গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরের পর থেকেই ইসরায়েলের রাজনীতিতে অস্থিরতা শুরু হয়েছে । প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সরকার আরও একবার সংকটের মুখে পড়েছে। ইতিমার বেন গাভিরের নেতৃত্বাধীন উগ্র ডানপন্থি দল ‘ওৎসমা ইহুদিত’ (ইহুদি শক্তি) গাজায় যুদ্ধ বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন। এতে জোটের সমর্থনকারী সংসদ সদস্যের সংখ্যা কমে গেছে ৬৮ থেকে ৬২-তে।
এই পদত্যাগ সরকারের ভঙ্গুর কাঠামো আরও স্পষ্ট করেছে। বেন গাভিরের দল শুধু নয়, ডানপন্থি ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদী জোটের নেতা বেজালেল স্মোট্রিচও হুমকি দিয়েছেন, যদি বন্দি বিনিময়ের প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর গাজায় পুনরায় হামলা শুরু না হয়, তবে তার দলও জোট থেকে সরে যাবে।
নেতানিয়াহুর সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চরম ডানপন্থি দলের চাপে ছিল। বেন গাভির ও স্মোট্রিচ বারবার বিভিন্ন দাবিদাওয়ার মাধ্যমে সরকারকে জিম্মি করে রেখেছে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদত্যাগ আরও বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। স্মোট্রিচের হুমকি বাস্তবায়ন করলে সরকার ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
এমন পরিস্থিতিতে বিরোধী নেতা ও ‘ইয়েশ আতিদ’ দলের প্রধান ইয়ার লাপিদ জানিয়েছেন, তিনি বন্দি বিনিময় চুক্তির প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন করা এবং হামাসের হাতে থাকা ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে সরকারের জন্য ‘নেটওয়ার্ক সাপোর্ট’ বা সহায়তা প্রদান করতে প্রস্তুত। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিরোধী দলের সমর্থন থাকলেও নেতানিয়াহুর জোট সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে।
সরকার টিকিয়ে রাখতে নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে পুনরায় হামলার পথে হাঁটতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া, নেতানিয়াহু আগাম নির্বাচন এড়ানোর চেষ্টা করছেন, কারণ তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মামলা চলছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আকিভা এলদার বলেছেন, নেতানিয়াহুর সরকার কেবলমাত্র স্বার্থের রাজনীতিতে টিকে আছে। বেন গাভির ও স্মোট্রিচের চাপে সরকার প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। এলদার মনে করেন, বেন গাভিরের পদত্যাগ সরকারের প্রতি অনাস্থার ইঙ্গিত নয়, বরং এটি নেতানিয়াহুর ওপর আরও চাপ প্রয়োগের একটি কৌশল।
নেতানিয়াহু সরকার গঠনের সময় থেকেই চরমপন্থি ডানপন্থি দলগুলোর দাবিদাওয়া মেনে চলতে বাধ্য হয়েছেন। গাজায় যুদ্ধ শুরু করাও ছিল একটি রাজনৈতিক কৌশল, যা নেতানিয়াহুর টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন ছিল।
বিরোধী দলগুলো নেতানিয়াহুর কৌশলের বিরোধিতা করলেও কোনো কার্যকর বিকল্প পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে পারেনি। ফিলিস্তিন সংকট নিয়ে বিরোধীদের কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। ফলে তারা নেতানিয়াহুর সমালোচনা করলেও মূলত সমর্থন দিতেই বাধ্য হচ্ছেন।
ইসরায়েলের জাতীয় পত্রিকা হারেৎস এর রাজনৈতিক সম্পাদক রিভিট হেক্ট মনে করেন, বেন গাভিরের পদত্যাগ ডানপন্থি শিবিরের জন্য ইতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ, তার কার্যক্রম সরকারে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা বাড়িয়েছে কেবল। তবে, নেতানিয়াহু ভবিষ্যতে রাজনৈতিক কৌশলের স্বার্থে বেন গাভিরকে পুনরায় দলে ফিরিয়ে আনতে পারেন।
ইসরায়েলের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে নেতানিয়াহুর সরকার আরও বেশি চাপে পড়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহুর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তার জোট রক্ষা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে কৌশলগত সমঝোতার ওপর। তবে ডানপন্থি চরমপন্থিদের ক্রমাগত প্রভাবের কারণে ইসরায়েলের রাজনীতিতে অস্থিরতা অব্যাহত থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র : আল জাজিরা