ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করে অস্থায়ী ঘরবাড়ি ও ধ্বংসস্তূপ সরানোর ভারী যন্ত্রপাতি প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। হামাসের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের অবস্থান এবং ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করেই এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ইসরায়েল।
হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম আল-জাজিরাকে বলেন, ‘দখলদার ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির চুক্তি মানছে না। তারা অস্থায়ী ঘরবাড়ি ও ধ্বংসস্তূপ সরানোর ভারী যন্ত্রপাতি প্রবেশ করতে দিচ্ছে না, যা চুক্তির গুরুতর লঙ্ঘন।’
তিনি আরও জানান, গত সপ্তাহে মধ্যস্থতাকারীদের কাছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা থেকে তিনি সরে এসেছেন। এতে স্পষ্ট হয়েছে যে ইসরায়েল মার্কিন প্রশাসনের নির্দেশনার বাইরে যেতে চায় না।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, রোববার নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে নেতানিয়াহু গাজায় অস্থায়ী ঘরবাড়ি ও ভারী যন্ত্রপাতি প্রবেশ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন।
এ প্রসঙ্গে হামাসের মুখপাত্র কাসেম বলেন, ‘এই অবস্থান বিস্ময়কর। কারণ যুদ্ধবিরতির কাঠামো তৈরি করেছিল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। এখন সেটিতে পরিবর্তনের কথা বলা যুক্তিসঙ্গত নয়, বিশেষ করে যখন সবকিছু চুক্তি অনুযায়ী চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্প যদি ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হন, তাহলে তার উচিত ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, যাতে তারা চুক্তির শর্ত বাস্তবায়ন করে। কিন্তু তিনি হুমকি দিয়ে বা চুক্তি পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন।’
গত শুক্রবার ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, হামাস যদি শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে সব ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি না দেয়, তাহলে গাজার বিরুদ্ধে ‘নরকের দরজা’ খুলে দেওয়া হবে। তবে নির্ধারিত সময় পার হলেও হামাস কেবল তিনজন বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে, যা যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবেই নির্ধারিত ছিল।
রোববার সকালে রাফাহ শহরে ত্রাণ সহায়তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের তিন সদস্য ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় শহিদ হন বলে জানিয়েছে গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
হামাসের মুখপাত্র কাসেম এ ঘটনাকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আরেকটি লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘দখলদার ইসরায়েল ফিলিস্তিনে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা ছড়াতে চায়। আমরা মধ্যস্থতাকারীদের আহ্বান জানাচ্ছি যেন তারা ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।’
হামাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পূর্ব রাফায় আজ সকালে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় তিন পুলিশ সদস্য শহিদ হয়েছেন। এটি যুদ্ধবিরতির গুরুতর লঙ্ঘন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই হামলা ও যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের ঘটনা ইসরায়েলের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ধারাবাহিকতা। এর সর্বশেষ উদাহরণ হলো আজকের ঘোষণা, যেখানে তারা অস্থায়ী ঘরবাড়ি ও ভারী যন্ত্রপাতি প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যা তারা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।’
সূত্র: আল জাজিরা
