সম্প্রতি ইরাকে কিছু বিয়ের চুক্তিতে অস্বাভাবিক পরিমাণ দেনমোহর নির্ধারণের ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এসব চুক্তিকে কেন্দ্র করে অর্থপাচারের আশঙ্কা করছে দেশটির বিচার বিভাগ। এ ধরনের বিয়েকে ভুয়া আখ্যা দিয়ে বিচার বিভাগ অর্থপাচার রোধে তৎপরতা শুরু করেছে।
অস্বাভাবিক হারে দেনমোহর নির্ধারণ করা বিয়ের চুক্তির আড়ালে অর্থপাচার হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে ইরাকের সর্বোচ্চ বিচার পরিষদ। গত ৪ মে দেওয়া এক নির্দেশনায় দেশের সব আদালতকে এমন চুক্তির ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়, যেসব বিয়ের চুক্তিতে অস্বাভাবিক বা অযৌক্তিক পরিমাণে দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে অর্থের উৎস যাচাই করতে হবে। কোনো বিচারক যদি দেনমোহরের অর্থের বৈধতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন বা বিয়েটিকে প্রকৃত বলে না মনে করেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে পাঠাতে হবে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ দপ্তরে।
নতুন এই নির্দেশনার আওতায় আপিল আদালত, সরকারি কৌঁসুলির দপ্তর এবং পারিবারিক আদালতগুলোকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে—যাতে বিয়ের চুক্তিকে ব্যবহার করে কেউ অর্থপাচার করতে না পারে। বিচার পরিষদ এই ধরনের দেনমোহরকে ‘অত্যুক্তি ও যুক্তিহীন’ বলে অভিহিত করেছে।
বিয়ের আড়ালে অর্থপাচারের কৌশল?
রুসাফা আপিল আদালতের উপপ্রধান বিচারক আহমদ জাসেব আল-সায়েদি আল জাজিরাকে বলেন, দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে হলে অর্থপাচার রোধে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো জরুরি।
তিনি জানান, পারিবারিক আদালতগুলোতে কিছু বিয়ের চুক্তি নজরে এসেছে যেখানে দেনমোহরের অঙ্ক প্রচলিত সামাজিক মানদণ্ডের বাইরে চলে গেছে। ভবিষ্যতে এসব চুক্তিকে আদালতের মাধ্যমে বৈধ অর্থ আদায়ের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
বিচারকের ভাষ্য, শুধু দেনমোহরের অস্বাভাবিক অঙ্ক নয়, অস্বাভাবিক মূল্যে গয়না, আসবাব, এমনকি বাড়িঘর কেনাবেচার মাধ্যমেও অর্থপাচার হচ্ছে কি না, সেটিও তদন্তের আওতায় আনা হবে।
যদি কোনো বিয়ের চুক্তিতে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়, তাহলে আদালত সংশ্লিষ্ট পক্ষকে পাঠাবে সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ দপ্তরে। সেখানে অর্থের উৎস নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত হবে।
আল-সায়েদি বলেন, ভুয়া বিয়ের চুক্তি একটি আইনি মোড়ক মাত্র, যার আড়ালে অপরাধীরা তাদের অবৈধ অর্থকে বৈধ রূপ দিতে পারে। এই প্রবণতা ঠেকাতে বিচার বিভাগ আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে।
তবে তিনি জানান, এখনো পর্যন্ত অস্বাভাবিক দেনমোহরের কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, তবে তা এখনো বড় কোনো সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি।
সামাজিক মাধ্যমেও বিতর্ক
আইনি বিশ্লেষক শিরিন জানকানা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরাকে দেনমোহরের পরিমাণ নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। কোনো কোনো বিয়ের চুক্তিতে দেনমোহরের পরিমাণ এক বিলিয়ন ইরাকি দিনার ছাড়িয়ে গেছে, যা সামাজিক ও আইনি প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
তিনি জানান, ২০১৯ সালে করবালার একটি পারিবারিক আদালতে সর্বোচ্চ দুই বিলিয়ন দিনারের দেনমোহরের একটি বিয়ের চুক্তি রেকর্ড করা হয়েছিল।
জানকানা আরও বলেন, বিচার পরিষদ বিয়ের চুক্তি যাচাইয়ের একটি নতুন ব্যবস্থা চালু করেছে যাতে অর্থপাচার ঠেকানো যায়। যদিও এখনো এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা বা বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারিত হয়নি।
তার মতে, এই নতুন ব্যবস্থায় বিয়ের প্রক্রিয়া জটিল হতে পারে। বিচারক যদি দেনমোহরের অর্থের উৎস নিয়ে সন্তুষ্ট না হন, তাহলে তারা তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন।
তিনি আরও জানান, বিচারকদের এই বিষয়ে যথেষ্ট স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে—তাঁরা চাইলে তদন্তের ব্যাপ্তি বাড়াতে বা কমাতে পারেন। কোনো দেনমোহরের উৎস যুক্তিসংগত মনে হলে আদালত সেটি অনুমোদনও করতে পারে।
জানকানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত কিছু বিয়ের প্রসঙ্গও টেনে আনেন, যেখানে প্রভাবশালী নারী বা রাজনীতিকদের বিয়েতে অস্বাভাবিক ব্যয় দেখা গেছে। এসব ঘটনাও অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
সূত্র: আল জাজিরা