মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

তেহরানে ইসমাইল হানিয়ার শেষ কয়েক ঘণ্টা

হানিয়া বিছানায় শুয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছিলেন রাত ১টা ৪৫ পর্যন্ত। ঠিক তখনই ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, মূহুর্তেই শহিদ হয়ে যান তিনি
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সাবেক প্রধান ইসমাইল হানিয়া।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সাবেক প্রধান ইসমাইল হানিয়া। ছবি : আনাদোলু

ইরানের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২০২৪ সালের ২৭ জুলাই তেহরানে পৌঁছান হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সাবেক প্রধান ইসমাইল হানিয়া। রাজধানীর কাছেই সা’আদাতাবাদের একটি বিশেষ অতিথিশালায় তাঁকে রাখা হয়, যা সাধারণত বিদেশি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অতিথিদের জন্য ব্যবহার করে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস।

হানিয়ার নিরাপত্তা টিম জানিয়েছিল, তাঁরা আগে থেকেই কক্ষটি আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন এবং হাতে কলমে তল্লাশি চালিয়ে নিশ্চিত হয়েছিলেন, সেখানে কোনো সন্দেহজনক কিছু নেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়, অতিথিশালার ওই চতুর্থ তলার কক্ষই হয়ে উঠেছিল হানিয়ার শাহাদাতের স্থান।

তেহরানে পৌঁছানোর পরের দুই দিন তিনি বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক কর্মসূচিতে অংশ নেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দলের চারজন সদস্য এবং ইরানি নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিনিধিরা। বাইরে অবস্থানকালে নিরাপত্তার বেষ্টনী ছিল শক্ত, আর অতিথিশালায়ও সর্বদা অন্তত একজন নিরাপত্তাকর্মী থাকতেন।

২০২৪ সালের ৩০ জুলাই, মঙ্গলবার ছিল হানিয়ার ব্যস্ততম দিন। সকালে তিনি প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এরপর ইসলামিক জিহাদের মহাসচিবকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে দেখেন ফিলিস্তিন জাদুঘর। রাতে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের দেওয়া নৈশভোজেও উপস্থিত ছিলেন তিনি।

সেদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে হানিয়া অতিথিশালায় ফেরেন। কক্ষে গিয়ে পোশাক পরিবর্তন করেন এবং নিরাপত্তা দলের কয়েকজনকে নিয়ে নামাজ আদায় করেন। এরপর হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা খালিল হাইয়া, জাহের জাবারিনসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। আলোচনায় মূলত গাজার যুদ্ধ পরিস্থিতি উঠে আসে। একই সময়ে লেবাননে এক সামরিক কমান্ডারের হত্যার খবর বৈঠকের পরিবেশকে আরও শোকাবহ করে তোলে।

রাত প্রায় একটা পর্যন্ত বৈঠক চলে। এর আগেই কিছুটা ক্লান্ত হয়ে হানিয়া সোফায় শুয়ে প্রায় ২০ মিনিট ঘুমিয়েছিলেন। পরে ঘুম ভেঙে ফের আলোচনায় যোগ দেন।

রাত একটা বাজতেই বৈঠক শেষ হয়। রাত ১টা ১০ মিনিটে হানিয়া নিজ কক্ষে প্রবেশ করেন। পাশের কক্ষে নিরাপত্তাকর্মী ওয়াসিম আবু শাবান কোরআন তিলাওয়াত শুরু করেন। নিরাপত্তা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, হানিয়া বিছানায় শুয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছিলেন রাত ১টা ৪৫ পর্যন্ত। ঠিক তখনই ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, মূহুর্তেই শহিদ হয়ে যান তিনি।

বিস্ফোরণের ধাক্কায় তাঁর শরীরের ওপরের অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়, হাতে ধরা মোবাইলটিই ছিল মূল লক্ষ্যবস্তু। পাশের কক্ষে থাকা নিরাপত্তাকর্মীও বিস্ফোরণের চাপায় ছিটকে পড়েন। তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, হামলাটি প্রায় সাত কেজি ওজনের একটি সুনির্দিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে চালানো হয়। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কোনো সাধারণ বিস্ফোরক ডিভাইস ছিল না।