মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

ইসরায়েল সফরে ইউরোপের মুসলিম প্রতিনিধি দল, বিতর্কে উত্তাল নেট দুনিয়া

আমি মক্কা-মদিনায় হজ করেছি, তারপর থেকে অনেক দিন ধরেই জেরুজালেমে আসার অপেক্ষায় ছিলাম অবশেষে আল্লাহ আমার এই আশা বাস্তবায়ন করলেন।
ইসরায়েল সফরে ইউরোপের মুসলিম প্রতিনিধি দল, বিতর্কে উত্তাল নেট দুনিয়া
ইসরায়েল সফরে ইউরোপের মুসলিম প্রতিনিধি দল, বিতর্কে উত্তাল নেট দুনিয়া। ছবি : মিডল ইস্ট আই

ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, আরবি ভাষায় জাতীয় সংগীত গাওয়া—সব মিলিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছেন ডাচ ইমাম ইউসুফ মসিবিহ। ইউরোপের মুসলিম নেতাদের একটি বিতর্কিত প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইসরায়েল সফরের জেরে তাঁকে বরখাস্ত করেছে নেদারল্যান্ডসের আলকমার শহরের বিলাল মসজিদ।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘সম্প্রতি ইমামের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে পরিচালনা পর্ষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে—তাঁকে সঙ্গে সঙ্গেই বরখাস্ত করা হলো। এখন থেকে তাঁর সঙ্গে মসজিদের কোনো সম্পর্ক নেই।’

বিতর্কিত সফর, বিতর্কিত নেতৃত্ব

ইসরায়েল সফরকারী ইউরোপীয় মুসলিম নেতাদের এই দলে ছিলেন ১৫ জন ইমাম ও ধর্মীয় ব্যক্তি। নেতৃত্বে ছিলেন ফ্রান্সের ড্রঁসি মসজিদের ইমাম হাসান চালগুমি—ইসরায়েলপন্থী অবস্থানের জন্য যিনি বহু আগেই পরিচিতি পেয়েছেন। সফরের আয়োজন করেছিল ইসরায়েল ও ইউরোপের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নমূলক সংস্থা ‘এলনেট’।

সফরকারীরা ইসরায়েলি পার্লামেন্ট ও পূর্ব জেরুজালেমের ধর্মীয় স্থান ঘুরে দেখার পাশাপাশি সাক্ষাৎ করেন প্রেসিডেন্ট ইসহাক হার্জগের সঙ্গে। সেখানে শান্তি, সংলাপ এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন হার্জগ। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই ইব্রাহিমের সন্তান। আমি বিশ্বাস করি, এই অঞ্চলের জন্য সংলাপই অগ্রগতির পথ।’

আরবি সংগীত গেয়ে বিস্ময়

সেই বৈঠকে ইমাম ইউসুফ মসিবিহ একটি গান পরিবেশন করেন, যা ইসরায়েলের জাতীয় সংগীত ‘হাতিকভা’-র একটি আরবি সংস্করণ হিসেবে পরিচিত। এই ঘটনা মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই মন্তব্য করেন—দখলদার রাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও নেতাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ মুসলিম জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।

সফরের বাকি অংশেও বিতর্ক

সফরের পরবর্তী অংশে প্রতিনিধি দলটি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আরবি মুখপাত্র অবিখাই আদরাঈয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার স্থান পরিদর্শন করবে এবং গাজায় হামাসের হাতে আটক থাকা ইসরায়েলি বেদুইন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও দেখা করবে। এ ছাড়া, তারা গোলান মালভূমির সিরীয় দ্রুজ সম্প্রদায়ের নিহত সদস্যদের স্বজনদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবে—যাঁরা হিজবুল্লাহর রকেট হামলায় প্রাণ হারান।

হার্জগের পুরোনো বক্তব্য নিয়ে ফের আলোচনা

ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট হার্জগ অতীতেও বিতর্কে জড়িয়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গাজার জনগণকে সংঘাতের জন্য ‘সম্পূর্ণ দায়ী’ বলেন তিনি। এই বক্তব্য বিশ্বজুড়ে সমালোচনার জন্ম দেয়। পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা করে, সেই বক্তব্যকেই একপ্রকার প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে।

চালগুমির নেতৃত্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া

ইমাম হাসান চালগুমি ইসরায়েলের প্রতি তাঁর অনুগত অবস্থান এই সফরেও প্রকাশ করেন। প্রেসিডেন্ট হার্জগকে তিনি বলেন, ‘৭ অক্টোবর থেকে যা চলছে, তা শুধুই হামাস হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াই নয়, এটা বরং মানবতা ও সভ্যতার বিরুদ্ধে বর্বরতার দ্বন্দ্ব। আপনি মুক্তি ও গণতন্ত্রের পক্ষে।’

চালগুমি সম্প্রতি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ফরাসি-ফিলিস্তিনি সদস্য রিমা হাসানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের অভিযোগ তুলে তাঁর নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি জানান। রিমা পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আপনি ফ্রান্সের মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব করার একেবারেই অযোগ্য।’

এই সফরকারী দলে আরও ছিলেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘ইসলামিক থিওলজি অব কাউন্টার টেররিজম’-এর প্রতিষ্ঠাতা নূর দাহরি, যিনি টাইমস অব ইসরায়েলের নিয়মিত লেখক এবং ডানপন্থী থিঙ্ক ট্যাংক হেনরি জ্যাকসন সোসাইটির সদস্য। তিনি সফরের ছবি ও বিবরণ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

তালিকায় ছিলেন ইতালির তুরিন শহরের মরক্কো বংশোদ্ভূত আলি এল-আরজাও। তিনি বলেন, আমি মক্কা-মদিনায় হজ করেছি, তারপর থেকে অনেক দিন ধরেই জেরুজালেমে আসার অপেক্ষায় ছিলাম অবশেষে আল্লাহ আমার এই আশা বাস্তবায়ন করলেন।

ইউরোপীয় মুসলিম নেতাদের এই সফরকে ঘিরে মুসলিম বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ এটিকে আন্তধর্মীয় সংলাপের ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে দেখলেও, অনেকেই মনে করছেন, এটা ইসরায়েলকে বৈধতা দেওয়ার প্রচেষ্টা। ইমাম ইউসুফ মসিবিহের বরখাস্ত—এই অসন্তোষেরই প্রতিফলন।

সর্বশেষ