মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

ইসরায়েলি বাহিনীর নেতৃত্বে ধস, নিয়োগেও সংকট তীব্র

বর্তমানে প্লাটুন কমান্ডার ও কোম্পানি ইউনিট পর্যায়ে (প্রায় ১২০–১৫০ সদস্যের সামরিক ইউনিট) প্রায় ৩০০ অফিসারের অভাব রয়েছে। সেনাবাহিনীর পূর্ণ সক্ষমতা বজায় রাখতে প্রয়োজন প্রায় ৭,৫০০ যোদ্ধা এবং ২,৫০০ সহায়ক কর্মী।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ভেতরে জনবল ঘাটতি ও নেতৃত্ব সংকট এখন আর গোপন কিছু নয়। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় চলমান যুদ্ধ, দীর্ঘমেয়াদি মোতায়েন ও মানসিক চাপের কারণে সেনাবাহিনীর যুদ্ধরত ইউনিটগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে সেনাবাহিনী নিজেরাই এ সংকটের কথা স্বীকার করেছে।

৩০০ অফিসারের ঘাটতি, দরকার কয়েক হাজার নতুন সৈন্য

ইসরায়েলের প্রভাবশালী দৈনিক মারিভ-এর সামরিক প্রতিবেদক আভি অ্যাশকেনাজির অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে প্লাটুন কমান্ডার ও কোম্পানি ইউনিট পর্যায়ে (প্রায় ১২০–১৫০ সদস্যের সামরিক ইউনিট) প্রায় ৩০০ অফিসারের অভাব রয়েছে। সেনাবাহিনীর পূর্ণ সক্ষমতা বজায় রাখতে প্রয়োজন প্রায় ৭,৫০০ যোদ্ধা এবং ২,৫০০ সহায়ক কর্মী।

সেনাবাহিনীর স্বীকারোক্তি: নেতৃত্বে ঘাটতি

প্রথমবারের মতো ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিজে থেকেই এই নেতৃত্ব সংকটের কথা অকপটে স্বীকার করেছে। অ্যাশকেনাজি জানান, সেনাবাহিনী বলেছে, ‘আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় জনবল অনেক কম।’

সেনাবাহিনীর সাবেক জেনারেল ইসহাক ব্রিক দীর্ঘদিন ধরে মারিভ-এ লেখা কলামে একই ধরনের সতর্কতা দিয়ে আসছিলেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলমান যুদ্ধের ফলে অনেক অফিসার নিহত হয়েছেন কিংবা গুরুতর আহত অবস্থায় রয়েছেন। অনেকে এখনো সেরে উঠতে পারেননি বা কাজে ফিরতে পারবেন না।

সমাধানের চেষ্টা: নতুন ব্যাটালিয়ন ও প্রশিক্ষণ

এ সংকট মোকাবিলায় সেনাবাহিনী ‘বাহাদ ১’ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে একটি নতুন ব্যাটালিয়ন গঠন করেছে, যার কাজ হলো রিজার্ভ সদস্যদের দ্রুত অফিসার হিসেবে প্রস্তুত করা। এখন পর্যন্ত দুইটি কোর্স সম্পন্ন হয়েছে, তৃতীয় কোর্স চলছে এবং চতুর্থটি শিগগিরই শুরু হবে।

প্রকৌশল ইউনিটে সংকট তীব্রতর

নেতৃত্ব সংকট সবচেয়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে প্রকৌশল ইউনিটে, বিশেষ করে সুড়ঙ্গ অভিযান ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ শাখায়। এই ইউনিটগুলোতে দক্ষ সেনাদের অফিসার প্রশিক্ষণে আগ্রহী করতে সেনাবাহিনীকে চরম বেগ পেতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে অভিজ্ঞ সার্জেন্টদের অস্থায়ীভাবে অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।

কিছু ইউনিটে এমন সদস্যকেও কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যারা প্লাটুন কমান্ড কোর্সও শেষ করেননি। এতে নেতৃত্ব কাঠামোর দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

অতিরিক্ত দায়িত্বে ক্লান্ত যোদ্ধারা

অনেক ব্যাটালিয়নের কমান্ডার ও সহকারী কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের বাইরে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কাজ করছেন। এ কারণে অনেকেই অপেক্ষাকৃত সহজ প্রশাসনিক বা প্রশিক্ষণমূলক পদে বদলির আবেদন করছেন।

একজন রিজার্ভ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার বলেন, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে আমরা প্রায় ৪০০–৪৫০ দিন রিজার্ভ ডিউটিতে আছি। অনেকেই অবসর নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু যুদ্ধে আটকে গেছেন। আমি নিজেও বেসরকারি চাকরিতে পদোন্নতির সুযোগ হারিয়েছি।

সংকটের পেছনে ইউনিট সম্প্রসারণ

অ্যাশকেনাজির মতে, এই সংকটের অন্যতম কারণ হলো যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ইউনিটগুলোর দ্রুত সম্প্রসারণ। সাঁজোয়া ইউনিটে সৈন্য সংখ্যা বেড়েছে ৩০%, প্রকৌশল ইউনিটে দ্বিগুণ, এবং পদাতিক বাহিনীতে নতুন একাধিক ইউনিট গঠন করা হয়েছে।

উত্তর সীমান্তে বাড়তি সেনা মোতায়েন এবং ‘পূর্ব ফ্রন্ট’ নামে একটি নতুন ডিভিশন গঠনের ফলে নেতৃত্ব কাঠামোর ওপর আরও চাপ তৈরি হয়েছে।

সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র দাবি করেন, স্থলবাহিনীর ইউনিটগুলো সব ফ্রন্টেই সক্রিয় এবং নিয়মিত ইউনিটে নেতৃত্ব সংকট নেই। তবে তিনি স্বীকার করেন, রিজার্ভ ইউনিটে অফিসার সংকট পুরনো সমস্যা এবং যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই এ সমস্যা মোকাবেলায় বিশেষ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু রয়েছে।

সর্বশেষ