মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

লেবাননে নতুন ভূমিকায় ফ্রান্স, কী করতে যাচ্ছেন ম্যাক্রোঁ?

লেবাননে নতুন ভূমিকায় ফ্রান্স, কী করতে যাচ্ছেন ম্যাক্রোঁ?
লেবাননে নতুন ভূমিকায় ফ্রান্স, কী করতে যাচ্ছেন ম্যাক্রোঁ?। ছবি : স্কাই নিউজ

লেবাননে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সাম্প্রতিক সফর নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় থাকা ফ্রান্স এবার কি কৌশলগত অংশীদার হয়ে উঠতে চাইছে? নাকি এই সফরের পেছনে রয়েছে আরও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা?

ম্যাক্রোঁর সফরের সময়ই এই প্রশ্নগুলো আলোচনা, এটি কি কেবল একটি কূটনৈতিক উদ্যোগ, নাকি লেবাননের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য পুনর্গঠনের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল?

‘স্কাই নিউজ অ্যারাবিক’-এর প্রতিবেদক দারিন হালাওয়ির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, জোসেফ আউনকে লেবাননের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচনের পর ম্যাক্রোঁর এই সফর লেবাননে আন্তর্জাতিক মহলের গভীর আগ্রহের প্রতিফলন। তার মতে, ম্যাক্রোঁ লেবাননের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে নিজের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে চান। তবে তিনি লেবাননের রাজনৈতিক দলগুলোর অনমনীয় মনোভাব এবং সর্বসম্মত সমাধানে পৌঁছানোর চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন।

ফ্রান্সের আগের চেষ্টাগুলো উল্লেখযোগ্য ফলাফল বয়ে আনতে পারেনি। বিশেষ করে ম্যাক্রোঁর শাসনামলে নিয়োগপ্রাপ্ত ফরাসি দূতদের সংস্কার ত্বরান্বিত করার প্রচেষ্টা খুব একটা কার্যকর হয়নি। এর মধ্যে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতি এই অঞ্চলের রাজনীতিতে নতুন করে ‘অগ্রাধিকার’ সৃষ্টি করেছে।

নিরাপত্তার ক্ষেত্রে, ইসরায়েল ও লেবাননের হিজবুল্লাহর মধ্যে অস্ত্রবিরতি বহাল রাখতে ফ্রান্স একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ‘স্কাই নিউজ অ্যারাবিক’-এর ইসরায়েল বিষয়ক সম্পাদক নিদাল কানাআনা জানিয়েছেন, এই ভূমিকাটি ইসরায়েলের জন্য কিছুটা অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে।

ইসরায়েল মনে করে, ফ্রান্সের উপস্থিতি তাদের লেবাননের বিষয়ে স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাঁধা দিচ্ছে। ইসরায়েলের কৌশল ছিল লেবাননকে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাগতভাবে দুর্বল রাখা। ফ্রান্সের হস্তক্ষেপ যদি লেবাননের রাষ্ট্রীয় শক্তি বাড়ায়, তাহলে তা ইসরায়েলের স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে।

লেবাননের সেনাবাহিনীর প্রতি ফ্রান্সের সমর্থন দেশটির কৌশলগত পরিকল্পনার একটি বড় অংশ। ‘স্কাই নিউজ অ্যারাবিক’-এর প্রতিবেদক আলি আওজানা জানিয়েছেন, আর্থিক সংকটে থাকা লেবাননের সেনাবাহিনী নিয়মিত লজিস্টিক ও প্রশিক্ষণ সহায়তা পাচ্ছে ফ্রান্সের কাছ থেকে।

ম্যাক্রোঁ সেনাবাহিনীর জন্য অতিরিক্ত সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে বিশেষজ্ঞ পাঠানো এবং নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ। ফ্রান্স চায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হোক, যা বেসরকারি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব কমাতে সহায়তা করবে।

তবে, হিজবুল্লাহর মতো গোষ্ঠীগুলোর প্রভাবমুক্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি করা অতটা সহজ নয় লেবাননে। ম্যাক্রোঁ বারবার তাদের নিরস্ত্র হয়ে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানালেও, লেবাননের জটিল অভ্যন্তরীণ বাস্তবতায় এটি কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

ম্যাক্রোঁর সফরের একটি বড় দিক ছিল ২০২০ সালের আগস্টে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত বৈরুত বন্দরের পুনর্গঠন। তিনি ৫০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ইউরো সহায়তার ঘোষণা দেন। এছাড়া লেবাননের অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

ফ্রান্স চায় লেবাননের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠন নিশ্চিত করতে। তবে, এই উদ্যোগ কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নির্ভর করছে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশ ও আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী পক্ষগুলোর ভূমিকার ওপর।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা