মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ

ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ
ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ। ছবি : স্কাই নিউজ

চার বছর বিরতির পর আবারও যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শপথ নেওয়ার জন্য ক্যাপিটল ভবনে পৌঁছানোর অপেক্ষায় থাকা এই নেতা যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্ব রাজনীতির জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত প্রস্তুত করে ফেলেছেন, বলা চলে। কিন্তু তার এই প্রত্যাবর্তনের পেছনে শুধু আমেরিকার রাজনীতি নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যের জটিল কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটও জড়িয়ে আছে।

গাজা উপত্যকায় ১৫ মাস ধরে চলা সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে ঠিক তার শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে। এই ঘটনাকে বিশেষজ্ঞরা শুধুমাত্র যুদ্ধবিরতি নয়, বরং একটি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেও দেখছেন।

মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের চ্যালেঞ্জ

ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন মধ্যপ্রাচ্য রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক টানাপোড়েনে টালমাটাল। যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে গাজায় রক্তপাতের অবসান হলেও এই অঞ্চল ট্রাম্পের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তাকে ‘চুক্তির মানুষ’ বলে অভিহিত করলেও তার কৌশল ও বাস্তববাদী পন্থা অনেক ক্ষেত্রেই বিতর্কিত।

মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের গবেষক ইব্রাহিম আল-আসিল স্কাই নিউজ আরবিয়া-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন শুধু মার্কিন রাজনীতি নয়, পুরো বিশ্বের জন্য একটি বড় ঘটনা। গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির পেছনে ট্রাম্প ও বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসনের বিরল সমন্বয় দেখা গেছে, যা মার্কিন রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে তেমন দেখা যায় না।’

গাজায় যুদ্ধবিরতি রাজনৈতিক কৌশল না কূটনৈতিক সাফল্য?

গাজায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে সংঘাত থামলেও এই চুক্তি রাজনৈতিক সমীকরণ ও কূটনৈতিক চাপের মিশ্রণ মূলত। ইব্রাহিম আল-আসিলের মতে, বাইডেন প্রশাসনের চাপ এই চুক্তি কার্যকরে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। তবে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন এই পরিস্থিতিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। যদি চুক্তি সম্পন্ন না হতো, তাহলে তিনি কঠোর পদক্ষেপ নিতেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন।’

এ বিষয়ে কৌশলগত গবেষক ব্রায়ান বয়েড বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির আলোচনাগুলো ট্রাম্প ও বাইডেন প্রশাসনের মধ্যে পেশাদারিত্বের সঙ্গে হয়েছে। চুক্তিতে জটিল বন্দি বিনিময় অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনজন বন্দি মুক্তি পাওয়ার বিনিময়ে গাজায় আটক বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।’

বয়েড আরও বলেন, এই প্রক্রিয়া ধীর গতিতে চলছে এবং পুরোপুরি কার্যকর হতে আরও কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে। তবে এই বিনিময় শান্তি প্রতিষ্ঠায় পরবর্তী ধাপের জন্য একটি মাইলফলক হতে পারে।

ট্রাম্পের ফিরে আসা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে ইরানে। ব্রায়ান বয়েড জানান, ইরান ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নীতির পুনরাবৃত্তি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। বাইডেন প্রশাসনের তুলনায় ট্রাম্প অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং চাপ প্রয়োগে বেশি বিশ্বাসী।

আসিল মনে করেন, ট্রাম্পের সামনে ইরান ইস্যু একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব হ্রাস করা এবং পাশাপাশি গাজা, সিরিয়া ও লেবাননের পুনর্গঠন ট্রাম্পের প্রশাসনের জন্য অগ্রাধিকার হতে পারে।

গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি আপাতদৃষ্টিতে ইসরায়েলের জন্য ইতিবাচক হলেও অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যে। চুক্তির অংশ হিসেবে বন্দি বিনিময় নিয়ে ইসরায়েলের ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোতে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

ব্রায়ান বয়েড বলেন, ‘ইসরায়েলের চরম ডানপন্থীরা হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার পক্ষপাতী। ফলে হামাসের সাথে সমঝোতার বিষয়টি তাদের জন্য বেশ অস্বস্তিকর এবং অসহনীয়ও বলা যায়। পাশাপাশি, গাজায় অস্ত্রের চালান বন্ধ করতে ইসরায়েল এখনো ফিলাডলফিয়া করিডর নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রবল আগ্রহী।’

ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন তার রাজনৈতিক কৌশলের কার্যকারিতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এনে দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়া এবং দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত নিরসনে তিনি নিজের নেতৃত্বকে আরও দৃঢ় করার চেষ্টা করবেন।

ইব্রাহিম আল-আসিল বলেন, ‘ট্রাম্প তার কূটনৈতিক দক্ষতা এবং ইসরায়েলের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে এই অঞ্চলের পরিস্থিতি সবসময় অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে।’

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। গাজায় যুদ্ধবিরতি তার জন্য একটি সফল সূচনা হলেও এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বাস্তবতা তাকে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড় করাবে নিশ্চিতভাবেই।

প্রশ্ন থেকে যায়—ট্রাম্প কি তার প্রত্যাবর্তনকে কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক চিত্র পুনর্গঠন করতে পারবেন, নাকি আঞ্চলিক ‘অস্থিরতা’ তাকে ফের সংকটে ফেলবে? সময়ই দেবে এর উত্তর।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা