আরাকানের মংডু শহরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ফের দমন-পীড়ন শুরু করেছে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি। শহরের বানতাউপিন গ্রাম থেকে সম্প্রতি অন্তত ১০টি রোহিঙ্গা পরিবারকে আটক করা হয়েছে। একই দিনে এক রোহিঙ্গা শিশুকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে সংগঠনটির সদস্যরা।
স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানা গেছে, ১৩ জুলাই মংডুর মধ্যাঞ্চলে অভিযান চালায় মুখোশ পরা আরাকান আর্মির সদস্যরা। সেদিন গোন না গ্রামের লাতা মহল্লায় দোকানে বসে থাকা অবস্থায় অপহরণ করা হয় রোহিঙ্গা কিশোর মোহাম্মদ হারিসকে। অপহরণের পর থেকে তার কোনো খোঁজ মেলেনি।
এর আগে ১০ জুলাই তিনজন রোহিঙ্গা শ্রমিককে আটক করে আরাকান আর্মি। তাঁরা একটি বাণিজ্যিক ভবনের নির্মাণকাজে নিয়োজিত ছিলেন। সংগঠনটি তাদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা সংগঠন ‘আরসা’র (ARSA) সদস্য হওয়ার অভিযোগ তোলে। গ্রেপ্তারের পর তাদের নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীতে মুক্তি দেওয়া হলেও তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তিনজনই মিউ-ইউ এলাকার জিনতুলা গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয়রা বলছেন, চলতি বছরের জুন থেকে ধারাবাহিকভাবে রোহিঙ্গাদের গ্রেপ্তার করছে আরাকান আর্মি। মাসের প্রথম সপ্তাহে দুটি, দ্বিতীয় সপ্তাহে চারটি এবং তৃতীয় সপ্তাহে আরও চারটি পরিবারকে আটক করা হয়। বর্তমানে শুধু বানতাউপিন গ্রাম থেকেই অন্তত ১০টি রোহিঙ্গা পরিবারকে আটকের তথ্য মিলেছে। এসব পরিবারে নারী ও শিশুও রয়েছে।
আটক ব্যক্তিদের অনেকেই ২০২৪ সালে আরাকান আর্মির আগের সহিংসতার সময় পালিয়ে গিয়েছিলেন। সম্প্রতি নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে গ্রামে ফিরে এলেও ফের নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, অন্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষরা ফিরলেও তাদের হয়রানি করা হচ্ছে না; শুধু রোহিঙ্গাদেরই টার্গেট করা হচ্ছে।
এদিকে, সম্প্রতি আরাকান আর্মি স্থানীয় গ্রামপ্রধানদের নির্দেশ দিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ফিরে আসা প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্যসংখ্যা, বর্তমান ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে তাদের আঞ্চলিক দপ্তরে জমা দিতে হবে।
২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের মাত্রা বেড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর ভুয়া অভিযোগে সিলগালা করে দখল নিচ্ছে সংগঠনটি। অনেক পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে জীবন কাটাচ্ছে। মূল্যবান সম্পদও জব্দ করে নেওয়া হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের চলাচলের ওপর আরোপ করা হয়েছে কঠোর নিয়ন্ত্রণ। প্রতিটি গ্রামের চারপাশে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতায়াত করতে হলে এসব চেকপোস্ট অতিক্রম করতে হয়। এমনকি সেতু পার হতে গেলেও দিতে হচ্ছে টাকা। পথচারী ও মোটরসাইকেলচালকদের কাছ থেকে জোর করে ‘ফি’ আদায় করা হচ্ছে।
সূত্র: এএনএ