ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে স্পেন সরকার বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটি ইসরায়েলের সঙ্গে ৩২৭ মিলিয়ন ডলারের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয় চুক্তি স্থগিত করেছে, যা ছিল তাদের মধ্যে সামরিক সহযোগিতার অন্যতম বড় উদাহরণ।
স্পেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘স্পাইক’ নামে অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের এই চুক্তিটি সম্পাদিত হয়েছিল ইসরায়েলি কোম্পানি রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস-এর স্পেন শাখা ‘প্যাপ টেকনোস’-এর সঙ্গে। চুক্তি অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরে স্পেনের স্থল ও নৌবাহিনীর জন্য সরবরাহ করা হতো প্রায় ১,৭০০টি ক্ষেপণাস্ত্র, যার মূল্য আনুমানিক ২৮৭ মিলিয়ন ইউরো বা ৩২৬.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সরকার জানায়, তারা ইতোমধ্যেই ওই কোম্পানির স্পেনে কার্যক্রম পরিচালনার লাইসেন্স বাতিল করেছে এবং বিকল্প সরবরাহকারীদের খুঁজতে শুরু করেছে। তবে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—ইসরায়েল এখন সেই তালিকায় নেই।
সরকারি সূত্রগুলো আল-জাজিরাকে নিশ্চিত করেছে, মাদ্রিদ কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের অস্ত্র আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে। যদিও সাইবার নিরাপত্তা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো কৌশলগত খাতে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে এখনও কিছু জটিলতা রয়েছে।
এরই মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যার মাধ্যমে ইসরায়েলের ওপর প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা নির্ভরতা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হবে। এ পরিকল্পনার নাম ‘টেকনোলজিক্যাল ও সিকিউরিটি ডিসএঙ্গেজমেন্ট’।
স্পেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আমপ্যারো ফালকার্সি বলেন, আমরা এমন একটি কাঠামো গড়ে তুলতে চাই, যাতে ভবিষ্যতে আমাদের কোনো সামরিক ক্ষেত্রেই ইসরায়েলের ওপর নির্ভর করতে না হয়।
উল্লেখ্য, ২০ মে স্পেনের পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়, যেখানে ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানানো হয়। প্রস্তাবটিতে গাজার ওপর চালানো ইসরায়েলি হামলাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করা হয় এবং এর ভিত্তিতেই চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত আসে।
এই চুক্তিটি প্রথম ঘোষণা করা হয়েছিল ২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর। তবে ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নারী-শিশু হতাহত হয়েছেন, নিখোঁজ রয়েছেন ১১ হাজারেরও বেশি মানুষ, আর বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েক লাখ।
স্পেন সরকার জানিয়েছে, আসন্ন দিনে পার্লামেন্টে ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্র বাণিজ্য নিষিদ্ধে একটি খসড়া আইন উত্থাপন করা হবে।
সূত্র: আল-জাজিরা ও আনাদোলু এজেন্সি
