আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসের আইসিজা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি ফিলিস্তিনি পরিবারকে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আটক রাখার পর জোর করে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানবিক মর্যাদার পরিপন্থী আচরণ বলে বর্ণনা করেছেন ভুক্তভোগীরা। খবর স্থানীয় পত্রিকা পাগিনা ১২ ও তিয়েমপো আর্জেন্টিনো-এর।
জানা গেছে, ৫ সদস্যের পরিবারটি আর্জেন্টিনার হের্তসেলিয়ায় অবস্থিত দেশটির দূতাবাস থেকে ইস্যুকৃত বৈধ ভ্রমণ ভিসা, আমন্ত্রণপত্র, চিকিৎসা বীমা, হোটেল বুকিং এবং ফিরতি টিকিটসহ সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়েই দেশটিতে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। তবুও বিমানবন্দরের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ তাদের আটক রাখে এবং শেষ পর্যন্ত জোরপূর্বক বহিষ্কার করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবারটি পশ্চিম তীর থেকে জর্ডান, সেখান থেকে তুরস্ক ও ব্রাজিল হয়ে গত ১৬ জুন বুয়েনস আইরেসে পৌঁছায়। বিমানবন্দরে তাদের এমন কিছু নথিতে স্বাক্ষর করানো হয়, যেগুলো ছিল সম্পূর্ণ স্প্যানিশ ভাষায় লেখা। পরিবারটির অভিযোগ—তারা ভাষা না বুঝেই স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। পরে জানতে পারেন, ওই নথিতে উল্লেখ ছিল তারা ‘ভুয়া পর্যটক’—যার ভিত্তিতে তাদের দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
পরিবারটির দাবি, তারা অবৈধভাবে আটক ও দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন। বিমানবন্দরে তাদের সঙ্গে অমানবিক ও অবমাননাকর আচরণ করা হয়েছে এবং তাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।
ঘটনার পর আর্জেন্টিনায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের রাষ্ট্রদূত তাদের পক্ষে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করলেও তাতে কোনো ফল হয়নি। এ ঘটনার পর একজন আর্জেন্টাইন আইনজীবী পরিবারের পক্ষে একটি ফেডারেল আদালতে আবেদন করেন। তাতে বলা হয়, এই আচরণ দেশটির সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিগুলোর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
ঘটনার প্রেক্ষাপটে আর্জেন্টিনার রাজনৈতিক অবস্থানও সামনে এসেছে। দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলে অভিবাসন নীতিতে কঠোরতা এনেছেন। তার শাসনামলে বহিষ্কারের হার বেড়েছে, বিদেশিদের নাগরিকত্ব পাওয়া কঠিন হয়েছে এবং সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ও উচ্চশিক্ষা ব্যবহারে ফি আরোপ করা হয়েছে।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে মিলে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা দেন। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর তিনি প্রকাশ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানান। একই বছর জেরুজালেম সফরে তিনি ইহুদি উপাসনার টুপি পরে পশ্চিম প্রাচীর এলাকায় উগ্রপন্থী ইহুদি বসতকারীদের সঙ্গে নৃত্যে অংশ নেন। ওই সময় ওই দলটি আল–আকসা মসজিদের আশপাশে ঘুরে বেড়ায় এবং উসকানিমূলক স্লোগান দেয়, যা ফিলিস্তিনিদের কাছে অত্যন্ত অপমানজনক ও বিভ্রান্তিকর বলে মনে করা হয়।
সূত্র: আল–জাজিরা ও বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম











