২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর, সিরিয়ার জনগণ এক নতুন ভোরে প্রবেশ করে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীরা হিমস দখলের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই রাজধানী দামেশকে প্রবেশ করে। বিদ্রোহীদের সামনে সরকারি বাহিনী উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিরোধ গড়তে ব্যর্থ হয়।
এরই মধ্যে জানা যায়, ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ একটি ছোট যাত্রীবাহী বিমানে পালিয়ে গেছেন। তার গন্তব্য নিশ্চিত করা না গেলেও রাডার থেকে হারিয়ে যাওয়া ওই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে অনেকে ধারণা করছেন। তবে রুশ গণমাধ্যম জানায়, আসাদ রুশ সামরিক ঘাঁটি হামেইমিমে আশ্রয় নিয়েছেন।
পতনের শেষ দিনগুলো
আসাদের পতনের আগেই বিদ্রোহীরা হামা শহরের কাছে পৌঁছে যায়। দামেশকের প্রবেশদ্বার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটির পতনের শঙ্কায় আসাদ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অর্জনের চেষ্টা করেন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, আসাদ তুরস্কের সমর্থন পেতে ইরাকের মাধ্যমে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের কাছে বার্তা পাঠান। তিনি আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তুরস্ক এতে আগ্রহ দেখায়নি।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তুরস্ক সফর করেন। তুরস্ক জানায়, রাজনৈতিক পরিবর্তনের নিশ্চয়তা ছাড়া বিদ্রোহীরা যুদ্ধ থামাবে না। ফলে ইরানের আসাদকে বাচানোর সব প্রচেষ্টাই শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।
অন্যদিকে লেবাননের হিজবুল্লাহ সীমিত সহায়তা দিলেও বড় পরিসরে যুদ্ধে জড়াতে অস্বীকৃতি জানায়। ইরাকের শিয়া মিলিশিয়াদের সহায়তা চাইলেও তারা কোনো সামরিক সহায়তা দিতে রাজি হয়নি।
৭ ডিসেম্বর কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইরান যুদ্ধবিরতি এবং আলোচনার প্রস্তাব দেয়। তুরস্ক জানায়, বিদ্রোহিরা কেবল রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি পেলেই অগ্রযাত্রা থামাবে।
রুশ সূত্র মতে, রাশিয়া আসাদকে দেশ ছেড়ে যাওয়ার শর্তে নিরাপত্তার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আসাদ তা প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু রুশ সমর্থন কমে যাওয়ায় দামেশকের সরকারি বাহিনী অস্ত্র ফেলে দেয় ধীরে ধীরে।
পালানোর শেষ মুহূর্ত
বিদ্রোহীদের তীব্র অগ্রগতির মধ্যেই জানা যায়, আসাদ গোপনে দেশ ছেড়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি রুশ ঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যদিকে, তার ভাই মাহের আল-আসাদ ইরাকে আশ্রয়ের চেষ্টা করছেন।
বর্তমানে রাশিয়া বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দামেশকে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। সরকারি সেবা সচল রাখতে স্থানীয় প্রশাসন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
সিরিয়ায় আসাদের যুগের সমাপ্তি একদিকে নতুন সম্ভাবনার সূচনা এবং পাশাপাশি ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার ইঙ্গিতও বহন করছে।
সূত্র : আল জাজিরা