‘শহিদ ইয়াহইয়া সিনওয়ারের হত্যাকারী গাজা থেকে জীবিত ফিরতে পারবে না’ এমনটাই যেন ছিল কাসসাম ব্রিগেডের যোদ্ধাদের প্রতিজ্ঞা। ২০২৪ সালের ৮ অক্টোবর রাফার তেল আল সুলতান এলাকায় এক তুমুল সংঘর্ষে তাঁদের কমান্ডার ইয়াহইয়া সিনওয়ার শহিদ হন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিশেষ ইউনিট ‘ঘোস্ট’–এর সদস্যদের সঙ্গে সেই সংঘর্ষটি ছিল যেন এক মহাকাব্যিক লড়াই।
ইসরায়েলের ডানপন্থী পত্রিকা ইসরায়েল হাইয়োম জানিয়েছে, হামাস নেতা ইয়াহইয়া সিনওয়ারের হত্যাকারী ছিলেন সেনাবাহিনীর বিশেষ ইউনিটের কমান্ডার মেজর হোড শেরম্যান। সংঘর্ষের সময় শেরম্যান তার ইউনিটকে সিনওয়ার ও তাঁর দুই সহযোগীর অবস্থানরত বাড়িটি ট্যাংকের গুলিতে টার্গেট করে আঘাত হানার নির্দেশ দেন। তবে ওই অভিযানের পর শেরম্যান নিজেও গাজা থেকে জীবিত ফিরে আসতে পারেননি।
ইসরায়েল হাইয়োম-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইয়াহইয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর দুই মাস পর, ২৪ ডিসেম্বর গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া এলাকায় এক সামরিক অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মেজর হোড শেরম্যান। ঠিক সেই সময় কাসসাম ব্রিগেডের এক স্নাইপার তাকে টার্গেট করে গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই নিহত হয় শেরম্যান ও তার ইউনিটের আরেক সেনা কর্মকর্তা।

ঘটনাটি ঘটেছিল তার বিয়ের মাত্র তিন মাস পর। সেনাবাহিনীর ট্যাকটিক্যাল কমান্ড কলেজে পড়ার সময়ই পরিচয় হয়েছিল যুবাল নামের এক তরুণীর সঙ্গে, যাকে অল্প কিছুদিন আগে বিয়ে করেছিলেন মেজর হোড শেরম্যান। কিন্তু, যুদ্ধের আগুনে সেই নতুন জীবনের স্বপ্নও একসঙ্গে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
ইসরায়েল হাইয়োম পত্রিকাটি হামাস নেতা শহিদ ইয়াহইয়া সিনওয়ারের হত্যাকে ঘিরে আরও কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংঘর্ষস্থলে সিনওয়ারকে শনাক্ত করার পর ইসরায়েলি সেনারা তাঁর একটি আঙুল কেটে নেয়, যাতে আঙুলের ছাপ মিলিয়ে তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করা যায়।
অন্যদিকে ইসরায়েলি কিছু সূত্রের দাবি, সিনওয়ারের মরদেহ একটি গোপন স্থানে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে সম্ভাব্য কোনো আলোচনায় এটি দরকষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

ইয়াহইয়া সিনওয়ারকে হত্যাকারী মেজর হোড শেরম্যান । ছবি : সংগৃহীত
এরপর তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের অধীন ফরেনসিক ইনস্টিটিউটে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. চিন কুগেল নিউইয়র্ক টাইমস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, রকেট বা ট্যাংকের গোলার আঘাতে সিনওয়ারের এক হাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। রক্তপাত বন্ধ করার জন্য তিনি ঘরে পাওয়া একটি বৈদ্যুতিক তার দিয়ে নিজের হাত বেঁধে ফেলেছিলেন, যাতে লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন। তবে কিছুক্ষণ পর তাঁর মাথায় একাধিক গুলি এসে লাগে, যা সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর মৃত্যু ঘটায়।
ময়নাতদন্তে আরও জানা যায়, শাহাদাতের আগে টানা তিন দিন কিছু খাননি ইয়াহইয়া সিনওয়ার। তাঁর পেটে কেবল কয়েক কাপ কফির চিহ্ন পাওয়া গেছে। রক্ত পরীক্ষায় দেখা গেছে, শরীরে ক্যাফেইনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেশি ছিল। যার থেকে বুঝা যায় , দীর্ঘ সময় জেগে থাকার জন্য তিনি অতিরিক্ত কফি পান করতেন। তবে তাঁর শরীরে কোনো নেশাজাতীয় বা মাদকদ্রব্যের কোন চিহ্ন মেলেনি।











