ফিলিস্তিনি ধর্মবিষয়ক ও ধর্মীয় সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ইসরায়েলি বসতিস্থাপনকারীরা আল-আকসা মসজিদে ২১ বার হামলা চালিয়েছে। একই সময়ে পশ্চিম তীরের খলিল শহরে অবস্থিত ইব্রাহিমি মসজিদে ৪৭ বার আজান দেওয়া নিষিদ্ধ করেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
রোববার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী ও চরমপন্থী বসতিস্থাপনকারীরা আল-আকসা মসজিদে হামলা এবং দখলদারিত্বমূলক কর্মকাণ্ডের মাত্রা আরও বাড়িয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ভাষায়, এসব কর্মকাণ্ড ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ, যার লক্ষ্য মসজিদের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করা।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, জানুয়ারিতে প্রতিবার হামলার সময় ইসরায়েলি বাহিনী চরমপন্থী বসতিস্থাপনকারীদের নিরাপত্তা দিয়েছে। এ ছাড়া মুসল্লিদের মসজিদে প্রবেশে নানা ধরনের বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। বিশেষ করে ফজরের নামাজের সময় মুসল্লিদের আটকানো, পরিচয়পত্র যাচাই, এবং জেরুজালেমের প্রাচীন নগরী ও আল-আকসার প্রবেশপথে তল্লাশির ঘটনা ঘটেছে।
মন্ত্রণালয় জানায়, ২০০৩ সাল থেকে ইসরায়েলি পুলিশ বসতিস্থাপনকারীদের আল-আকসা মসজিদে ঢোকার অনুমতি দিয়ে আসছে। তবে ফিলিস্তিনি ইসলামিক ওয়াকফ বিভাগ বারবার এই হামলা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের মতে, এ ধরনের হামলা মসজিদের আইনগত ও ঐতিহাসিক মর্যাদার লঙ্ঘন।
ফিলিস্তিনিরা মনে করে, ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম, আল-আকসা মসজিদসহ এর আরব-ইসলামি পরিচয় মুছে ফেলে শহরটিকে ইহুদিকরণের নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দাবি করে আসছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবও ইসরায়েলের ১৯৬৭ সালে জেরুজালেম দখল এবং ১৯৮১ সালে তা সংযুক্তির স্বীকৃতি দেয় না।
ইব্রাহিমি মসজিদে আজান নিষিদ্ধ
এদিকে পশ্চিম তীরের খলিল শহরে অবস্থিত ইব্রাহিমি মসজিদে ৪৭ বার আজান দিতে বাধা দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। ফিলিস্তিনি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতে, এই পদক্ষেপ ইব্রাহিমি মসজিদের সময় ও স্থানের ভিত্তিতে বিভাজন নীতিকে জোরদার করছে। মন্ত্রণালয়ের ভাষায়, এটি মসজিদের পবিত্রতার ওপর সরাসরি আঘাত, মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি অবমাননা এবং মসজিদের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রচেষ্টা।
খলিলের পুরোনো শহরে অবস্থিত ইব্রাহিমি মসজিদ ইসরায়েলের সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন। সেখানে প্রায় ৪০০ ইসরায়েলি বসতিস্থাপনকারী বসবাস করে এবং তাদের নিরাপত্তায় মোতায়েন রয়েছে প্রায় ১,৫০০ ইসরায়েলি সেনা।
১৯৯৪ সালে ইসরায়েলি এক চরমপন্থী বসতিস্থাপনকারী কর্তৃক সংঘটিত এক গণহত্যায় ২৯ জন মুসল্লি নিহত হওয়ার পর ইসরায়েল মসজিদটি বিভক্ত করে। বর্তমানে মসজিদের ৬৩ শতাংশ ইহুদিদের জন্য এবং ৩৭ শতাংশ মুসলমানদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি