গাজায় চলমান যুদ্ধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে আয়ারল্যান্ডের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিন।
বুধবার (৪ জুন) কলেজের পরিচালনা পর্ষদের এক বৈঠকে এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর ফলে ইসরায়েলি বিশ্ববিদ্যালয় ও কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ছাত্র বিনিময় কর্মসূচি, যৌথ গবেষণা, একাডেমিক সহযোগিতা, এমনকি ব্যবসায়িক বিনিয়োগ ও লেনদেন সবই বাতিল করা হবে।

কলেজ বোর্ডের চেয়ারম্যান পল ফারেল এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা ইসরায়েল রাষ্ট্র, সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় ও কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করছি। এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে যতদিন না তারা আন্তর্জাতিক ও মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন বন্ধ করে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইমেইলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়। জানা গেছে, গত বছর পাঁচ দিনব্যাপী এক ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গঠিত একটি ওয়ার্কিং গ্রুপের সুপারিশের ভিত্তিতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ট্রিনিটি কলেজের এই সিদ্ধান্তের আগের দিনই সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয় গাজা পরিস্থিতির প্রতিবাদে ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হেব্রু ইউনিভার্সিটি-এর সঙ্গে তাদের অংশীদারিত্ব বাতিল করে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা এমন অংশীদারিত্ব বাতিল করছি, যা আমাদের কৌশলগত অগ্রাধিকার ও মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
তারা গাজায় চলমান সহিংসতা ও মানবিক বিপর্যয় নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
উল্লেখ্য, আয়ারল্যান্ড সরকার ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার করা গণহত্যার মামলায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে অংশ নিয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০২৫ সালের মে মাসে দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
গাজা যুদ্ধ ঘিরে ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্বের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জোরালো প্রতিবাদের মুখে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে। কোথাও বিনিয়োগ প্রত্যাহার, কোথাও গবেষণা সহযোগিতা বাতিল, আবার কোথাও ইসরায়েলি গবেষকদের আন্তর্জাতিক সম্মেলন থেকে বাদ দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে ইসরায়েল এখন এক নজিরবিহীন একাডেমিক বয়কট-এর মুখে পড়েছে। গবেষণাপত্র বাতিল, আন্তর্জাতিক প্রকল্প থেকে বাদ পড়া, এমনকি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে অংশগ্রহণেও বাধা দেওয়া হচ্ছে ইসরায়েলি গবেষকদের।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রিনিটি কলেজের এই সিদ্ধান্ত কেবল শিক্ষাক্ষেত্রেই নয়, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও মানবাধিকারের পক্ষে একটি শক্তিশালী বার্তা হয়ে উঠবে।
সূত্র: আল জাজিরা