মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

উত্তর-পূর্ব সিরিয়া থেকে দামেস্কে তেল সরবরাহ শুরু

উত্তর-পূর্ব সিরিয়া থেকে দামেস্কে তেল সরবরাহ শুরু
উত্তর-পূর্ব সিরিয়া থেকে দামেস্কে তেল সরবরাহ শুরু। ছবি : আল জাজিরা

উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার কুর্দি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলো দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তেল সরবরাহ শুরু করেছে। আজ শনিবার সিরিয়ার তেল মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আহমদ সুলাইমান রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, হাসাকা ও দেইর আজ-জোর প্রদেশের তেলক্ষেত্র থেকে তেল সরবরাহ করা হয়েছে। তবে কী পরিমাণ তেল পাঠানো হয়েছে বা চুক্তির শর্ত কী, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি। এটি নতুন সরকারের কাছে উত্তর-পূর্ব সিরিয়া থেকে প্রথমবারের মতো তেল সরবরাহের ঘটনা।

সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) দামেস্কের নতুন সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসেছে, যার মূল লক্ষ্য একটি সমঝোতার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের অধীনে একীভূত হওয়া।

এসডিএফ জানিয়েছে, তারা সম্প্রতি উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার স্বশাসিত প্রশাসন ও তাদের রাজনৈতিক শাখা সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক কাউন্সিলের (এসডিসি) সঙ্গে বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে দামেস্কের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। এছাড়া, এসডিএফ বাহিনীকে সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে একীভূত করা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় সক্রিয় করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

সিরিয়ার জ্বালানি খাতে আরোপিত কিছু নিষেধাজ্ঞা সম্প্রতি শিথিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ছয় মাসের জন্য এই সুবিধা দেওয়া হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নও জ্বালানি, পরিবহন ও পুনর্গঠনের সঙ্গে সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা স্থগিতের পরিকল্পনা করছে।

বাণিজ্য সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, দামেস্ক সরকার স্থানীয় মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে তেল আমদানির চেষ্টা করছে। তবে আসাদ সরকারের পতনের পর যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল, তা বড় ব্যবসায়ীদের তেমন আগ্রহ পায়নি। নিষেধাজ্ঞা ও আর্থিক ঝুঁকির কারণেই তারা সরাসরি যুক্ত হতে চায়নি।

এসডিএফ ও দামেস্ক প্রশাসনের আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় অভ্যন্তরীণ তেল বাণিজ্য। দামেস্ক সরকার চায় দেশটির সব অঞ্চলকে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের অধীনে আনতে।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, চুক্তির আওতায় এসডিএফকে তেলের রাজস্বের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে হতে পারে। এসডিএফের কমান্ডার মাজলুম আবদি সম্প্রতি জানিয়েছেন, তারা নতুন প্রশাসনের কাছে তেলের দায়িত্ব হস্তান্তর করতে রাজি, তবে শর্ত একটাই—দেশের সব অঞ্চলে ন্যায্যভাবে এর রাজস্ব বণ্টন করতে হবে।

সিরিয়ার নতুন সরকার তেলক্ষেত্র পুনর্গঠনের বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এবং আগের উৎপাদন সক্ষমতায় ফিরে যাওয়াই তাদের লক্ষ্য।

একসময় সিরিয়া ছিল তেল রপ্তানিকারক দেশ। নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত তেল রপ্তানির মাধ্যমে দেশটি বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করত।

ওপেকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে সিরিয়া দৈনিক ৩ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন করত। এর মধ্যে ২ লাখ ৩৮ হাজার ব্যারেল দেশেই পরিশোধন করা হতো, আর বাকি অংশ রপ্তানি করে বছরে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার আয় করত।

তবে ২০১২ সালের পর থেকে উৎপাদন কমে দৈনিক ১ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেলে নেমে আসে। এটিই আসাদ সরকারের প্রকাশিত সর্বশেষ সরকারি পরিসংখ্যান। দেশটির দৈনিক চাহিদা প্রায় ২ লাখ ব্যারেল।

২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, সিরিয়ার প্রমাণিত তেল মজুত ছিল ২.৫ বিলিয়ন ব্যারেল। ভূমধ্যসাগর উপকূলে অবস্থিত তারতুস, লাতাকিয়া ও বানিয়াস—এই তিনটি প্রধান বন্দর থেকে দেশটি তেল আমদানি ও রপ্তানি করে থাকে।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা