আরাকানে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে আরাকান নিউজ এজেন্সি।
ব্যবসায়ীরা জানান, রাজ্যে যে সব খাদ্যপণ্য ও ওষুধ সরবরাহ করা হয়, তার অধিকাংশই আসে পার্শ্ববর্তী দেশ ও অঞ্চল থেকে। কিন্তু সম্প্রতি টানা ভারি বর্ষণ ও প্রবল স্রোতের কারণে এসব পণ্য পরিবহনের প্রধান সড়কগুলোর অনেক অংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে করে পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে বাজারমূল্যে।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কিছু সড়কে এখন চলাচলই বন্ধ। বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত পণ্য আনতে পারছি না, তাই বাধ্য হয়ে বিকল্প ও অনিয়মিত পথ ব্যবহার করতে হচ্ছে।’
কয়েকজন ব্যবসায়ী আরাকান সংবাদ সংস্থাকে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো পুরোপুরি মেরামত করা হলে পণ্যের দাম আবার স্বাভাবিক হতে পারে। ইতোমধ্যে কিছু এলাকায় সড়ক মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান স্থানীয়রা।
এদিকে রাজ্যজুড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। ৫০ কেজির একটি চালের বস্তা আগের ৬৫ হাজার কিয়াত (প্রায় ১৪ ডলার) থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৫ হাজার কিয়াতে (প্রায় ১৯ ডলার)। এক বস্তা ময়দার দাম ৫ হাজার ৫০০ কিয়াত (প্রায় ১.২ ডলার) থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার কিয়াতে (প্রায় ১.৫ ডলার)।
জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি আরও স্পষ্ট। সংবাদ সংস্থার তথ্যমতে, পেট্রলের দাম ৯ হাজার কিয়াত থেকে বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার ৫০০ কিয়াত, রান্নার তেল ৮ হাজার কিয়াত থেকে বেড়ে পৌঁছেছে ১২ হাজার কিয়াতে। ডিম ও মাংসের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবজির দামও সামান্য বেড়েছে।
মংডু শহরের এক নারী বলেন, ‘এইবারের দাম বৃদ্ধিই সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো। আগের মতো ধীরে ধীরে বাড়েনি।’ বুথিডংয়ের আরেক নারী বলেন, ‘বাজারে গেলেই স্পষ্ট টের পাওয়া যায়, খরচ অনেক বেশি হচ্ছে, অথচ আয় তো আগের মতোই কম।’
খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহে এখন চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আরাকানের বাসিন্দাদের। বাধ্য হয়েই তারা বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী দুর্গম পথ ব্যবহার করে এসব পণ্য সংগ্রহ করছেন।
গত ২৬ মে থেকে আরাকানে ভারি বর্ষণ শুরু হয়। মংডু শহরের রোহিঙ্গা বসতিগুলোসহ বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জুনেও বৃষ্টি থামেনি। নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন শহরে। এই দুর্যোগে দুই নারী নিহত হয়েছেন। অনেক রাস্তা পানিতে তলিয়ে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, দ্রুত সড়ক মেরামত না হলে এই সংকট আরও দীর্ঘায়িত হবে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কিছু এলাকায় ইতোমধ্যে মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।
সূত্র: আরাকান নিউজ এজেন্সি