মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

গাজায় ত্রাণের নামে যুক্তরাষ্ট্রের মাদক চালান, আড়ালে গোয়েন্দা তৎপরতা

গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, প্রকল্পটি আদতে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ ও গোয়েন্দা নজরদারির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নামী পরামর্শক প্রতিষ্ঠানও শুরুতে এতে যুক্ত থাকলেও পরে ঝুঁকি বুঝে সরে দাঁড়িয়েছে। তারা বলেছে, প্রকল্পটি মানবিক সহায়তার নামে পরিচালিত হলেও এটি আসলে এক ব্যর্থ ও বিপজ্জনক রাজনৈতিক প্রকল্প।
গাজায় ত্রাণের নামে যুক্তরাষ্ট্রের মাদক চালান, আড়ালে গোয়েন্দা তৎপরতা
গাজায় ত্রাণের নামে যুক্তরাষ্ট্রের মাদক চালান, আড়ালে গোয়েন্দা তৎপরতা। ছবি : এআই

গাজায় ‘মানবিক সহায়তা তহবিল’ নামের বিতর্কিত একটি প্রকল্প ঘিরে নতুন করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক গোপন বৈঠকে রাশিয়ার প্রতিনিধি অভিযোগ করেন, এই তহবিলের আড়ালে গাজায় চলছে মাদক পাচার। এরপর জাতিসংঘ তহবিলটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের নির্দেশ দিলেও যুক্তরাষ্ট্র ও দখলদার ইসরায়েল এর বিরোধিতা করে তহবিলটি রক্ষায় তৎপর হয়ে উঠেছে।

ইসরায়েলি দৈনিক ইদিয়োত আহরোনোত জানিয়েছে, জাতিসংঘে তহবিলটি বাতিলের প্রস্তাব উত্থাপন হলেও সেটা আটকে দিতে কূটনৈতিক প্রচারণা চালাচ্ছে ওয়াশিংটন ও তেলআবিব। ইউরোপের কয়েকটি দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নিলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল মিলে তা ব্যর্থ করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

গত শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে রাশিয়ার প্রতিনিধি বলেন, তাঁদের কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্য ও প্রমাণ রয়েছে—যাতে দেখা যাচ্ছে এই তহবিলের মাধ্যমে গাজায় মাদক প্রবেশ করানো হচ্ছে। এই অভিযোগ সামনে আসার পর জাতিসংঘ তার বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা ও অংশীদারদের নির্দেশ দেয় যেন তারা আর এই প্রকল্পে অংশ না নেয়।

তবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এখনও ঝুলে আছে। কারণ, আগামী সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের আরেকটি বৈঠকে বিষয়টি আবার আলোচনায় আসতে পারে। এর আগেই এই আলোচনাকে বিঘ্নিত করতে সক্রিয় হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। তাদের লক্ষ্য, যেকোনো মূল্যে বিতর্কিত তহবিলটি বহাল রাখা।

তথ্য অনুযায়ী, এখনো গাজায় এই তহবিলের কার্যক্রম চলমান এবং তা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষ ‘বিতরণ কেন্দ্র’ থেকে যেভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে, সেটি ঘিরেই গত কয়েক মাসে বহু সহিংসতা, এমনকি গণহত্যার ঘটনাও ঘটেছে।

এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় চলছে। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার উত্তেজনায় বিশ্ব ব্যস্ত থাকলেও ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা ভুলে গেলে চলবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের বিতর্কিত উদ্যোগের চেয়ে আগের সেই নিরপেক্ষ, মানবিক কাঠামোই পুনরায় চালু করা উচিত, যেটি যুদ্ধবিরতির সময় ভালোভাবে কাজ করেছিল।’

আন্তর্জাতিক তদন্ত ও বিশ্লেষণে উঠে এসেছে আরও উদ্বেগজনক তথ্য। বিশ্লেষকদের মতে, এই তথাকথিত ‘মানবিক তহবিল’ প্রকৃতপক্ষে একটি সামরিক-রাজনৈতিক প্রকল্প, যা গোপনে গোয়েন্দা কর্মকাণ্ড চালানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এমন সব মার্কিন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে, যাদের মানবিক সহায়তার কোনো পূর্ব-অভিজ্ঞতা নেই।

তদন্তে জানা গেছে, এই প্রকল্পের পেছনে রয়েছে ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। তাদের লক্ষ্য—গাজার সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে প্রতিরোধ শক্তির ভিত দুর্বল করা এবং নির্দিষ্ট স্থানে জনসমাগম ঘটিয়ে জনসংখ্যাগত চিত্রে হস্তক্ষেপ করা।

গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, প্রকল্পটি আদতে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ ও গোয়েন্দা নজরদারির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নামী পরামর্শক প্রতিষ্ঠানও শুরুতে এতে যুক্ত থাকলেও পরে ঝুঁকি বুঝে সরে দাঁড়িয়েছে। তারা বলেছে, প্রকল্পটি মানবিক সহায়তার নামে পরিচালিত হলেও এটি আসলে এক ব্যর্থ ও বিপজ্জনক রাজনৈতিক প্রকল্প।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘মানবিক তহবিল’-এর আড়ালে গাজায় এক চরম নিরাপত্তা-রাজনীতি খেলছে দখলদার শক্তি। এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব—এই ভণ্ডামির বিরুদ্ধে সজাগ থাকা এবং গাজায় নিরপেক্ষ ও প্রকৃত মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা।

সর্বশেষ