মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

দিল্লিতে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান

ভারতে কি এখন বাংলা ভাষায় কথা বলাই অপরাধ? বাংলা ভাষাভাষী মুসলমান মানেই কি এখন অপরাধী?
দিল্লিতে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান। ছবি : প্রতিকী

দিল্লিতে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ চিহ্নিত করার নামে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের টার্গেট করছে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো—এমন অভিযোগ তুলেছে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি। দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, এই অভিযানে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।

কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে লেখা এক চিঠিতে সিপিআই(এম) নেত্রী বৃন্দা কারাত ও অনুরাগ সাক্সেনা অভিযোগ করেন, এই অভিযানের নামে বর্ণবৈষম্যমূলক প্রোফাইল তৈরি করা হচ্ছে। ঘটছে বেআইনি আটক, হয়রানি, চাঁদাবাজি ও বাংলাদেশে পুশ-ইনের মতো ঘটনা।

নেতাদের দাবি, সন্দেহভাজন ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। এটা সংবিধানবিরোধী এবং মানবাধিকারের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন তাঁরা।

 দলীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে সম্প্রতি দিল্লির বাওয়ানা জেজে কলোনি পরিদর্শন করেন বৃন্দা কারাত ও অনুরাগ সাক্সেনা। ফিরে এসে তাঁরা জানান, ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা শুনে তাঁরা বিস্মিত ও মর্মাহত। এলাকায় পুলিশের হাতে নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের একাধিক অভিযোগ নথিভুক্ত করেছেন তাঁরা।

অমিত শাহকে পাঠানো চিঠিতে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, ‘ভারতে কি এখন বাংলা ভাষায় কথা বলাই অপরাধ? বাংলা ভাষাভাষী মুসলমান মানেই কি এখন অপরাধী?’

চিঠিতে তাঁরা বাওয়ানার এক হৃদয়বিদারক ঘটনার কথাও তুলে ধরেন। ২০০৪ সাল থেকে ওই এলাকায় বসবাস করছেন মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন। তাঁর বৈধ জমির কাগজপত্রও রয়েছে। ৫ জুলাই পুলিশ অভিযোগ তোলে, তিনি নাকি একজন বাংলাদেশিকে আশ্রয় দিয়েছেন। নিজামউদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করলে পরদিন পুলিশ আবার আসে, তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে টেনে নিয়ে যায় এবং হেফাজতে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে।

মধ্যপ্রাচ্য

নিজামউদ্দিনের মেয়ে শবনম পরিবারের ভারতীয় নাগরিকত্বের কাগজ ও ঝাড়খণ্ড থেকে আসার প্রমাণ দেখালেও পুলিশ তাতে কর্ণপাত করেনি। আটক করা হয় পরিবারের সব সদস্যকে, এমনকি ৮ ও ১১ বছর বয়সী দুই শিশুকেও। তাঁদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগও তুলেছে পরিবারটি।

সিপিআই(এম) নেতারা বলছেন, এই ধরনের অভিযান শুধু বেআইনি নয়, বরং সাংবিধানিক অধিকার ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনও। একে অবৈধ, বৈষম্যমূলক ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলেও মন্তব্য করেছে দলটি।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ভাষা ও ধর্মের ভিত্তিতে প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের টার্গেট করা হচ্ছে।’ সিপিআই(এম) অবিলম্বে এই ধরপাকড় বন্ধ, দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ এবং সংবিধান অনুযায়ী যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের দাবি জানিয়েছে।

চিঠিটি সামনে আসার পর মানবাধিকার সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, এই অভিযান ভাষা ও ধর্মের ভিত্তিতে প্রোফাইল তৈরির আরও গভীর প্রবণতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ভুক্তভোগী এক পরিবারের আইনজীবী বলেন, ‘এটা একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত—যেখানে শুধু ভাষা, ধর্ম কিংবা দারিদ্র্যের কারণে কারও নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।’

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে সিপিআই(এম) নেত্রী বৃন্দা কারাত বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ অত্যন্ত বিপজ্জনক নজির তৈরি করছে। তাঁর ভাষায়, ‘এটা কোনো একক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত নিপীড়নের চিত্র। এর মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়াও ভেঙে পড়ছে। এখনই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া জরুরি।’

সর্বশেষ