গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত বাস্তবায়ন করতে চান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। মঙ্গলবার তিনি এই প্রস্তাব ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার (ক্যাবিনেট) বৈঠকে উপস্থাপন করবেন। তবে হামাস এই শর্তগুলো প্রত্যাখ্যান করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুদ্ধবিরতির ধাপ ও নেতানিয়াহুর শর্ত
গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় ৪২ দিন মেয়াদি একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, যা তিন ধাপে পরিচালিত হবে। প্রথম ধাপের মধ্যেই দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা চলছে, যেখানে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইয়েদিয়োথ আহরোনোথ জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপে নেতানিয়াহুর তিনটি প্রধান শর্ত হলো—
১. হামাসের শীর্ষ নেতাদের গাজা থেকে বহিষ্কার।
২. সংগঠনটির সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেডকে ভেঙে দেওয়া।
৩. গাজায় বন্দি থাকা সব ইসরায়েলি নাগরিককে মুক্ত করা।
বর্তমানে গাজায় ৭৬ জন ইসরায়েলি বন্দি রয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের কারাগারে হাজারো ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছেন, যাদের অনেকে মানবেতর পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি কারাগারে দমন-পীড়নের কারণে অনেক ফিলিস্তিনি বন্দির মৃত্যু হয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, যদি হামাস এই শর্তগুলো মেনে নেয়, তাহলে আনুষ্ঠানিকভাবে গাজার যুদ্ধ শেষ হবে। তবে হামাসের পক্ষে এসব শর্ত মেনে নেওয়া কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক তার দূত স্টিভ উইটকোভের সঙ্গে এই শর্তগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তবে হামাস এই দাবি প্রত্যাখ্যান করলে নেতানিয়াহু প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। বিশ্লেষকদের মতে, তিনি এভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের শর্ত এড়ানোর চেষ্টা করছেন, যাতে ইসরায়েলকে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে বা গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে না হয়।
নেতানিয়াহু যত বেশি সংখ্যক ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্ত করতে চান, তত বেশি গাজার ওপর চাপ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। এর অংশ হিসেবে খাদ্য, পানি ও ওষুধসহ মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
গত ১৮ বছর ধরে ইসরায়েল গাজাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। চলমান যুদ্ধের ফলে ২৩ লাখ ফিলিস্তিনির মধ্যে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তারা তীব্র খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসেবা সংকটে ভুগছেন, যা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে।
ইসরায়েল কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিন, সিরিয়া ও লেবাননের কিছু ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে। পাশাপাশি, ১৯৬৭ সালের আগের সীমান্ত অনুযায়ী পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি