মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

বাশার আল আসাদের পতনের পর প্রকাশ্যে এল নেশাদ্রব্য ক্যাপ্টাগনের কারখানা

বাশার আল আসাদের পতনের পর প্রকাশ্যে এল নেশাদ্রব্য ক্যাপ্টাগনের কারখানা
বাশার আল আসাদের পতনের পর প্রকাশ্যে এল নেশাদ্রব্য ক্যাপ্টাগনের কারখানা। ছবি : আনাদোলু

সিরিয়ার দুমা ও মাজা সামরিক বিমানবন্দরে সম্প্রতি মাদক তৈরির কারখানা উন্মোচিত হয়েছে। বাশার আল আসাদের পতনের পর সিরিয়ার বিভিন্ন শহরে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলে বহুদিন ধরে গোপনে পরিচালিত ক্যাপ্টাগন মাদক তৈরির কারখানাগুলো প্রকাশ্যে আসে। যদিও আগে আসাদ সরকার এই কারখানাগুলোর অস্তিত্ব অস্বীকার করে আসছিল।

ক্যাপ্টাগন মূলত ১৯৬০-এর দশকে জার্মানিতে ঘুমের অসুখ, বিষণ্নতা ও মনোযোগ ঘাটতির চিকিৎসায় তৈরি একটি ওষুধ। ১৯৮৬ সালে এটি নিষিদ্ধ হওয়ার পর বুলগেরিয়ায় অপরাধী চক্রগুলো লেবাননের বেকা উপত্যকায় এর উৎপাদন শুরু করে।

এছাড়াও সিরিয়ার রাজধানী দামেশকের উপকণ্ঠে দুমা শহরে একটি বড় ক্যাপ্টাগন তৈরির কারখানার সন্ধান মিলেছে। আনাদোলু এজেন্সির ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একটি কারখানার ভূগর্ভস্থ রুমে মাদক প্যাকেজিংয়ের কাজ চলছিল। মাদক পাচারের জন্য বিশেষ কৌশলে ট্যাবলেটগুলো বৈদ্যুতিক প্যানেলের ভেতরে লুকানো হচ্ছিল।

দামেশকের মাজা সামরিক বিমানবন্দর থেকে বিপুল পরিমাণ ক্যাপ্টাগন ট্যাবলেট এবং মাদক তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সিরিয়া ও লেবাননই ক্যাপ্টাগনের প্রধান উৎপাদক ও সরবরাহকারী দেশ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বিশেষ করে উপসাগরীয় অঞ্চলে সরাসরি কিংবা গোপন রুটে এই মাদক পাচার করা হয়।

মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, সিরিয়ায় তৈরি ক্যাপ্টাগন ট্যাবলেটের বিদেশে আটক হওয়া চালানের মূল্য প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলো ২৫ মিলিয়ন ক্যাপ্টাগন ট্যাবলেট জব্দ করেছিল, যার বাজারমূল্য প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সিরিয়ায় একটি ক্যাপ্টাগন ট্যাবলেট তৈরির খরচ মাত্র কয়েক সেন্ট হলেও এটি সৌদি আরবের মতো ধনী শহরগুলোতে ২৫ ডলারে বিক্রি হয়।

ওয়াশিংটনের নিউ লাইনস ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, বৈশ্বিক ক্যাপ্টাগন বাজারের আর্থিক মূল্য প্রায় ৫.৭ বিলিয়ন ডলার। সিরিয়ার আসাদ সরকার ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এই মাদক ব্যবসা থেকে বছরে প্রায় ২.৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল, যা দেশটির মোট জিডিপির প্রায় এক চতুর্থাংশ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ অফিস (OFAC) সিরিয়াকে ‘বিশ্বের শীর্ষ ক্যাপ্টাগন উৎপাদক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে সরবরাহকৃত ক্যাপ্টাগনের প্রায় ৮০ শতাংশই সিরিয়ায় তৈরি হতো। এটি আসাদ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস ছিল।

এদিকে চলতি বছরের ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো দামেশকসহ বেশ কয়েকটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিলে সরকারি বাহিনী পলায়ন করে।এতে ৬১ বছরের দীর্ঘ বাথ পার্টির শাসন এবং আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা