মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

লেবাননে যুদ্ধবিরতির পরে কী হবে?

লেবাননে যুদ্ধবিরতির পরে কী হবে?
লেবাননে যুদ্ধবিরতির পরে কী হবে?। ছবি : আনাদোলু

লেবাননের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ ২৭ জানুয়ারি শেষ হতে চলেছে। সাময়িক এই চুক্তি কার্যকর হয়েছিল গত ২৭ নভেম্বর, যা দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ ১৪ মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটায়। তবে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ইসরায়েল এই চুক্তি বাড়ানোর পক্ষে হলেও লেবাননের বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি ইসরায়েলের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে, কারণ এর ফলে তারা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার সুযোগ পাবে। অন্যদিকে, লেবাননের আশঙ্কা, এর আড়ালে ইসরায়েল নতুন করে সামরিক তৎপরতা চালাতে পারে।

চুক্তির শর্ত ও বাস্তবায়ন পরিস্থিতি

চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলের সেনাদের ৬০ দিনের মধ্যে ধাপে ধাপে লেবাননের দক্ষিণ অঞ্চল থেকে প্রত্যাহার করার কথা। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে লেবানন সেনাবাহিনীকে লিটানি নদীর দক্ষিণে অবস্থান নিতে হবে, যা হবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী ইউনিফিলের সমন্বয়ে। এছাড়া, হিজবুল্লাহর সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করার কথাও রয়েছে চুক্তির শর্তে।

কিন্তু বাস্তবে চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইসরায়েল অভিযোগ করছে, লেবানন এখনও পুরোপুরি চুক্তি বাস্তবায়ন করেনি। যেমন- সেনাবাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলে পর্যাপ্ত উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়নি। একইসঙ্গে, লেবাননের রাজনৈতিক অচলাবস্থাও এক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও নতুন সরকার গঠনে বিলম্ব চুক্তি বাস্তবায়নে প্রভাব ফেলেছে।

তবে সম্প্রতি লেবাননে রাজনৈতিক অচলাবস্থার সমাধান ঘটেছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন এবং সরকার গঠনের কাজ চলছে। সেনাবাহিনীও দক্ষিণে তাদের উপস্থিতি বাড়িয়েছে।

লেবাননের প্রতিক্রিয়া ও শঙ্কা

লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইসরায়েলের কার্যক্রমকে যুদ্ধবিরতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে।

লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন সম্প্রতি জানিয়েছেন, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার করা উচিত। তিনি বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য কাজ করছেন।

বিশ্লেষক নিদাল সাবা মনে করেন, চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি লেবাননের জন্য কোনো বড় সুবিধা বয়ে আনবে না। বরং এটি ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই বেশি কার্যকর।

ইসরায়েলের লক্ষ্য

ইসরায়েল এ চুক্তির মাধ্যমে তাদের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে চায়। বিশ্লেষক ওয়াজদি আরিদি মনে করেন, ইসরায়েল চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতা ধ্বংসের প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে চায়।

আরিদি আরও বলেন, ‘ইসরায়েল ইতোমধ্যে হিজবুল্লাহর অনেক নেতাকে হত্যা করেছে এবং চুক্তির আড়ালে তাদের সামরিক অবস্থান শক্তিশালী করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’

যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ: স্থিতিশীলতা নাকি সংঘাত?

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে লেবাননের জন্য সংকট আরও গভীর হতে পারে। একদিকে, চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

অন্যদিকে, হিজবুল্লাহ হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, ইসরায়েলের লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে তারা পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাবে। এ অবস্থায় লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানান, লেবানন-ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি নাজুক হলেও কার্যকর। তবে তিনি উভয় পক্ষকে চুক্তির শর্ত মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।

লেবাননের করণীয়

লেবানন বর্তমানে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের কৌশল গ্রহণ করেছে। প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন প্রয়োজন।

অন্যদিকে, বিশ্লেষকরা বলছেন, লেবাননের জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে এবং জাতিসংঘে চুক্তি লঙ্ঘনের বিষয়ে অভিযোগ করতে হবে।

লেবানন ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি চুক্তি বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে। চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে দুই দেশের ভিন্ন অবস্থান এবং হিজবুল্লাহর প্রতিক্রিয়া পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

লেবাননের জন্য এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, চুক্তির কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা এবং দক্ষিণ সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। তবে ইসরায়েলের কৌশল এবং হিজবুল্লাহর অবস্থান এ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কেমন হবে, তার ওপর বড় প্রভাব ফেলবে।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা