মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

গাজা ফেরত ইসরায়েলি সেনাদের মানসিক বিপর্যয়, ঘুমের মধ্যেই বিছানায় মূত্রত্যাগ

সেনাবাহিনী আত্মহত্যার প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করে না। আত্মহত্যাকারী সেনাদের পরিবার সামাজিক অবহেলা ও অপমানের মুখে পড়ে।
গাজা ফেরত ইসরায়েলি সেনাদের মানসিক বিপর্যয়, ঘুমের ঘোরে বিছানায় মূত্রত্যাগ
এক সহকর্মীর মৃত্যুর শোকে আহাজারি করছেন ইসরায়েলি সেনারা। ছবি : রয়টার্স

গাজা যুদ্ধ থেকে ফেরত আসা ইসরায়েলি সেনাদের মানসিক অবস্থা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছে দেশটির দুটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা। তারা অভিযোগ তুলেছে, রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব সৈন্যদের ‘অবিরাম যুদ্ধে’ ঠেলে দিয়ে তাঁদের মানসিক, নৈতিক ও শারীরিক ক্ষতি নিয়ে উদাসীন থেকেছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াই-নেট-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সাংবাদিক আইনাভ সামরিক প্রতিবেদক ইউআভ জেইতুনের তথ্য উদ্ধৃত করে জানান, ২০২৫ সালের শুরু থেকে সেনাবাহিনীতে আত্মহত্যার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। সামরিক রেডিও গালৎসাহাল-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত ১৯ জন সেনা আত্মহত্যা করেছেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই সংকট নিয়ে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা বিভাগে তীব্র বিতর্ক চলছে। তবে এটিকে ‘পরিচয় সংকট’ বলে চিহ্নিত করে মূল সমস্যাকে আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

পশ্চিমা সামরিক মনোবিজ্ঞানে এ ধরনের মানসিক অবস্থা পরিচিত ‘নৈতিক ক্ষতি’ বা ‘আত্মিক আঘাত’ (Moral Injury) নামে—যখন কেউ এমন কিছু করতে বাধ্য হন, যা তাঁর মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এই প্রেক্ষাপটে প্রতিবেদক ব্যঙ্গ করে বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে ‘নৈতিক’ বাহিনী কি ‘নৈতিক ক্ষতির’ কথা স্বীকার করতে পারে? তাই ভাষাকে নরম করা হচ্ছে: ‘সেনাপতি দেরি করেন না, শুধু হোঁচট খান’; ‘তদন্ত উপেক্ষা করা হয় না, শুধু পিছিয়ে দেওয়া হয়’; আর ‘সেনারা ভেঙে পড়েন না, বরং কেবল ‘অস্থায়ী পরিচয় সংকটের’ ভেতর দিয়ে যান’।

গাজা থেকে ফিরে আসা সেনাদের মানসিক যন্ত্রণা তুলে ধরেন এক ইসরায়েলি লেখক। তার ভাষায়, রাতে দুঃস্বপ্নে তাদের বিছানা ভিজে যায়। অর্থাৎ অনেকে মানসিক আঘাতের কারণে ঘুমের মধ্যে অনিচ্ছাকৃত মূত্রত্যাগে ভুগছেন।

এমনকি যারা এই যুদ্ধকে ন্যায্য মনে করেন, তারাও যুদ্ধে এমন দৃশ্যের মুখোমুখি হচ্ছেন যা তাদের মানসিক অবস্থাকে ভেঙে দিচ্ছে। ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে গভীর হতাশা, আত্মবিশ্বাসে ভাঙন।

এই সংকটের দায় রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও গণমাধ্যমের ওপর চাপিয়েছেন লেখক। তার মতে, পদক ও উৎসাহমূলক ভাষণ দিয়ে সেনাদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করা হলেও যুদ্ধ শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে এক ভয়াবহ মানসিক যুদ্ধে, যেখানে তারা একেবারে একা।

মধ্যপ্রাচ্য

লেখিকা শির-লি গোলান এই পরিস্থিতিকে ‘সংবেদনশীল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তার মতে, যারা শারীরিকভাবে আহত হননি, তারাও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে গভীর মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন।

তিনি লিখেছেন, চাইলেই চোখ বন্ধ রাখা যায়। আর যারা মুখ খুলছেন, তাদের দোষারোপ করা যায় বলা যায় তারা সম্মুখযুদ্ধ কে ক্ষতি করছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আরও বেশি সেনা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হচ্ছেন। এক সময় তারা বুঝবেন, তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক ভয়াবহ রাশিয়ার প্রতিচ্ছবি। তখনই ভেঙে পড়বে আত্মপরিচয়ের ভিত।

সম্প্রতি একসঙ্গে চার সেনার আত্মহত্যা নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। মনোবিজ্ঞান ও আত্মহত্যা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইয়োসি লেভি-ব্লিজ বলেছেন, এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সহানুভূতি ও মানসিক সহায়তা দেওয়া জরুরি। কিন্তু বাস্তবে সেটি প্রায়শই অনুপস্থিত। তিনি এক সেনার কথা উল্লেখ করেন—যিনি আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে অনুরোধ করেছিলেন যেন তাঁকে গাজায় ফেরত না পাঠানো হয়, কিন্তু কেউ শোনেনি।

লেখিকা আরও জানান, সেনাবাহিনী আত্মহত্যার প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করে না। আত্মহত্যাকারী সেনাদের পরিবার সামাজিক অবহেলা ও অপমানের মুখে পড়ে। অনেকে তো এমনকি এই স্বীকৃতিও পায় না যে তাঁদের সন্তান কর্তব্যরত অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছে।

অন্যদিকে, সাংবাদিক গুলান লিখেছেন, যারা যুদ্ধে শারীরিকভাবে আহত হন বা প্রাণ হারান, তাদের বীর ঘোষণা করা হয়। কিন্তু যারা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হন, তাদের ত্যাগ ও কষ্টকে সমাজ তেমন গুরুত্ব দেয় না।

সর্বশেষ