মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

গাজায় প্রতিরোধের নতুন কৌশল, দিশেহারা ইসরায়েলি বাহিনী

গাজায় গেরিলা যুদ্ধ ভয়ংকর। এটা আমাদের সেনাবাহিনীর সক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমিয়ে দিচ্ছে।
গাজায় প্রতিরোধের নতুন কৌশল, দিশেহারা ইসরায়েলি বাহিনী
গাজায় প্রতিরোধের নতুন কৌশল, দিশেহারা ইসরায়েলি বাহিনী। ছবি : আল জাজিরা

গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নতুন কৌশলের মুখে চরম চাপে পড়েছে ইসরায়েলের সামরিক নেতৃত্ব। সম্প্রতি ইসরায়েলি সেনাদের অপহরণচেষ্টা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে তারা। কারণ, প্রতিরোধ যোদ্ধারা এমন এক কৌশল অবলম্বন করছে যা ইসরায়েলি বাহিনীকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে।এবং তাদের যুদ্ধপরিকল্পনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে বাধ্য করছে।

ইসরায়েলি দৈনিক ইসরায়েল হায়োম জানিয়েছে, প্রতিরোধ যোদ্ধারা এখন আত্মত্যাগে প্রস্তুত হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে সামনাসামনি সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। ইসরায়েলি নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি আরও জানায়, এই হামলাগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রাসী ও ঝুঁকিপূর্ণ।

সাম্প্রতিক অভিযানে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার শহরগুলোর অভ্যন্তরে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করছে, যাতে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের কমান্ড কেন্দ্র ঘিরে ফেলা যায়। কিন্তু এর জবাবে হামাস ও অন্যান্য প্রতিরোধ গোষ্ঠী সরাসরি হামলায় ঝাঁপিয়ে পড়ছে, যার মধ্যে রয়েছে অপহরণের মতো কৌশলও।

এরই একটি উদাহরণ ঘটেছে গত সপ্তাহে খান ইউনুসে। সেখানে প্রতিরোধ যোদ্ধারা ইসরায়েলি বাহিনীর একটি সাঁজোয়া যান লক্ষ্য করে হামলা চালায় এবং রিজার্ভ সার্জেন্ট আফরাহাম আজুলায়কে অপহরণের চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত ওই সেনাকে হত্যা করা হয়।

ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবি, এ ধরনের অপহরণচেষ্টা আরও বাড়তে পারে। তারা মনে করছে, গাজায় সেনা মোতায়েনে যে ফাঁকফোকর রয়েছে, সেটিই কাজে লাগাচ্ছে প্রতিরোধ যোদ্ধারা। এজন্য সেনাদের সর্বক্ষণ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং প্রতিটি হামলার পর তা বিশ্লেষণ করে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

তবুও নতুন এই কৌশলের মুখে ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। গাজার বাড়িঘরে অভিযান চালানো কতটা নিরাপদ—সে প্রশ্ন এখন খোদ সেনাবাহিনীর ভেতরেই উঠছে। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি অভিযানে বাড়ির ভেতরে বিস্ফোরক পেতে রাখা ছিল, যাতে বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি সেনা হতাহত হয়েছেন। এ ছাড়া সাঁজোয়া যানগুলোর সুরক্ষা নিয়েও এখন আলোচনা চলছে।

এ প্রসঙ্গে ইসরায়েলের টেলিভিশন চ্যানেল ১২-তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাবাহিনীর সাবেক অপারেশন প্রধান ইসরায়েল জিভ বলেন, গাজায় গেরিলা যুদ্ধ ভয়ংকর। এটা আমাদের সেনাবাহিনীর সক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমিয়ে দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এমন এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছি, যার কোনো সুস্পষ্ট লক্ষ্য নেই। সেনারা মাঠে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না। হামাস সুযোগ পেলে বারবার পাল্টা আঘাত হানছে। এভাবে হঠাৎ আক্রমণের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর ভেতরেই অস্থিরতা তৈরি করছে।

ইসরায়েল জিভ সতর্ক করে দেন, এই যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে—এটা এমন এক যুদ্ধ, যেখানে বিজয়ের নামে শুধু স্লোগানই শোনা যাচ্ছে, কিন্তু আসলে কোনো চূড়ান্ত ফল নেই।

চলতি বছরের মার্চ থেকে গাজায় ইসরায়েলের নতুন করে হামলা শুরুর পর এখন পর্যন্ত ৩৮ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত এবং ৯৮ জন আহত হয়েছে। পুরো বছরজুড়ে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ নিহত ও ১১৮ আহত।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে স্থল অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৪৪৪ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে ২৭৬৮ জন। তবে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর দাবি, প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি এর চেয়েও অনেক বেশি।

সর্বশেষ