ইসরায়েলের হামলায় শহিদ হামাসের সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেডের উপপ্রধান মারওয়ান ঈসার জানাজা মধ্য গাজায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার, হাজারো ফিলিস্তিনির উপস্থিতিতে তাঁকে দাফন করা হয়।
গাজার শহিদ আল-আকসা হাসপাতাল থেকে তাঁর মরদেহ বের করা হলে শোকাহত জনতা শেষ বিদায় জানায়। এরপর ব্রেইজ শরণার্থী শিবিরের ক্লাবে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখান থেকে স্থানীয় কবরস্থানে তাঁকে চিরসমাহিত করা হয়। জানাজায় অংশগ্রহণকারীরা ইসরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে স্লোগান দেন এবং ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলন করেন।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধে মারওয়ান ঈসার ভূমিকা
৫৮ বছর বয়সী মারওয়ান ঈসা, হামাসের সামরিক প্রধান মোহাম্মদ দাইফের ঘনিষ্ঠ সহকারী ছিলেন। ১৯৬৫ সালে গাজায় জন্ম নেওয়া ঈসার পরিবার ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের সময় আসকালান সংলগ্ন বেইত তিমা গ্রাম থেকে বাস্তুচ্যুত হয়।
তারুণ্যে তিনি ক্রীড়াঙ্গনে সক্রিয় ছিলেন এবং ব্রেইজ শরণার্থী শিবিরের অন্যতম সেরা বাস্কেটবল খেলোয়াড় ছিলেন। ১৯৮৭ সালে ফিলিস্তিনের প্রথম ইন্তিফাদার সময় ইসরায়েলি বাহিনী তাঁকে পাঁচ বছর কারাবন্দি করে। ২০০০ সালের পর তিনি হামাসের সামরিক শাখার পুনর্গঠনে শহিদ সালাহ শেহাদার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, মারওয়ান ঈসা সাবলীলভাবে হিব্রু ভাষায় কথা বলতে পারতেন, যা তাঁকে প্রতিরোধ আন্দোলনে কৌশলগতভাবে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
কাসসাম ব্রিগেডের প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই মারওয়ান ঈসা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দীর্ঘদিন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পর, ২০১২ সালে ইসরায়েলের হামলায় শহিদ আহমদ জাবরির স্থলাভিষিক্ত হয়ে তিনি উপপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
২০২১ সালে তাঁকে হামাসের রাজনৈতিক দফতরের সদস্য নির্বাচিত করা হয়। তিনি হামাসের সামরিক ও রাজনৈতিক শাখার মধ্যে সংযোগ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে ও ইসরায়েলি বন্দিদের বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে তিনি সক্রিয় ছিলেন।
একাধিক হত্যাচেষ্টা থেকে রক্ষা, শেষ পর্যন্ত শাহাদাত
মারওয়ান ঈসা একাধিকবার ইসরায়েলের হত্যাচেষ্টা থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। ২০০৬ সালে, তিনি হামাসের সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ দাইফের সঙ্গে বৈঠকের সময় ইসরায়েলি হামলার শিকার হলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। ২০১৪ ও ২০২১ সালে তাঁর বাড়িতে বিমান হামলা চালানো হলেও তিনি প্রাণে রক্ষা পান।
তবে চলমান গাজার ওপর ইসরায়েলের বর্বর হামলায় শেষ পর্যন্ত তিনি শহিদ হন। তাঁর শাহাদাত ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগ্রামে আরও নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র: মায়াদিন