দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের উপকূল ও মাওয়াসি এলাকায় ইসরায়েলি যুদ্ধজাহাজ ও ট্যাংক থেকে অব্যাহত গোলাবর্ষণ চলছে। একই সঙ্গে গাজা ও খান ইউনিস শহরের বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে। এতে কার্যত যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গাজার বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, দখলদার ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান হামলায় অন্তত ২১ জন ফিলিস্তিনি শহিদ হয়েছেন। শহিদদের মধ্যে আটজন শিশু। আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ৫০ জন।
খান ইউনিসের উত্তর-পশ্চিমে আল আমাল পাড়ার একটি আবাসিক ফ্ল্যাটে ইসরায়েলি হামলায় এক শিশুর মৃত্যুর খবর জানিয়েছে নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স। গাজার মাঝামাঝি ইয়ারমুক এলাকায় একটি বাড়িতে বিমান হামলায় আরও তিনজন শহিদ হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে একজন শিশু। পরে গাজার সাবরা পাড়ায় ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া আল বান্না পরিবারের আরও চারজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অব্যাহত গোলাবর্ষণ আর আকাশে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের উপস্থিতির কারণে উদ্ধারকর্মীরা এখনো নিখোঁজদের বের করে আনতে গুরুতর বাধার মুখে পড়ছেন।

হামাসকে সতর্কবার্তা
গাজায় ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্য যুদ্ধবিরতি ভাঙা নয়, বরং তা কার্যকর রাখা—এমনটাই দাবি করেছে এক জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি কর্মকর্তা। দেশটির চ্যানেল ১২-কে তিনি বলেন, ‘হামাসের বোঝা উচিত, যুদ্ধ আবার ফিরে আসতে পারে, এ নিয়ে তাদের ভয় পাওয়া উচিত।’
চ্যানেলটি আরও জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টারা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতিকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে এমন অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। একই সঙ্গে তাঁরা হামাসের প্রতি আরও কঠোর মার্কিন সতর্কবার্তা দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন।
অন্যদিকে, তুরস্ক গাজার ওপর ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে হামাস ও তেল আবিবের মধ্যে বিদ্যমান যুদ্ধবিরতির ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করেছে।
চলমান উত্তেজনার মধ্যে কাসসাম ব্রিগেড জানিয়েছে, খান ইউনিসের একটি সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার করা এক ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ আপাতত হস্তান্তর করা হবে না। ইসরায়েলি হামলার কারণে অনুসন্ধান, খনন ও মরদেহ উদ্ধারের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সংগঠনটি সতর্ক করে বলেছে, নতুন করে হামলা চালালে নিহত ইসরায়েলিদের মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া আরও বিলম্বিত হবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সহ-রাষ্ট্রপতি জে. ডি. ভ্যান্স বলেছেন, গাজার ভেতরে এক ইসরায়েলি সেনাকে লক্ষ্য করে হামলার পর ওয়াশিংটন ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া আশা করছে। তবে তিনি একই সঙ্গে জানান, এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বহাল আছে।
গাজায় অব্যাহত বোমাবর্ষণ আর বাড়তে থাকা হতাহতের খবরে গাজা বাসীদের মধ্যে নতুন করে শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, এই রাতই হয়তো যুদ্ধবিরতির সমাপ্তি আর আবারও যুদ্ধ ফেরার সূচনা হয়ে উঠতে পারে।
সূত্র: আল জাজিরা











