মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

গাজায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে প্রতিরোধ বাহিনী, বাড়ছে হামলার তীব্রতা

গত জুন মাসেই সবচেয়ে বেশি সেনা নিহত হয়েছে। অন্তত ২০ জন। আহত হয়েছে আরও অনেকে।
গাজায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে প্রতিরোধ বাহিনী, বাড়ছে হামলার তীব্রতা
গাজায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে প্রতিরোধ বাহিনী, বাড়ছে হামলার তীব্রতা। ছবি : আল জাজিরা

উত্তর গাজার বেইত হানুনে  পরিকল্পিত ও সমন্বিত এক হামলায় পাঁচ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৪ জন। হামলাটি চালিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেড। মঙ্গলবার সকালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ তথ্য নিশ্চিত করে।

এর আগে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, হামলায় ৫ সেনা নিহত এবং ১০ জন আহত হয়েছেন। পরে সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়, আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ জনে।

সাঁজোয়া যান লক্ষ্য করে বিস্ফোরণ
ঘটনাটি ঘটে সোমবার গভীর রাতে। ইসরায়েলি সেনারা একটি সাঁজোয়া যান নিয়ে এগোচ্ছিলেন, ঠিক তখনই প্রতিরোধ যোদ্ধারা সেটিকে লক্ষ্য করে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটান। সঙ্গে সঙ্গে হামলা চলে অস্ত্রবোঝাই একটি রোবটের দিকে—যেটিকে ধ্বংস করতে ছোড়া হয় ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র।

বিস্ফোরণের পরপরই দ্রুত ঘটনাস্থলে আসে উদ্ধারকারী ইউনিট। তবে তাদের ওপরও চলে হামলা। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এই সময় আসকালান শহরের বাসিন্দারা ‘একটি বড় বিস্ফোরণের শব্দ’ শুনেছেন।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা।


প্রথমে কয়েকজন সেনাকে নিখোঁজ বলা হলেও পরে জানানো হয়, তাঁদের মরদেহ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি—তারা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ইসরায়েলি মিডিয়া এটিকে যুদ্ধ শুরুর পর সেনাবাহিনীর জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতি ও বেদনাদায়ক ঘটনা বলে অভিহিত করেছে।

নিহত সেনারা ছিলেন সেনাবাহিনীর বিশেষ প্রকৌশল ইউনিট ‘ইয়াহলোম’-এর সদস্য। এই ইউনিট গাজায় ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজে অংশ নেয় বলে জানিয়েছে আল–জাজিরার ফিলিস্তিন প্রতিনিধি নাজওয়ান সামরি।

উদ্ধারকারীরাও টার্গেটে
হামলার কৌশল ছিল বেশ জটিল ও সুপরিকল্পিত। প্রথম বিস্ফোরণে টার্গেট করা হয় একটি ট্যাংককে। এরপর পৃথক তিনটি বিস্ফোরণে আঘাত হানা হয় উদ্ধারকারী ইউনিটগুলোর ওপর। পাশাপাশি ব্যবহার করা হয় হালকা অস্ত্র। যারা প্রথম হামলায় আহত হয়েছিল, তাদের ওপরও গুলি চালানো হয়।

ঘটনার পর ইসরায়েলি হেলিকপ্টার এসে আহতদের উদ্ধার করে নেয়। আশপাশের হাসপাতালে জরুরি অবতরণের জন্য হেলিপ্যাড প্রস্তুত রাখা হয়। পুরো এলাকা ঘিরে চলে ব্যাপক গোলাগুলি।

সেনা নিখোঁজ, সামরিক যান পুড়ে ছাই
ইসরায়েলি মিডিয়ার বরাতে জানা যায়, এখনও একজন সেনার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলে পুড়ে গেছে বেশ কয়েকটি সামরিক যান। পুরো এলাকা রয়েছে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে।

আক্রান্ত সেনারা ‘নেতসাহ ইয়েহুদা’ ব্যাটালিয়নের সদস্য, যেখানে কট্টর ধর্মীয় ইহুদি (হারেদি) সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ড ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকেও অবহিত করা হয়েছে। তিনি তখন যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন।

কাসসাম ব্রিগেডের হুঁশিয়ারি
হামলার পর এক বিবৃতিতে কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবাইদা বলেন, ‘গাজায় আগ্রাসন চলতে থাকলে ইসরায়েলিদের কফিন দেখতে পাওয়া নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়াবে। আমরা তাদের সেনাবাহিনীর মর্যাদা চূর্ণ করে দেব।’


গত কয়েক সপ্তাহে গাজার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিরোধ বাহিনীর হামলার মাত্রা বেড়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর হতাহতের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানায়, গত জুন মাসেই সবচেয়ে বেশি সেনা নিহত হয়েছেন—২০ জন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে।

মাত্র ১০ দিন আগেই দক্ষিণ গাজায় এক অভিযানে এক অফিসারসহ ছয় সেনা নিহত হন। এর আগেও খান ইউনুসে এক যৌথ হামলায় নিহত হন ৪ সেনা, আহত হন ১৭ জন।

গত সপ্তাহে গাজার শুজাইয়া এলাকায় মাত্র তিন ঘণ্টার ব্যবধানে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ৯৮তম ডিভিশনের ওপর তিন দফা হামলা চালানো হয়। এতে ইলিট ইউনিট ‘ইগোজ’-এর একজন সেনা নিহত হন এবং আহত হন আরও আটজন, যাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক।

আরো পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন