মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

আন্তর্জাতিক অবহেলায় সমুদ্রেই ডুবে গেল ৪২৭ রোহিঙ্গা মুসলিমের জীবন

রোহিঙ্গা সংকটে বাড়ছে হতাশা, কমছে সহায়তা
আন্তর্জাতিক অবহেলায় সমুদ্রেই ডুবে গেল ৪২৭ রোহিঙ্গা মুসলিমের জীবন
আন্তর্জাতিক অবহেলায় সমুদ্রেই ডুবে গেল ৪২৭ রোহিঙ্গা মুসলিমের জীবন

চলমান মানবিক সংকট, নিরাপত্তাহীনতা ও ভবিষ্যৎহীন জীবনের হতাশা—এই তিনে পিষ্ট হয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আবারও প্রাণঘাতী সমুদ্রপথে যাত্রা করতে বাধ্য হচ্ছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (UNHCR) গতকাল জানায়, এ বছরের মে মাসে বঙ্গোপসাগরে দুটি নৌকাডুবির ঘটনায় প্রায় ৪২৭ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রাণ হারিয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

গত ৯ ও ১০ মে, বাংলাদেশে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রওনা হয় দুটি নৌকা। তাতে মোট ৫১৪ জন রোহিঙ্গা ছিলেন। গন্তব্য ছিল মালয়েশিয়া কিংবা ইন্দোনেশিয়া। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বঙ্গোপসাগরেই ডুবে যায় নৌকা দুটি। এখন পর্যন্ত কেবল ৮৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

UNHCR বলছে, নিখোঁজ ৪২৭ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা এই ঘটনাকে ২০২৫ সালের শুরু থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ সমুদ্রদুর্যোগে পরিণত করেছে।

বর্ষার মৌসুমে উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা রোহিঙ্গাদের দুর্দশার প্রকট প্রমাণ। UNHCR-এর ভাষায়, এটি শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং গোটা বিশ্বের জন্য একটি মানবিক ও নৈতিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।

রোহিঙ্গা সংকট এখন আরও জটিল হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক সহায়তার টানাপোড়েনে। UNHCR জানিয়েছে, ২০২৫ সালের জন্য তারা যে ৩৮৩ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা চেয়েছিল, এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০ শতাংশ অর্থ পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপদ আশ্রয়ের মতো মৌলিক চাহিদা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে রোহিঙ্গারা।

সংস্থাটির এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক হাই কিয়োং জুন বলেন, ‘অর্থায়নের অভাবে রোহিঙ্গারা চরম সংকটে পড়েছে। তারা নিরাপদ আশ্রয় পাচ্ছে না, পাচ্ছে না শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবা—ফলে অনিরাপদ পথে ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছে।’

এই পরিস্থিতিতে UNHCR আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জরুরি আহ্বান জানিয়েছে—বাংলাদেশসহ আশ্রয়দানকারী দেশগুলোর রোহিঙ্গাদের জন্য টেকসই, অবিচ্ছিন্ন ও মর্যাদাপূর্ণ সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষায় আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র UNHCR-কে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিলেও ২০২৫ সালে সেই সহায়তা কমে যাওয়ায় উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

আজকের বাস্তবতায় রোহিঙ্গাদের জন্য সমুদ্র আর কেবল গন্তব্যের পথ নয়—এটা যেন হয়ে উঠেছে এক হতাশার কবরস্থান। এই সংকট কেবল একটি মানবিক বিপর্যয় নয়, বরং এটি একটি নৈতিক পরীক্ষাও। প্রশ্ন হচ্ছে—বিশ্ব কি মুখ ফিরিয়ে থাকবে, না কি এগিয়ে এসে এই নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াবে?

সর্বশেষ