মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

সৌদি-সিরিয়া সম্পর্ক একজন সাধারণ সিরিয়ানের জীবনে কী প্রভাব ফেলতে পারে?

সিরিয়াকে আরব বিশ্বের মূলধারায় ফেরানোর কূটনৈতিক উদ্যোগে নতুন গতি এসেছে। সম্প্রতি সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহানের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের অর্থনৈতিক প্রতিনিধিদল সিরিয়া সফর করেছেন। এই সফরটি প্রতীকী গণ্ডি ছাড়িয়ে বাস্তব ও কার্যকর অর্থনৈতিক ও কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে—বিশেষ করে এমন সময়ে, যখন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল হচ্ছে এবং সিরিয়া অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রাথমিক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সৌদি আরব এবং কাতার একসঙ্গে সিরিয়ার সরকারি খাত পুনর্গঠনে আর্থিক সহায়তা দেবে। ভবিষ্যতে সৌদির জ্বালানি, কৃষি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞরা সিরিয়া সফর করবেন, যাতে উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও দৃঢ় হয়।

সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসআদ আশ-শাইবানি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সৌদি বিনিয়োগ শুধু অবকাঠামো নয়, কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি করবে। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের লক্ষ্য এখন অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আব্দুল করিম আল-উমরের মতে, এটি একটি ‘ঐতিহাসিক মোড়’, যার পটভূমিতে রয়েছে সিরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের কিছু উষ্ণতা এবং নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণ। তিনি বলেন, এই নতুন সম্পর্ক শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।

আল-উমর মনে করেন, এটি মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন আঞ্চলিক ধারা গঠনের ইঙ্গিত, যেখানে আরব, তুর্কি ও সিরিয়ান পক্ষগুলো মিলিতভাবে একটি বৃহত্তর স্থিতিশীলতা গড়ে তুলতে চাচ্ছে। এর ফলে সিরিয়া একটি আঞ্চলিক সমন্বয়কেন্দ্র হিসেবে নতুন গুরুত্ব পেতে পারে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ফিরাস শাবোর মতে, সৌদি-সিরিয়া অংশীদারিত্ব একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের সূচনা করছে। তিনি মনে করেন, এই উদ্যোগ সিরিয়ার অর্থনীতিতে এক নতুন গতি আনবে এবং ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক পুনর্গঠন সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতির অংশ হতে পারে।

সৌদি আরবের অর্থনৈতিক সক্ষমতা এই উদ্যোগকে আরও বাস্তবসম্মত করে তোলে। তবে বিনিয়োগ পেতে হলে সিরিয়াকে কিছু কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে।

প্রস্তাবিত বিনিয়োগ খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো, সড়ক, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ, ওষুধ, খাদ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি। সৌদি আরবের অয়েল জায়ান্ট ‘আরামকো’ জ্বালানি অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

অর্থনীতিবিদ আসআদ আল-আশিও এই সম্পর্ককে ‘দৃঢ়, গভীর ও ক্রমবর্ধমান’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, ঋণ সহায়তা ও মানবিক সাহায্যে সৌদি আরব ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

সাধারণ মানুষের জীবনে কী পরিবর্তন আসবে?

ফিরাস শাবো বলেন, এই অংশীদারিত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এটি সরাসরি প্রভাব ফেলবে সাধারণ সিরিয়ানদের জীবনে। নতুন বিনিয়োগ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, বিদেশি মূলধন প্রবাহিত হবে এবং সেবার মান উন্নত হবে।

সৌদি আরবে সিরিয়ান শ্রমিকদের জন্য কাজের নতুন সুযোগ তৈরি হলে রেমিটেন্স বাড়বে, যা ব্যাংকিং খাত সচল করবে। SWIFT লেনদেন চালু হলে, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও সুস্থির হবে এবং বেকারত্বও হ্রাস পাবে।

তবে শাবো সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এই অগ্রগতির পথ এখনো সহজ নয়। দুর্বল প্রশাসন, দুর্নীতি ও ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবুও সৌদি সফরকে তিনি ‘কৌশলগত অগ্রগতি’ হিসেবে দেখছেন, যা দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি করছে।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক কুয়েত সফর এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর ইতিবাচক মনোভাবও দেশটির আরব বিশ্বে পুনঃসম্পৃক্তির পথকে সুগম করছে।

মোট কথা সৌদি আরব ও সিরিয়ার মধ্যে নতুন করে গড়ে ওঠা সম্পর্ক শুধু কূটনৈতিক উচ্চপর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়—এর সরাসরি প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের জীবনে। কর্মসংস্থান, উন্নত সেবা, আন্তর্জাতিক বাজারে পুনঃসম্পৃক্তি এবং পুনর্গঠন—সব মিলিয়ে এটি হতে পারে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার জন্য এক আশাব্যঞ্জক নতুন সূচনা।

সর্বশেষ