আরাকানের মংডু শহরে রোহিঙ্গা সংগঠনের কোনো তৎপরতা দেখা গেলে রোহিঙ্গা গ্রামগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির এক নতুন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (ARSA) বা রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের ( RSO) কোনো কার্যক্রম গ্রামে দেখা যায়, তাহলে সে সব গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হবে।
স্থানীয় সূত্রগুলো এএনএকে জানিয়েছে, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কমান্ডার ‘দোই লেই’ ৮ জুলাই পিয়েংবিউ গ্রামে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই হুমকি দেন।
তিনি ওই অঞ্চলের ষষ্ঠ সেক্টরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কয়েকটি গ্রামের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব গ্রামের মধ্যে ছিল: পিয়েংবিউ, কিয়াউক শিলার, পাওংজার, লাবাউজার, শোইজার, মিংগালা জি, থায়াক ওক প্রভৃতি।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে যদি ওই দুই সশস্ত্র সংগঠনের (আরসা ও আরএসও) কোনো তৎপরতা দেখা যায়, তাহলে সেসব গ্রাম পুড়িয়ে ফেলা হবে। তিনি গ্রামবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন এই দুটি সংগঠনের সঙ্গে কোনোভাবেই সহযোগিতা না করে এবং সন্দেহজনক কোনো তৎপরতা দেখলে তা আরাকান আর্মিকে জানিয়ে দেয়।
এই হুমকিগুলো এসেছে আরাকান সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ রদবদলের পর। ৬ জুলাই ‘চাউং ওয়া’ ঘাঁটি এবং অন্যান্য এলাকা থেকে কিছু মাঠ পর্যায়ের কমান্ডার ও সেনাকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর ৭ জুলাই ওই শূন্য পদগুলো পূরণে নতুন করে সেনা মোতায়েন করা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত একজনের মতে, আরাকান আর্মির কমান্ডার শুরুতে মিত্রতাপূর্ণ ভাষায় কথা বলেন। তিনি বলেন, মুসলমানসহ সকল বাসিন্দাই আরাকান জনগণের অংশ এবং এখানে কোনো বৈষম্যের স্থান নেই।
তবে পরে তিনি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘তোমরা যদি ওই দুই সশস্ত্র সংগঠনকে সহযোগিতা করো, তাহলে তোমাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।’
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, মংডুর উত্তরে রোহিঙ্গা সংগঠনগুলোর (ARSA ও RS0) তৎপরতা নিয়ে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তার কোনো মাঠপর্যায়ের প্রমাণ নেই।
তাদের মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো তথ্য ও ছবি মনগড়া ও ভুয়া। এসব মূলত চাঁদা তোলা কিংবা বাস্তুচ্যুতি-অভিযানের যৌক্তিকতা তৈরি করতে ব্যবহার করা হচ্ছে— যেমনটি অতীতে বুথিডাংয়ে ঘটেছে।
থি চাউং গ্রামের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, মংডুর রোহিঙ্গারা সবসময় হুমকির মধ্যে জীবনযাপন করছেন এবং সেখানে আদতে কোনো নিরাপত্তা নেই। আটক, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, দুর্ব্যবহার, জাতিগত বৈষম্য এবং চলাফেরার স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হওয়াসহ নানা জুলুমের শিকার তারা।
গত ৮ ডিসেম্বর আরাকান সেনাবাহিনী মংডু শহর দখল করার পর থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর নানা ধরনের নিপীড়ন করা হচ্ছে। ভুয়া মামলার মাধ্যমে তাদের ঘরবাড়ি বন্ধ করে সেসব দখলে নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মূল্যবান সম্পত্তি জব্দ করা এবং জোরপূর্বক অনেক রোহিঙ্গা পরিবার কে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে আরাকান আর্মি। গ্রামে স্বাধীন চলাফেরা বন্ধ করে দিয়েছে এবং প্রতিটি রোহিঙ্গা গ্রামের প্রবেশপথ ও বহির্গমনপথে নিরাপত্তা চেকপয়েন্ট স্থাপন করে তাদের চলাচল সীমিত করে দিয়েছে। এছাড়াও, রোহিঙ্গা পথচারী ও মোটরসাইকেল মালিকদের ওপর সেতু পারাপারের জন্য ফি আদায় করা হচ্ছে।
২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে আরাকান আর্মি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একটি সামরিক অভিযান চালিয়ে আরাকান দখলের চেষ্টা করে। মোট ১৭টি শহরের মধ্যে ১৪টিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় তারা। এই সংঘর্ষে রোহিঙ্গারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। দুই পক্ষের কাছ থেকে তারা সহিংসতা, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ও নিপীড়নের শিকার হন। এর আগেও ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা চালায়। যার ফলে এক মিলিয়ন মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
সূত্র : এএনএ











