মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

ভারত উপমহাদেশের আরেক ইসরায়েল

ভারত উপমহাদেশের আরেক ইসরায়েল
ভারত উপমহাদেশের আরেক ইসরায়েল

কাশ্মীর সংকটকে সাধারণত ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দেখা হয়, যার সূচনা ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ ভাগের পর থেকেই। তবে এই সংকটের অন্তর্নিহিত বাস্তবতা অনেক গভীর ও জটিল, এটি শুধুমাত্র ভৌগোলিক সীমান্ত বা রাজনৈতিক বিরোধ নয়, বরং একটি চরমপন্থী জাতীয়তাবাদী আদর্শ হিন্দুত্ববাদে প্রভাবিত একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ।

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি যখন কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় আসে, তখন থেকেই হিন্দুত্ববাদ রাষ্ট্রীয় নীতির কেন্দ্রে স্থান পেতে শুরু করে। বিজেপি কেবল একটি রাজনৈতিক দল নয় এটি হিন্দুত্ববাদী আদর্শের রাজনৈতিক বাহক। মোদির শাসনামলে মুসলিমসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ যেন আরও সুসংগঠিত ও বৈধ রূপ পায়। এই বৈষম্যমূলক নীতির প্রকাশ্যতা উগ্র হিন্দু গোষ্ঠীগুলোকে মুসলমানদের ওপর সহিংস আক্রমণ চালাতে উসকানি দিয়েছে, দিয়েছে একধরনের অব্যক্ত বৈধতা।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (NRC)-এর মতো উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে মুসলমানদের অস্তিত্ব ও অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। একইসাথে, কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিল করে সেখানে জনসংখ্যাগত ভারসাম্য পরিবর্তনের প্রচেষ্টা এবং বাবরি মসজিদের ধ্বংসের ঘটনাও স্পষ্ট করে দেয় হিন্দুত্ববাদ এখন শুধুমাত্র একটি মতবাদ নয়, বরং ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব, অভ্যন্তরীণ সংকট এবং উপমহাদেশজুড়ে ভূরাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াগুলোকে বিশ্লেষণ করতে গেলে হিন্দুত্ববাদের প্রভাব ও রাষ্ট্রীয় অবস্থানকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। বরং এটি একটি প্রভাবশালী ব্যাখ্যার ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করে দেয়।

এখানেই আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক সামনে আসে ভারত ও ইসরায়েলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা এবং ভারত-পাকিস্তান বিরোধে ইসরায়েলের সুস্পষ্ট পক্ষপাত। এই সম্পর্ক কেবল কৌশলগত বা সামরিক সহযোগিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং ইতিহাস এবং হিন্দুত্ববাদী আদর্শের শিকড় বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, এই মিত্রতা আদর্শগতভাবেও একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠছে।

হিন্দুত্ববাদ ও জায়োনিজম: ভারতীয় জাতীয়তাবাদের দুই ধারা

ভারতের জাতীয়তাবাদকে গভীরভাবে বোঝার জন্য এর দুটি মূলধারার দিকে নজর দেওয়া জরুরি। এই দুই ধারার মধ্যে রয়েছে দৃষ্টিভঙ্গির একটি মৌলিক বিভাজন।

প্রথমটি হলো মহাত্মা গান্ধী ও জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জাতীয়তাবাদ। এই ধারা ছিল ঔপনিবেশিক শোষণ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, এবং একইসঙ্গে এক অন্তর্ভুক্তিমূলক, বহুত্ববাদী ও গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রতিনিধিত্বকারী। এই জাতীয়তাবাদ জায়োনিজম বা ইহুদিবাদের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছিল, কারণ এটি সব ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর সহাবস্থানে বিশ্বাসী ছিল।

অপরদিকে, জাতীয়তাবাদের যে দ্বিতীয় ধারা ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তা হলো ‘হিন্দুত্ববাদ’। এর মূল চিন্তাবিদ ছিলেন বিনায়ক দামোদর সাভারকর। এই হিন্দুত্ববাদই পরবর্তীকালে মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের পেছনে একটি প্রধান প্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়।

সাভারকরের হিন্দুত্ববাদ ছিল একটি কট্টর জাতীয়তাবাদী এবং ফ্যাসিবাদী দর্শন, যা ভারতীয় পরিচয়কে হিন্দু পরিচয়ের সঙ্গে একীভূত করে দেখতে চায়। এই আদর্শ ভারতকে শুধুমাত্র ‘হিন্দুদের দেশ’ হিসেবে কল্পনা করে এবং জাতির প্রতিটি স্তরে সেই পরিচয় আরোপ করতে চায়।

১৯২৩ সালে প্রকাশিত সাভারকরের বই Essentials of Hindutva হিন্দুত্ববাদের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত। সেখানে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, হিন্দুধর্ম ও হিন্দুত্ব এক জিনিস নয়—বরং হিন্দুধর্ম হলো হিন্দুত্বের কেবল একটি উপাদান।

সাভারকরের দৃষ্টিভঙ্গিতে, হিন্দুত্ব ভারতীয় জাতির চিন্তা, বিশ্বাস, ও কার্যকলাপের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে; এটি জাতির অস্তিত্বের সর্বস্তরে একটি অভিন্ন হিন্দু জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

বিশেষভাবে লক্ষণীয়, সাভারকর শুধু হিন্দুত্ববাদের প্রবক্তা নন, বরং ইহুদিবাদ বা জায়োনিজমের এক গোপন অনুরাগীও ছিলেন। ইসরায়েলি জাতীয়তাবাদ ও তাদের রাষ্ট্র গঠনের কৌশল থেকে তিনি গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হন। তার লেখনী ও বক্তৃতায় এই প্রভাব স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

একবার তিনি জওহরলাল নেহরুর সরকারের প্রতি তীব্র সমালোচনা করে বলেন—যারা ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, তাদের উচিত বাস্তববাদী হওয়া। তার মতে, যদি আগামীকাল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে ভারতের বহু মুসলমান পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়াবে; অথচ ইসরায়েল ভারতের পক্ষে থাকবে। তাই ভারতের উচিত অবিলম্বে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া।

বিনায়ক দামোদর সাভারকার হিন্দুত্ববাদের ধারণা নির্মাণ করেছিলেন মূলত ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি একটি আদর্শগত প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে। এই ধারণা শুধু ভারতের নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতায়ও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। তাঁর লেখা Essentials of Hindutva গ্রন্থে তিনি স্পষ্টভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি নিজের বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন এবং সেইসঙ্গে হিন্দুত্ববাদের ইসলাম-সংক্রান্ত অবস্থানও ব্যাখ্যা করেছেন।

তিনি লিখেছেন:

বছর, দশক নয়, শতাব্দী পার হয়ে গেছে—আজ আর আরব শুধু আরবদের নয়। ইরান ধ্বংসপ্রাপ্ত। মিসর, সিরিয়া, আফগানিস্তান, বেলুচিস্তান ও তাতারস্থান—এই সব জাতি ও সভ্যতা ইসলামের তরবারির সামনে আত্মসমর্পণ করেছে। গ্রানাডা থেকে গজনী—সব জায়গাই তার শিকার।

হিন্দুত্ববাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হলো ‘পবিত্র ভূমি’র ধারণা, যা অনেকটা ইহুদি ধর্মের ‘প্রতিশ্রুত ভূমি’র মত। এটি সেই জায়োনিজম-এর ভাবধারার সঙ্গে মিল খুঁজে পায়, যা একটি জাতিকে তার নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের সঙ্গে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিকভাবে গভীরভাবে যুক্ত করে। সাভারকারও এমন এক ভূখণ্ডের কথা বলেন—যার পরিসীমা বর্তমান ভারতের সীমা ছাড়িয়ে হিমালয়ের দক্ষিণ, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই পুরো অঞ্চলকেই তিনি হিন্দুদের জন্য ‘পবিত্র ভূমি’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

তাঁর মতে, ভারতবর্ষ শুধু একটি রাষ্ট্র নয়, বরং হিন্দু জাতির আত্মিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। হিন্দুত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে কোন স্থান হিন্দুদের কাছে পবিত্র—তা নির্ধারিত হয় এই আদর্শের আলোকে। সাভারকার হিন্দুত্ববাদের ভিত্তি হিসেবে ছয়টি উপাদান উপস্থাপন করেন, যার মধ্যে পাঁচটিতেই তিনি স্পষ্ট করে বলেন—ভারত ছাড়া অন্য কোনো ভূখণ্ড হিন্দুদের কাছে পবিত্র হতে পারে না।

এই ‘ভারত’ বলতে তিনি বোঝান একটি বৃহত্তর ভূখণ্ড—ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও হিমালয়ের দক্ষিণাংশ। তাঁর মতে, কেউ যদি এই অঞ্চলের বাইরে অন্য কোনো দেশকে পবিত্র বলে মনে করে, তবে সে প্রকৃত ভারতীয় চেতনার ধারক নয়। এই চেতনার মূল্য কেবলমাত্র ইহুদিরাই বোঝে—এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন:

ভারতীয়দের বাইরে কেবল ইহুদিরাই আমাদের অনুভবের সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছে।

Essentials of Hindutva-তে সাভারকার সরাসরি জায়োনিজমকে সমর্থন জানান। তিনি মনে করেন, ইহুদি জাতির স্বপ্ন একদিন পূর্ণতা পেলে হিন্দুরা তাদের বন্ধুদের মতোই আনন্দিত হবে। তাঁর ভাষায়:

যেমন মোহাম্মদীয়রা মক্কা ও মদিনায় নিজেদের পবিত্র ভূমির উপর শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে, তেমনই একদিন ইহুদিরাও তাদের পবিত্র ভূমির দখল নেবে। আমরা সেই দিনটি দেখে আনন্দিত হব।

এখানেই থেমে থাকেননি সাভারকার। তিনি ভারতের ভিন্ন জাতি, ভাষা ও সংস্কৃতিকে দেশের ভবিষ্যৎ ঐক্যের জন্য এক বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর দৃষ্টিতে, একক হিন্দু জাতীয়তাবাদই ভারতের স্থায়িত্বের ভিত্তি হতে পারে।

আজকের ভারতীয় রাজনীতিতে, বিশেষ করে মোদি সরকারের অধীনে, এই হিন্দুত্ববাদী ভাবধারা আরও সুসংগঠিত ও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভারতের সঙ্গে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, আঞ্চলিক রাজনীতিতে হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থান, এবং পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ভারতের টানাপোড়েন—সবকিছুর পেছনেই সাভারকারের হিন্দুত্ববাদের ছায়া দৃশ্যমান।

এই আদর্শ শুধু অতীতের এক বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং আজকের দক্ষিণ এশীয় ভূরাজনীতির বাস্তবতায় এক গভীর ও প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে কাজ করছে।

ভারতের কট্টরপন্থী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কের ইতিহাস

১৯৫০-এর দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত ভারত ও ইসরায়েলের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ছিল বেশ শীতল এবং টানাপোড়েনপূর্ণ। যদিও ভারত ১৯৫০ সালেই ইসরায়েলকে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তবুও সেই সময়ে দুই দেশের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। ইসরায়েল তখন ভারতের মুম্বাইয়ে কেবল একটি কনস্যুলেটের মাধ্যমে উপস্থিতি বজায় রাখে। অন্যদিকে, ভারত বরাবরই আরব দেশগুলোর পক্ষে অবস্থান নেয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে—বিশেষ করে জাতিসংঘে—তাদের নীতিগুলোর প্রতি সমর্থন জানায়।

এ সম্পর্ক আরও তলানিতে ঠেকে ১৯৮০-এর দশকে, যখন ভারতে নিযুক্ত ইসরায়েলি কনসাল ইউসুফ হোসেন ভারতের আরবপ্রীতি নীতির কঠোর সমালোচনা করেন। এর পরিণতিতে ভারত সরকার তাকে ‘অবাঞ্ছিত ব্যক্তি’ ঘোষণা করে। সেই সময় ইসরায়েলি নাগরিকদের ভারতীয় ভিসা পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে—বিশেষ করে ইসরায়েলি পর্যটক ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিতে চাওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে। এই প্রেক্ষাপট উঠে আসে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১৯৮৫ সালের একটি গোপন প্রতিবেদনে, যা পরবর্তীতে হারেৎজ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

সরকারি পর্যায়ে সম্পর্ক সুগভীর না হলেও, ইসরায়েল তখন বিকল্প পথ বেছে নেয়। তারা সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে ভারতের কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে।

এই যোগাযোগের সূচনা ঘটে হিন্দু মহাসভার সঙ্গে। ১৯৭৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর, এই গোষ্ঠীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের এক মাস পর ইসরায়েলি কনস্যুলেটে দেখা দেন এক অপ্রত্যাশিত ব্যক্তি—গোপাল গোডসে, মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গোডসের ভাই। গোপাল গোডসে নিজেও হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার কারণে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং ১৯৬৫ সালে মুক্তি পান।

সেই সময় থেকেই ইসরায়েল ভারতের ডানপন্থী রাজনৈতিক দল বিজেপির (ভারতীয় জনতা পার্টি) সঙ্গেও সম্পর্ক গড়ে তুলতে থাকে। ১৯৭০-এর দশকে ইসরায়েলি কূটনীতিক এবং কনেসেট সদস্যরা বিজেপি নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেন।

এছাড়াও ইসরায়েল ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে বিজেপির আদর্শিক ভিত্তি ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ’ (RSS)-এর সঙ্গে। ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন হিন্দুত্ববাদী দর্শনে বিশ্বাসী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক শিকড় এখানেই নিহিত। শুধু মতাদর্শগত সমর্থনেই নয়, ইসরায়েল আরএসএস-সহ বিভিন্ন কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীকে আর্থিক সহায়তাও প্রদান করে।

একই সময়ে ইসরায়েল গড়ে তোলে সম্পর্ক আরও একটি প্রভাবশালী ডানপন্থী গোষ্ঠী—‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ’ (VHP)-এর সঙ্গে।

এইভাবে, নব্বইয়ের দশকের আগেই যখন ইসরায়েল ভারতের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ, তখন থেকেই তারা কৌশলগতভাবে হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করে। এই গোষ্ঠীগুলোর অনেক নীতিতেই ইসরায়েলের জায়োনিস্ট চিন্তাধারার ছাপ পাওয়া যায়।

নব্বইয়ের দশকে ভারতের অর্থনৈতিক উদারীকরণ ও বৈদেশিক নীতির পরিবর্তনের ফলে ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক ধীরে ধীরে উষ্ণ হতে থাকে। আর ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর এই সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যায়। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির ইসরায়েল সফর এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।

সর্বশেষ