আরাকানের রাজধানী সিত্তে শহরের রোহিঙ্গা নেতারা সামরিক জান্তা সরকারের কাছে তাঁদের ঐতিহাসিক মসজিদ ‘জামেই’ শুধু পরিষ্কার করার এবং সেখানে নামাজ আদায়ের অনুমতি চেয়েছিলেন। তবে কর্তৃপক্ষ এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। এতে করে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে মসজিদটি সংস্কার ও পুনরায় খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

‘জামেই’ নামে পরিচিত মসজিদটি ১৮৫৯ সালে নির্মিত হয়। এটি নির্মাণ করেন দুই ভাই মুহাম্মদ বুখশ ও ইলাহি জান নামের এক নারী। এটি আরাকানের অন্যতম প্রাচীন ইসলামি স্থাপনা, যা ১৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে টিকে আছে। তবে ২০১২ সালে জাতিগত ও ধর্মীয় সহিংসতার পর থেকে মসজিদটি বন্ধ রয়েছে। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত কোনও সরকারই সেখানে নামাজ পড়ার অনুমতি দেয়নি।
আরাকান সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদক জানিয়েছেন, সিত্তে শহরের রোহিঙ্গারা বারবার মসজিদটি পুনরায় খুলে দেওয়া ও সংস্কারের জন্য প্রতিবছর আবেদন করেছে, কিন্তু প্রতিবারই তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ২০১২ সালে সরকার এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে। ২০১৫ সালে গণতন্ত্রপন্থী জাতীয় লীগ সরকারের আমলেও একই ঘটনা ঘটে। এমনকি ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পরও সামরিক সরকার এসব আবেদন উপেক্ষা করে যাচ্ছে, যদিও আবেদন শুধুমাত্র মসজিদ পরিষ্কার ও নামাজ আদায়ের সীমিত অনুমতির জন্যই ছিল।
দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কোনো রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় মসজিদটির কাঠামো গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনের ভেতরে গাছপালা ও লতাগুল্ম জন্মেছে, ফলে ধীরে ধীরে ফাটল তৈরি হয়ে ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। এতে করে মসজিদটি ধসে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এবং আরাকানের অন্যতম প্রাচীন ইসলামিক নিদর্শনটি হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘এই মসজিদ আমাদের সংস্কৃতি আর ইতিহাসের অংশ। আমরা চাই, যেন এটিকে সংস্কার করে সংরক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়।’
বিশ্লেষকরা মনে করেন, মসজিদটি শহরের মানুষের সংস্কৃতির একটি অংশ। তাই এটি রক্ষা করতে হলে স্থানীয় জনগণ ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে সত্যিকারের সংলাপ হওয়া খুব জরুরি।
সিত্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা তিনটি শহরের একটি। এর বাইরে তারা ১৭টি শহরের মধ্যে ১৪টির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে আরাকান আর্মির হাতে। এই সংঘাতের আগুনে সবচেয়ে বেশি পুড়তে হয়েছে রোহিঙ্গাদের। তারা উভয় পক্ষের হাতে সহিংসতা, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে। এর আগে, ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস গণহত্যা চালায়, যার ফলে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
সূত্র : এনএ