জ্ঞান ও জাতীয় পরিচয়ের এক প্রাণবন্ত উৎসব হিসেবে সোমবার আফগানিস্তানের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কাবুল বইমেলার উদ্বোধন করেছে। দেশের সর্বত্র পাঠাভ্যাসের গুরুত্ব তুলে ধরা এবং শিক্ষার সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করাই এই উৎসবের মূল লক্ষ্য।
তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের শিল্প ও সংস্কৃতি উপমন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই উৎসবে লেখক, শিক্ষাবিদ, কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদল ও সংস্কৃতি অঙ্গনের ব্যক্তিত্বরা কাবুলে একত্রিত হন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে শিল্প ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপমন্ত্রী মওলভি আতিকুল্লাহ আজিজি বইকে জীবনের অপরিহার্য অংশ, বিশ্বস্ত সঙ্গী এবং সভ্যতার মাঝে সেতুবন্ধন হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘যে জাতি বই পড়ে না, তাকে পুরো ইতিহাসের ভার বহন করতে হয়।’ তিনি বলেন, জ্ঞানভিত্তিক ও শক্তিশালী সমাজ গড়তে বইয়ের কোনো বিকল্প নেই।
আজিজি জানান, মন্ত্রণালয় বইকে শুধু সাংস্কৃতিক সম্পদ নয়, বরং জাতীয় অগ্রগতি, বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ও আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার এক কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে দেখে। তিনি বলেন, বই প্রকাশ, অনুবাদ, মুদ্রণ, সংরক্ষণ ও আধুনিকায়নে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধভাবে কাজ করে যাবে।
দীর্ঘদিনের যুদ্ধ ও বিদেশি হস্তক্ষেপের কথা উল্লেখ করে আজিজি বলেন, ‘আজ যখন আমরা আবার শান্তির বাতাস পাচ্ছি, এমন সময় বই উৎসব আয়োজন করা আফগান জনগণের মর্যাদা ও সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের প্রতীক।’

অন্যদিকে প্রকাশনা উপমন্ত্রী মহাজির ফারাহি সরকারকে পাঠচর্চা বৃদ্ধিতে সক্রিয় ভূমিকার জন্য প্রশংসা করেন। তিনি জানান, দেশের ভেতরে ছাপানো বইয়ের কর মওকুফ করা হয়েছে এবং বিদেশি বইয়ের আমদানির শুল্ক ৫০% কমিয়ে আনা হয়েছে। এটি ইসলামি আমিরাতের নেতৃত্বের পক্ষ থেকে প্রকাশক ও লেখকদের প্রতি বিশেষ সহায়তা
ফারাহি বলেন, বই ও পাঠচর্চা জাতিকে উন্নত করে। তিনি আফগান শিক্ষাবিদ ও লেখকদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা যেন এমন সাহিত্য রচনা করেন যা যুব সমাজের প্রয়োজন পূরণ করে এবং আগামী প্রজন্মকে পথ দেখায়।
ফারাহি বলেন, বই ও পড়াশোনা জাতিকে এগিয়ে নেয়। তিনি আফগান শিক্ষাবিদ ও লেখকদের বললেন, যুবকদের প্রয়োজন মেটাতে এবং আগামী প্রজন্মকে সঠিক পথে নিয়ে যেতে এমন সাহিত্য রচনা করুন।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি রোজা ওতুন্নবায়েভা বলেন, ‘আজকের বিষয় খনিজ বা রাজনীতি নয়, আজকের বিষয় বই — যা একটি জাতির নির্মাণ করে।’ তিনি জানান, আফগান সমাজে পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি করতে জাতিসংঘ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা বই, হাতে তৈরি শিল্পকর্ম ও অন্যান্য সৃজনশীল প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। পাশাপাশি, সরকারি গ্রন্থাগারগুলোর বর্তমান অবস্থা এবং গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের সাফল্য নিয়ে বক্তব্য দেওয়া হয়।
সূত্র : বাখতার নিউজ