মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

ইসরায়েল কীভাবে পশ্চিম তীর দখল করার পরিকল্পনা করছে?

ইসরায়েল কীভাবে পশ্চিম তীর দখল করার পরিকল্পনা করছে?
ইসরায়েল কীভাবে পশ্চিম তীর দখল করার পরিকল্পনা করছে? ছবি : এএফপি

ইসরায়েল দখলকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে বসতি সম্প্রসারণের কার্যক্রম আরও তীব্র করেছে। ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার (পিএলও) আলোচনাবিষয়ক বিভাগের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ফিলিস্তিনি ভূমি দখলের লক্ষ্যে ইসরায়েল দ্রুতগতিতে নতুন বসতি স্থাপন করছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে পশ্চিম তীরে প্রায় ৭,৪০,০০০ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী বসবাস করছে, যার মধ্যে ২,৪০,০০০ জন রয়েছে পূর্ব জেরুজালেমে।

ইসরায়েল এমন কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যা দখলকৃত অঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী করবে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ‘সি’, যা পশ্চিম তীরের ৬০% জুড়ে বিস্তৃত এবং যেখানে ইসরায়েল সম্পূর্ণ সামরিক ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে।

এছাড়া, ইসরায়েলি সরকার সামরিক প্রশাসনের ক্ষমতা সরিয়ে এটিকে বেসামরিক প্রশাসনের হাতে দিচ্ছে, যা কট্টর ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচের অধীনে থাকবে। স্মোত্রিচ প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি এলাকা ‘সি’ আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের অংশ করতে চান।

২০২৪ সালে, ইসরায়েল ২৭,৫৮৯টি নতুন আবাসিক ইউনিট নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে—

  • ৯,৪২১টি ইউনিট পশ্চিম তীরে
  • ১৮,৩৫৮টি ইউনিট পূর্ব জেরুজালেমে

এছাড়া, সম্প্রতি ইসরায়েল ২৪,১৯৩ দুনম (প্রায় ৬,০০০ একর) ফিলিস্তিনি জমি ‘রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এটি ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির পর থেকে সবচেয়ে বড় ভূমি দখলের ঘটনা।

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালে কমপক্ষে ২,২২৪টি হামলার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে—

  • হত্যাকাণ্ড
  • শারীরিক নির্যাতন
  • ফসল ও জমি পুড়িয়ে দেওয়া
  • সম্পত্তি ধ্বংস করা

ইসরায়েলি বাহিনী ১,৭৪৫টি ফিলিস্তিনি স্থাপনা ধ্বংস করেছে, যার মধ্যে ৭৫০টি আবাসিক বাড়ি। এর ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক আইনে দখলকৃত অঞ্চলে বসতি স্থাপন সম্পূর্ণ অবৈধ। হেগ কনভেনশন অনুসারে, দখলদার কোনো শক্তির পক্ষে দখলকৃত অঞ্চলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করা নিষিদ্ধ।

জাতিসংঘ বারবার ইসরায়েলের এসব কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বলেছে এটি দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনা নষ্ট করছে।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) এক পরামর্শমূলক রায়ে জানায় ইসরায়েলের বসতিগুলো অবৈধ এবং সেগুলো অবিলম্বে অপসারণ করা উচিত।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, যেখানে ইসরায়েলকে ১২ মাসের মধ্যে দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

তবে, ইসরায়েল এখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এসব সিদ্ধান্ত মানতে কোনো আগ্রহ দেখায়নি।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা