বন্ধ কর্মসূচির সময় মুসলিম সম্প্রদায়ের সম্পত্তিতে হামলা চালানো হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ দুই সম্প্রদায়ের ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করে।

সেপ্টেম্বর ৫: আসামের বাকসা জেলায় দুই মুসলিম যুবককে নাম জিজ্ঞাসা করার পর গালিগালাজ ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। ভুক্তভোগীদের একজন জানান, তাকে শ্বাসরোধের চেষ্টাও করা হয়।

সেপ্টেম্বর ৫: রাজস্থানের দীগ শহরে গবাদি পশু পরিবহনের অভিযোগে চার মুসলিম ব্যক্তিকে ধাওয়া করে ডানপন্থী গোরক্ষা দলের সদস্যরা। পুলিশের সহায়তায় চালানো এই অভিযানে গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে ওই ব্যক্তিদের মারধর করা হয়। তাদের শরীরে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।

সেপ্টেম্বর ৭: মহারাষ্ট্রের বীড় জেলায় ২৮ বছর বয়সী এক মুসলিম জুতা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাজেককে গোরক্ষা দলের সদস্যরা নির্মমভাবে মারধর করে। গরু চুরির মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়।

সেপ্টেম্বর ৯: গুজরাটের কাথলাল-বালাসিনোর মহাসড়কে এক মুসলিম চালকের গাড়ির সঙ্গে এক হিন্দু মোটরসাইকেলের সংঘর্ষের জেরে উত্তেজনা ছড়ায়। হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিমদের দোকানপাট ও স্থানীয় ঈদগাহে হামলা চালায়।

সেপ্টেম্বর ১৯: মহারাষ্ট্রের ভিওয়ান্দি শহরে তিন মুসলিম যুবককে নির্মমভাবে মারধর করে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী। তাদের ‘জয় শ্রী রাম’ বলতে বাধ্য করা হয়। হামলার শিকার এক যুবক জানান, হামলাকারীরা পথ আটকে তাদের ওপর চড়াও হয়।

সেপ্টেম্বর ২৭: মহারাষ্ট্রের মালেগাঁও শহরে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী এক বৃদ্ধ মুসলিম বিক্রেতাকে শহরে প্রবেশ করে ব্যবসা করতে বাধা দেয়। ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে এই ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সেপ্টেম্বর ৩০: হিমাচল প্রদেশের নাগরোটা শহরে শিবলিঙ্গ ভাঙচুরের মিথ্যা অভিযোগে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী। তারা মুসলিমদের এলাকা ছাড়ার দাবি জানায় এবং মুসলিম মালিকানাধীন দোকানে হামলা চালায়।

সেপ্টেম্বর ৩০: পশ্চিম দিল্লির বিকাশপুরি এলাকায় সিরিয়ার এক শরণার্থী এবং তার ১১ মাসের শিশুকে অ্যাসিডে দগ্ধ করা হয়। ভুক্তভোগী রাফাত জানান, আক্রমণকারীরা একটি ক্যানিস্টার নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসে। পালানোর চেষ্টা করেও তিনি ও তার সন্তান অ্যাসিডে আক্রান্ত হন। এতে তারা মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন এবং হাসপাতালে ভর্তি হন।

অক্টোবর 

অক্টোবর ২: বিজেপি নেতা রবি নেগি মুসলিম মালিকানাধীন দোকানগুলোর প্রকৃত মালিকের নাম প্রকাশের হুমকি দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, নেগি এক মুসলিম দোকানদার আলতামাসকে প্রশ্ন করছেন কেন তার দোকানের নাম ‘তোমর’ রাখা হয়েছে। নেগি বলেন,  ‘নাম মুসলিম হলে সাইনবোর্ডে তা লিখতে হবে। যদি তা না করা হয় তাহলে দোকান বন্ধ করে সিলগালা করা হবে।’ 

অক্টোবর ৩: মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে ১৫ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হওয়া একটি গারবা অনুষ্ঠানের অনুমতি বাতিল করে স্থানীয় প্রশাসন। বজরং দলের অভিযোগের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারা দাবি করে, অনুষ্ঠানের আড়ালে ‘লাভ জিহাদ’ প্রচার হচ্ছে। অনুষ্ঠানটির আয়োজক ফিরোজ খান জানান, এর আগে কোনো সমস্যা হয়নি, তবে এবার হঠাৎ করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

অক্টোবর ৫: মহারাষ্ট্রে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের গাড়ি চাপায় নিহত হন এক মুসলিম নারী ইকরা ও তার তিন বছরের মেয়ে নাদিয়া। ঘটনার সময় ইকরার স্বামী সাদিক শেখ ও তাদের ছয় বছরের ছেলে গাড়ি থেকে লাফিয়ে প্রাণে বেঁচে যান। সাদিক অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা তাদের ধাওয়া করে এবং গালিগালাজ করে।

অক্টোবর ৫: উত্তরপ্রদেশে দাণ্ডিয়া অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার অভিযোগে ফিরোজ খান নামে এক মুসলিম ব্যক্তিকে বজরং দলের সদস্যরা মারধর করে। তাদের দাবি, তিনি ‘লাভ জিহাদ’ প্রচার করছিলেন।

অক্টোবর ৬: দাসনার পুরোহিত ইয়াতি নরসিংহানন্দের বিরুদ্ধে ইসলাম ও প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের অভিযোগে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, জম্মু ও কাশ্মীর এবং তেলেঙ্গানায় মামলা করা হয়েছে। বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন ও রাজনীতিবিদ এই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে তার গ্রেপ্তার দাবি করেছেন। আসাদউদ্দিন ওয়াইসি হায়দরাবাদ পুলিশের কাছে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন।

অক্টোবর ৮: হিন্দুপ্রধান এলাকায় ভিক্ষা করার অভিযোগে এক বৃদ্ধ মুসলিম ভিক্ষুককে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। হামলাকারীরা তাকে বলে, ‘মুসলমানদের এখানে থাকার কোনো অধিকার নেই।’ ভিডিও ফুটেজে এই ঘটনার চিত্র সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

অক্টোবর ৯: উত্তরাখণ্ডে একটি মসজিদকে অবৈধ দাবি করে রাষ্ট্রীয় সেবা সংঘঠনের সদস্যরা বিক্ষোভ করেন। তারা মসজিদটি অপসারণের দাবি জানিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেন। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মসজিদটি গত ২৫ বছর ধরে চালু রয়েছে এবং সেখানে একটি মাদরাসাও পরিচালিত হয়।

অক্টোবর ১০: তেলেঙ্গানার ভৈংসার দুই মুসলিম ব্যবসায়ী, রফি খান ও ওবায়েদ উদ্দিন, নিরমল থেকে সবজি কিনে ভৈংসায় ফেরার পথে হামলার শিকার হন। রাত ৩টার দিকে তাদের গাড়ি রামপুর গ্রামে বিকল হলে, আরএসএস কর্মী গঙ্গাধর ও ইয়েলান্নার নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি দল তাদের নাম জিজ্ঞেস করে। মুসলিম পরিচয় জানার পর তাদের বেধড়ক মারধর করা হয়।

অক্টোবর ১৩: উত্তরপ্রদেশের ডোমারিয়াগঞ্জে মহাকালী মন্দিরের সামনে সমাজবাদী পার্টির এমএলএ সৈয়দ খাতুন আয়োজিত ফল বিতরণ কর্মসূচিতে বাধা দেয় হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী। বজরং দলের অভিযোগ, এ কর্মসূচি হিন্দু ধর্মকে ‘দূষিত’ করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত।

অক্টোবর ২৪: রাজস্থানের জয়পুরে হাওয়া মহলের বিজেপি বিধায়ক বালমুকুন্দ আচার্যের নেতৃত্বে হিন্দুত্ববাদী সমর্থকরা নামাজরত মুসলিম নারীদের ওপর হামলা চালায়। পর্দা সরিয়ে তাদের মুখ দেখানোর দাবি তোলে এবং ইমাম আসাদ আলী মীরের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করে।

অক্টোবর ২৪: সেকেন্দরাবাদের একটি মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী জহিরাবাদে মুসলিম দোকান ও হোটেলে হামলা চালায়। এরপর পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

অক্টোবর ২৭: তেলেঙ্গানার আসিফাবাদ জেলায় ১৯ বছরের এক মুসলিম যুবককে গাছে বেঁধে মারধর করা হয়। অভিযোগ, তিনি ভিন্ন ধর্মের এক কিশোরীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন।

অক্টোবর ২৮: গুজরাটের আহমেদাবাদে হিন্দু সেনার নেতা বিনয় শর্মা মুসলিম ভাড়াটিয়াদের এলাকা ছাড়ার হুমকি দেন। ‘লাভ জিহাদ’-এর অভিযোগ তুলে কার্ড যাচাইয়ের দাবি তোলেন।

