গাজা থেকে ইসরায়েলি বন্দিদের হস্তান্তরের সময় হামাসের সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেড কয়েকটি ব্যানার উন্মোচন করে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা দখল ও ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের পরিকল্পনার বিরোধিতা প্রকাশ করা হয়।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির কাছে তিনজন ইসরায়েলি বন্দি হস্তান্তরের সময় এই ব্যানারগুলো প্রধান মঞ্চে টাঙানো হয়। ব্যানারগুলোতে ‘জেরুজালেম ছাড়া আর কোনো হিজরত নয়’ ও ‘প্রতিরোধই ফিলিস্তিন মুক্তির পথ’—এমন বার্তা লেখা ছিল।
ব্যানারগুলোতে স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ ও ভূমি দখলের পরিকল্পনার বিরোধিতা করা হয়। ট্রাম্প গত ৪ ফেব্রুয়ারি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে গাজা দখলের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন, যা বাস্তবায়নের আগে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের কথা বলা হয়।
এর আগে, ২৫ জানুয়ারি ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের জর্ডান ও মিসরের মতো প্রতিবেশী দেশে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। তবে এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে জর্ডান ও মিসরসহ বিভিন্ন আরব দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অবস্থান নেয়।
মঞ্চে টাঙানো ব্যানারগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল—‘আমরা সৈনিক, জেরুজালেম! তুমি সাক্ষী থাকো’। এটি আরবি, ইংরেজি ও হিব্রু ভাষায় লেখা হয়।
ব্যানারটিতে ফিলিস্তিন, মিসর, জর্ডান, লেবানন, আলজেরিয়া ও সৌদি আরবের পতাকা ছিল, যা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ফিলিস্তিন প্রশ্নে অবস্থানকে নির্দেশ করে। ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনিদের মিসর ও জর্ডানে পাঠানোর কথা বলা হলেও এসব দেশ এর ঘোর বিরোধিতা করেছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, লেবাননকে গাজার প্রতিরোধ সংগ্রামের অন্যতম সমর্থক ফ্রন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সৌদি আরব তার নীতিগত অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে নেতানিয়াহুর বক্তব্যে ‘কঠোরভাব’ প্রত্যাখ্যান করেছে, যেখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পরিবর্তে সৌদি ভূমিতে তা প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল।
এদিকে, আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আব্দুল মাজিদ তেব্বুনও ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি তার দেশের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘ফিলিস্তিনের পূর্ণ সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো স্বাভাবিক সম্পর্ক নয়।’
মঞ্চে আরও একটি ব্যানারে লেখা ছিল—‘জেরুজালেম ছাড়া আর কোনো হিজরত নয়’, যা আরবি, ইংরেজি ও হিব্রু ভাষায় লেখা হয়।
এর সঙ্গে ছিল হামাসের সাবেক রাজনৈতিক প্রধান ইয়াহইয়া সিনওয়ারের একটি ছবি, যেখানে তিনি গাজার তেল আস-সুলতান এলাকায় সংঘর্ষের সময় শহিদ হন। এছাড়া আরেকটি ব্যানারে লেখা ছিল—‘সূর্যের রশ্মির মতো আমরা পার হয়েছি’, যেখানে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ‘তুফানুল আকসা’ অভিযানে কাসসাম ব্রিগেডের যোদ্ধাদের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত ইসরায়েলি স্থাপনার ছবি ছিল।
মঞ্চে আরও একটি বালিঘড়ি স্থাপন করা হয়, যেখানে লেখা ছিল—‘সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে’। এটি ইসরায়েলি সরকারের উদ্দেশে একটি বার্তা হিসেবে তুলে ধরা হয়, যা গাজায় ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান ইসরায়েলি হামলার প্রেক্ষাপটে বন্দি বিনিময় চুক্তির ভবিষ্যৎ নির্দেশ করে।
সম্প্রতি কাসসাম ব্রিগেড ঘোষণা দিয়েছে, তারা ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া স্থগিত করেছে এবং ইসরায়েলি হামলা বন্ধ না হলে প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু হবে না। হামাসও জানিয়েছে, ইসরায়েলের লঙ্ঘনের পরও তারা চুক্তির শর্ত মেনে চলবে।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনো মোবাইল হোম বা ভারী যন্ত্রপাতি প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে, জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় ৭৬৩টি ট্রাক প্রবেশ করেছে, তবে এর সুনির্দিষ্ট উপাদান সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
সূত্র: টিআরটি অ্যারাবিক