মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

রাফায় ত্রাণের লাইনে গুলি, নিহত ৪০ ফিলিস্তিনি

রাফায় ত্রাণের লাইনে গুলি, নিহত ৪০ ফিলিস্তিনি
রাফায় ত্রাণের লাইনে গুলি, নিহত ৪০ ফিলিস্তিনি

রাফা শহরে রোববার ভোরে সহায়তার আশায় জড়ো হওয়া শত শত মানুষের ওপর চালানো হয় নির্মম গুলিবর্ষণ। ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান অন্তত ৪০ জন ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি ত্রাণবাহী ট্রাকের আশায় লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তারা। হঠাৎই শুরু হয় গুলির ঝড়।

ভোর ৬টার আগেই রাফার একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে জড়ো হয়েছিলেন ক্ষুধার্ত মানুষজন। তাদের লক্ষ্য ছিল সামান্য কিছু খাবার সংগ্রহ। সেই আশাই রূপ নেয় মৃত্যু-ফাঁদে। মুহূর্তেই শুরু হওয়া গুলিতে রক্তে ভেসে যায় রাস্তা। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে আর্তনাদ, কান্না আর নিথর দেহ।

গাজায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনি সরকারের তথ্য অফিস এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সরাসরি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি কোনো মানবিক সহায়তা কার্যক্রম নয়—বরং ছিল পূর্বপরিকল্পিত গণহত্যা। অভিযোগ উঠেছে, ইসরায়েল ও তার মিত্ররা সহায়তার আড়ালে চালাচ্ছে যুদ্ধাপরাধ।

জানা গেছে, ২৭ মে থেকে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ ত্রাণ প্রকল্পে কোনো নিরপেক্ষ তদারকি ছিল না। জাতিসংঘ ও রেডক্রস পর্যন্ত এই প্রকল্প থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। স্থানীয় সূত্র বলছে, সাধারণ মানুষকে ত্রাণ দেওয়ার নামে একটি স্থানে একত্র করা হয়, এরপর চালানো হয় হামলা।

গাজার দেইর আল-বালাহ শহরেও ঘটে একই মর্মান্তিক ঘটনা। আল-জাজিরার একজন প্রতিবেদক জানান, নির্ধারিত সময়ে ত্রাণ নিতে আসা জনতার ওপর হঠাৎই গুলি চালায় ইসরায়েলি সেনারা। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মুগাইর বলেন, রাস্তায় পড়ে থাকা আহতদের উদ্ধারেরও সুযোগ ছিল না—এলাকাটি ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

জাতিসংঘ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে ‘ইচ্ছাকৃত দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির অস্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। সংস্থাটি বলেছে, একদিকে ইসরায়েল গাজার প্রবেশপথ বন্ধ করে রেখেছে, অপরদিকে সহায়তার নামে চালাচ্ছে গুলি। দীর্ঘ ৯০ দিনের অবরোধে গাজা এখন এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

গাজার তথ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ত্রাণ কার্যক্রমকে এখন রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশলের অংশ হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল। তারা একে ‘ব্যর্থ, বিপজ্জনক ও অপরাধপ্রবণ প্রকল্প’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের ভাষ্য, ক্ষুধাকে অস্ত্র বানিয়ে সাধারণ মানুষ হত্যা একটি ঘৃণ্য মানবতাবিরোধী অপরাধ।

ঘটনার সময় সেখানে থাকা এক তরুণ বলেন, আমরা ভাবছিলাম কিছু খাবার পাবো। কিন্তু চোখের সামনেই মানুষ গুলিতে লুটিয়ে পড়ছিল। চারপাশে শুধু রক্ত, লাশ আর কান্না।

একজন মা বলেন, আমার ছেলে শুধু একটা রুটি আনতে গিয়েছিল। সে আর ফিরলো না…

গণহত্যার প্রমাণ কি আর লাগে?

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৭৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছেন। নিখোঁজ অন্তত ১১ হাজার। অনেকে হয়তো ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছেন, আবার কেউ কেউ হয়তো বন্দি গোপন কারাগারে। নিহতদের বড় একটি অংশ নারী ও শিশু।

এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে—গাজায় যুদ্ধ নয়, চলছে সংগঠিত ও পরিকল্পিত গণহত্যা।

কূটনৈতিক তৎপরতা ও অনিশ্চয়তা

যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সংঘাত থামাতে। মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ সম্প্রতি একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন, যার জবাব দিয়েছে হামাস। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো বাস্তব অগ্রগতি হয়নি। ইসরায়েলও তাদের হামলা বন্ধের কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।

সর্বশেষ