অক্টোবর ৩১: রাজস্থানের ঝুনঝুনু জেলায় ২২ বছরের জাহিদ নামে এক মুসলিম যুবককে অপহরণ ও নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। ২১ অক্টোবর, তাকে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। পরে তার বাবা জামিল নির্ধারিত স্থানে গিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন। জয়পুরে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নভেম্বর মাস 

১ নভেম্বর: কর্ণাটকের হাভেরি জেলায় মুসলিম নেতা মোহাম্মদ রফি এবং আরও পাঁচজনকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়।

৩ নভেম্বর: কর্ণাটকের সুলিয়া জেলায় ভিন্ন ধর্মের এক মেয়েকে বার্তা পাঠানোর অভিযোগে নিয়াজ নামের এক যুবককে মারধর করা হয়। এ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের হয়েছে।

৩ নভেম্বর: অন্ধ্রপ্রদেশের ভীমাভারাম জেলায় হিন্দুত্ববাদীরা এক মুসলিম ব্যক্তিকে মারধর করে এবং তাকে ‘জয় শ্রী রাম’ বলতে বাধ্য করে। ওই ব্যক্তিকে মিথ্যা অভিযোগে একটি মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত করার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়।

৭ নভেম্বর: উত্তরপ্রদেশের বাড়েলি জেলায় এক মুসলিম খাবার বিক্রেতাকে ধর্মীয় পরিচয় গোপন করার অভিযোগ তুলে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী হয়রানি করে।

১০ নভেম্বর: উত্তরাখণ্ডের ঋষিকেশে সাহিল নামে এক মুসলিম যুবককে হিন্দুত্ববাদীরা মারধর করে এবং রাস্তায় টেনে নিয়ে যায়। তাকে অভিযুক্ত করা হয় এক হিন্দু মেয়েকে হয়রানি করার অভিযোগে।

১৩ নভেম্বর: গরু জবাইয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত সাহিল নামে এক মুসলিম যুবক পুলিশ গুলিতে আহত হন। অভিযোগ করা হয়, তিনি পালানোর চেষ্টা করছিলেন। আহত অবস্থায় তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

১৮ নভেম্বর: মধ্যপ্রদেশের দামোহ জেলার এক মেলা থেকে মুসলিম ব্যবসায়ীদের স্টল সরিয়ে দেওয়া হয়। আয়োজকদের দাবি, ধর্মীয় কারণে তারা মুসলিম ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে আপত্তি করেন। অথচ ব্যবসায়ীরা স্টল স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ফি পরিশোধ করেছিলেন।

২০ নভেম্বর: উত্তরপ্রদেশে এক পুলিশ কর্মকর্তা মুসলিম নারী ভোটারদের বন্দুক দিয়ে হুমকি দেন। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে এক নারীকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনার গুলি চালানোর আদেশ নেই,’  উত্তরে পুলিশ বলেন, ‘আমাদের আদেশ আছে।’

২১ নভেম্বর: উত্তরপ্রদেশের রামপুর জেলায় একটি মুসলিম বিয়ের অনুষ্ঠানে গরুর মাংস পরিবেশনের সন্দেহে পুলিশ অভিযান চালায়। মোহাম্মদ আহমেদের মেয়ের বিয়েতে এ ঘটনা ঘটে।

২২ নভেম্বর: সাম্ভালে শাহী জামে মসজিদে আদালতের আদেশে জরিপের চেষ্টা ঘিরে উত্তেজনা দেখা দেয়। দ্বিতীয় দফা জরিপের সময় সংঘর্ষে পাথর নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, এসময় পুলিশের গুলিতে চারজন মুসলিম যুবক নিহত হন।

২৫ নভেম্বর: উত্তরপ্রদেশের ভিক্টোরিয়া পার্কে বাড়ি ফেরার পথে গুলফাম সাইফি নামের এক মুসলিম যুবককে মারধর করা হয় এবং তাকে ‘জয় শ্রী রাম’ বলতে বাধ্য করা হয়। মারধরের একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন।

২৯ নভেম্বর: উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে দশেরা উৎসবে বিতর্কিত বক্তব্য দেন হিন্দুত্ববাদী নেতা যাতি নরসিংহানন্দ। তিনি তার অনুসারীদের রাবণের পরিবর্তে নবী মুহাম্মদের কুশপুতুল দাহ করার আহ্বান জানান। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে।

ডিসেম্বর মাস 

৩ ডিসেম্বর: তেলেঙ্গানায় এক নারী—যিনি নিজেকে নাগা সাধু বলে পরিচয় দেন— সেকেন্দরাবাদের মুথ্যালাম্মা মন্দিরের অপবিত্রতার ঘটনায় মুসলিম ও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দেন। এক ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি মুসলমান এবং খ্রিস্টানদের রাস্তায় প্রকাশ্যে পিটাব। সনাতন ধর্ম রক্ষার জন্য আমি যেকোনো কিছু করব।’

৪ ডিসেম্বর: মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর আদালত চার বছর পর সব অভিযোগ থেকে তাসলিম আলীকে মুক্তি দেয়। ২০২১ সালের আগস্টে বালা বিক্রি করার সময় বাজরং দলের সদস্যরা তাকে মারধর করে এবং মিথ্যা অভিযোগে জড়িয়ে দেয়। আদালতের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে, তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগগুলো মিথ্যা ছিল।

৫ ডিসেম্বর: উত্তরপ্রদেশের মুরাদাবাদে এক মুসলিম দম্পতি হিন্দুপ্রধান আবাসিক এলাকায় বাড়ি কেনার পর প্রতিবেশীদের চাপের মুখে বাড়িটি বিক্রি করতে বাধ্য হন।

৫ ডিসেম্বর: কেরালায় এক মুসলিম যুবকের বিরুদ্ধে মোটরসাইকেলে হিন্দু মেয়ের সঙ্গে ভ্রমণের অভিযোগে পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে, যদিও মেয়ে বা তার পরিবার এ বিষয়ে কোনো আপত্তি জানায়নি।

৭ ডিসেম্বর: মধ্যপ্রদেশে তিন মুসলিম শিশুকে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর সদস্যরা মারধর করে এবং ‘জয় শ্রী রাম’ বলতে বাধ্য করে। ভিডিওটি এক মাস পর ডিসেম্বর মাসে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

৭ ডিসেম্বর: অখিল ভারতীয় সন্ত সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিতেন্দ্রনন্দ সরস্বতী বলেন, ‘হিন্দুদের বিরুদ্ধে গোধরা-কাণ্ডের মতো ষড়যন্ত্র হলে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার মতো সহিংসতা ঘটতে পারে।’

৮ ডিসেম্বর: কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের এক গবেষক সাবির আহমেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করার দাবি জানানো হয়। তিনি আরটিআই-এর মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের মেডিকেল কলেজগুলোর ছাত্র এবং কর্মীদের সামাজিক তথ্য জানতে চেয়েছিলেন।

১৩ ডিসেম্বর: বিহারের সীতামারহি জেলায় মুরগি বিক্রেতা মোহাম্মদ আলিমের বাড়িতে এনআইএ অভিযান চালায়। পাঁচ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়, তবে তার ফোনটি বাজেয়াপ্ত করা হয়।

১৪ ডিসেম্বর: মহারাষ্ট্রের বাদলাপুরে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী ‘বাংলাদেশি মুক্ত বাদলাপুর’ প্রচারণার অংশ হিসেবে মুসলিম সবজি বিক্রেতাদের হয়রানি করে।

১৬ ডিসেম্বর: উত্তরপ্রদেশে বাড়ি ফেরার পথে দুই মুসলিম কিশোরীকে হয়রানি করা হয় এবং তাদের হিজাব খুলে নেওয়া হয়।

২১ ডিসেম্বর: হরিয়ানার নুহ এলাকায় গরু পরিবহনের অভিযোগে আরমান খান নামে এক ট্রাক চালককে গোরক্ষক গোষ্ঠীর সদস্যরা মারধর করে।

২২ ডিসেম্বর: হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী একটি কাল্পনিক ভিডিও তৈরি করে, যেখানে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ‘রেল জিহাদ’ চালানোর অভিযোগ আনা হয়। ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা ছড়ায়।

এভাবেই ভারতে সংখ্যালঘু বিশেষত মুসলিমরা হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন এবং এদের উগ্র সমর্থকদের আক্রমণে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বুলি আওড়ানো কট্টর মোদী সরকার সংখ্যালঘু নির্যাতনের আগুনে অবিরত ঘি ঢেলে যান। আর বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভুয়া অভিযোগে মিডিয়াপাড়া গরম করে রাখেন। 

সময় এরকমই থাকবে না৷ সময় বদলাবে। পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠবে৷ আর আমরা বলব, সব কুছ ইয়াদ রাকখা যায়েগা৷ সব কুছ ইয়াদ রাকখা যায়েগা৷ 

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা