গত ১৫ মাস ধরে ইসরায়েলের পরিচালিত ভয়াবহ হামলার কারণে গাজার স্বাস্থ্যখাত কার্যত ধ্বংস। বোমা হামলা, অবরোধ এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সরাসরি আক্রমণ গাজার স্বাস্থ্যখাতে এক নজিরবিহীন বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
স্বাস্থ্যখাতের ওপর আক্রমণ এবং তার পরিণতি
ইসরায়েলি হামলার ফলে গাজার ৩৮টি হাসপাতালের মধ্যে ৩৪টি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ধরনের হাসপাতাল রয়েছে। বর্তমানে মাত্র ৪টি হাসপাতাল সীমিত সক্ষমতায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও সেগুলোও ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে।
এছাড়া, ৮০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে। ধ্বংস হয়েছে আরও ১৬২টি চিকিৎসাকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান।
সামরিক অভিযানের সময় ইসরায়েলি বাহিনী অ্যাম্বুলেন্সকেও আক্রমণ করেছে। এতে ১৩৬টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস হয়, যা জরুরি চিকিৎসাসেবার উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।
স্বাস্থ্যকর্মীরাও এই হামলার শিকার হয়েছেন। ইসরায়েলের আক্রমণে ৩৩১ জন স্বাস্থ্যকর্মী শহিদ হয়েছেন এবং অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর ফলে গাজায় স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে গেছে।
চিকিৎসাসেবার সংকট ও আন্তর্জাতিক বাধা
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খলিল দাকরান জানান, ইসরায়েলি হামলার সময় স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রচণ্ড চাপের মধ্যে কাজ করেছেন। ‘হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি ছিল। আমরা টানা ২৪ ঘণ্টা কাজ করেছি,’।
তবে দীর্ঘদিনের অবরোধের কারণে আন্তর্জাতিক সাহায্য পেতে বাধা তৈরি হয়েছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক মেডিকেল টিমকে গাজায় প্রবেশ করতে দেয়নি। ফলে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর চাপ আরও বেড়ে যায়।
বিভিন্ন হাসপাতালের ধ্বংসযজ্ঞ
গাজার বিভিন্ন হাসপাতাল ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হয়েছে।
১. শেফা মেডিকেল কমপ্লেক্স:
গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতালটি ইসরায়েলি বাহিনী দু’বার আক্রমণ করে। প্রথম আক্রমণ হয় ২০২৩ সালের নভেম্বর এবং দ্বিতীয় আক্রমণ হয় ২০২৪ সালের মার্চে। এই হামলাগুলোতে হাসপাতালের বিভিন্ন ভবন ধ্বংস হয় এবং সেটি পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে।
২. ফ্রেন্ডস অব দ্য পেশেন্ট হাসপাতাল:
১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালটি ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এ ইসরায়েলি হামলায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।
৩. কামাল আদওয়ান হাসপাতাল:
উত্তর গাজার প্রধান এই হাসপাতাল ২০২৩ সালের ডিসেম্বর এবং ২০২৪ সালের মে মাসে আক্রমণের শিকার হয়। এরপর ডিসেম্বর ২০২৪-এ আরেক দফা আক্রমণ হাসপাতালটিকে সম্পূর্ণ অচল করে দেয়।
৪. আল-আমাল হাসপাতাল:
খান ইউনুসে অবস্থিত এই হাসপাতালটি ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মানবিক সংকট এবং ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজার স্বাস্থ্যখাত প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ এবং দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতিতে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ধীর হয়ে পড়েছে।
এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য গাজার স্বাস্থ্যখাতের পুনর্গঠন এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা অত্যন্ত জরুরি। তবে ইসরায়েলের আরোপিত অবরোধ এবং আন্তর্জাতিক মেডিকেল টিমের প্রবেশে বাধা থাকায় গাজার সংকট আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি