মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছর

বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছর
বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছর

গণমাধ্যমে বহুল আলোচিত এক আবেগঘন দৃশ্য, গত ১২ এপ্রিল শনিবার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও ইসরায়েলি নিপীড়নের নিন্দা জানাতে লাখো মানুষ জড়ো হয়। এটি ছিল গত কয়েক বছরে ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমাবেশ।

ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে জনসমুদ্র

রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও তার আশপাশের এলাকায় জমায়েত হওয়া এই বিশাল জনতা ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগানে মুখরিত করেন। প্রতীকী কফিন বহন করে তারা গাজার নারী ও শিশুদের ওপর দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস হামলার চিত্র তুলে ধরেন। পাশাপাশি তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সরকারকে দখলদার ইসরায়েলকে সমর্থনের জন্য দায়ী করে তীব্র নিন্দা জানান।

বাংলাদেশ অঙ্গনে এই জমায়েতে এক ব্যতিক্রমী বিষয় ছিলো। সাধারণ সমাবেশ বা আন্দোলনগুলোতে যেসব রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক বা গোষ্ঠীগত স্লোগান শোনা যায়, এই সংহতি সমাবেশে সেসব ছিল একেবারে অনুপস্থিত। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতের মানুষ—ইসলামপন্থী, সমর্থক-বিরোধী, রক্ষণশীল-বামপন্থীসহ সকল শ্রেণির মানুষ একটি একক বার্তা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হন: ‘ফিলিস্তিনের পক্ষে সমর্থন।’

ইসরায়েল সফর পুনরায় নিষিদ্ধ

পরের দিন ১৩ এপ্রিল রোববার সকালে, বাংলাদেশ সরকার এক আকস্মিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাংলাদেশ পাসপোর্টে আবারও ‘এক্সেপ্ট ইসরায়েল’ অর্থাৎ ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ বাক্যটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর অর্থ হলো, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা এখন আবারো কার্যত তেলআবিব সফরে নিষিদ্ধ। এই পাসপোর্ট নিয়ে কেউ ইসরায়েলে যেতে পারবে না। উল্লেখ্য, এই ‘এক্সেপ্ট ইসরায়েল’ বাক্যটি সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকার শেখ হাসিনার সময়কালে পাসপোর্ট থেকে মুছে দেওয়া হয়। আর তখনই বাংলাদেশ ইসরায়েল থেকে গোপন নজরদারি সরঞ্জাম সংগ্রহ করে।

বাংলাদেশের এই ধারাবাহিক ঘটনা ও অবস্থান ফিলিস্তিনের প্রতি ভালোবাসার গভীরতা ও গাজাবাসীর প্রতি ঢাকার অকুণ্ঠ সমর্থনেরই প্রতিফলন। দেশের অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, রাজনৈতিক অস্থিরতা কিংবা নিরাপত্তাজনিত সমস্যা সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনগণ ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিতে একটু পিছপা হয়নি। দখলদার ইসরায়েল ও তাদের মিত্রদের অপরাধের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে তারা ভয় করেনি, যদিও এই অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন চাপে পড়ার ঝুঁকিও রয়েছে।

এই প্রেক্ষাপট আবারও প্রমাণ করে ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক কতটা পুরোনো ও গভীর, যার শিকড় গাঁথা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সময়কালে। সেই তখন থেকেই রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার পক্ষে বাংলাদেশের ১৭ কোটিরও বেশি মানুষের নিরঙ্কুশ সমর্থন অব্যাহত রয়েছে। এ দেশ এখনও পর্যন্ত দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেনি, যদিও গত কয়েক বছরে বাংলাদেশকে সেদিক থেকে নানা রকম চাপের মুখে পড়তে হয়েছে।

দখলদারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গাজার প্রতি অব্যাহত সমর্থন

গাজা উপত্যকায় দখলদার বাহিনীর গণহত্যা শুরুর প্রথম দিন থেকেই ঢাকা গাজার জনগণের প্রতি পূর্ণ সমর্থন এবং দখলদার বাহিনীর যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের নিন্দা করে আসছে। বাংলাদেশের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ এসব অপরাধকে ‘যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছিলেন, ইসরায়েল সরকারকে অবশ্যই এর জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বাংলাদেশ সরকার অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য অনেকবার আহ্বান জানিয়েছে। ২০২৪ সালের মে মাসে গাম্বিয়ার রাজধানী বাঞ্জুলে অনুষ্ঠিত ১৫তম ইসলামিক কনফারেন্স সামিটে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, গাজার সংকট সমাধানে ব্যাপক এবং সর্বস্তরের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে।

রাজপথে লংমার্চের মাধ্যমে সংহতি প্রকাশ

অপরদিকে বাংলাদেশের জনগণকে গাজার জনগণের প্রতি তাদের সমর্থন জানাতে এবং দখলদার বাহিনীর অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়। গাজাবাসীর অধিকার এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে তারা রাজপথে নেমে আসেন এবং যুদ্ধাপরাধে জড়িত দখলদার বাহিনী ও তাদের সমর্থকদের সকলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানান।

এই বিশাল সমাবেশে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। শিক্ষার্থীরা গাজায় দখলদারের হামলার নিন্দা জানিয়ে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে অনেক প্রতিবাদ এবং মিছিলের আয়োজন করেছে। এ জন্য তারা ব্যাপক প্রচারণা চালায়, যা সারা দেশে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে শিক্ষামূলক ও মিডিয়া ক্যাম্পেইন হিসেবে কাজ করে।

গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক মিছিল ও আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একাডেমিকভাবে বয়কটের আহ্বান জানিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। এতে বিশেষভাবে অংশ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এক বিবৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গাজায় গণহত্যাকে ‘রাজনীতির ঊর্ধ্বে’ বলে দাবি করা শিক্ষার্থীদের সমর্থনে পরীক্ষা এবং ক্লাস সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। এবং সরকারকে ইসরায়েলের উপর আর্থিক বয়কট আরোপের আহ্বান জানানো হয়।

বাংলাদেশ ফিলিস্তিনিদের এক শক্তিশালী সমর্থক

পূর্ববর্তী কয়েক বছরে বাংলাদেশ এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। যাতে বোঝা যায়, বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের অধিকার এবং তার ঐতিহাসিক সংগ্রামের প্রতি দীর্ঘদিনের সমর্থক ও সহায়ক রাষ্ট্র।

২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে, বাংলাদেশে বিজয় দিবস এবং শেখ মুজিবুর রহমানের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এটি দুই রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে এক মানবিক বন্ধনের প্রতীক।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা ফিলিস্তিনের দৃঢ় সমর্থক এবং একনিষ্ঠ মিত্র, যারা ১৯৬৭ সালের সীমানায় পূর্ব জেরুসালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে সমর্থন জানিয়ে আসছে এবং ফিলিস্তিনিদের অবিচ্ছেদ্য অধিকারসমূহের প্রতি সহানুভূতি পোষণ করে।

ফিলিস্তিনি মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের আলজেরিয়া জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের শীর্ষ সম্মেলনে দেওয়া বিখ্যাত বক্তৃতা স্মরণ করেন। শেখ মুজিবুর রহমান সেখানে ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার এবং ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারিত্বের বিরোধিতা করে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরেন।

২০১২ সালের জুন মাসে, বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ রামাদানের সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর সংঘটিত অপরাধের নিন্দা জানান এবং এটিকে ‘যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, ফিলিস্তিন তার পূর্ণ বৈধ অধিকার লাভ না করা পর্যন্ত বাংলাদেশ কখনোই ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিবে না। এর মধ্যে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং পূর্ব জেরুসালেমকে স্বাধীন ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করাও রয়েছে।

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি তাদের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের এই সমর্থন ৫০ বছরের পুরানো একটি ঐতিহাসিক সম্পর্কের অংশ, যা কখনো পরিবর্তন হবে না। তিনি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের জনগণকে, যারা তাদের অর্থনৈতিক দুরবস্থা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনের সাহায্যে আর্থিক অনুদান পাঠিয়েছে।

যুগ যুগ ধরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শক্ত অবস্থান

বাংলাদেশ হলো জাতিসংঘ সদস্যের মধ্যে সেই ২৯ রাষ্ট্রের একটি, যারা ইসরায়েলকে আজও পর্যন্ত স্বীকৃতি দেয়নি। এছাড়াও বাংলাদেশ এমন অল্প কয়েক দেশের একটি, যারা আনুষ্ঠানিকভাবে তার নাগরিকদের ইসরায়েল ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছে এবং ইসরায়েলি পাসপোর্ট গ্রহণ করে না। বাংলাদেশ সরকার স্পষ্টভাবে বলেছে যে, তারা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা না আসা পর্যন্ত ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিবে না।

এমনকি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া রাষ্ট্রের মধ্যে ইসরায়েল প্রথম সারিতে ছিল। ইসরায়েল তখন বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতার স্বপ্নের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে সাহায্য করতে ইচ্ছুক ছিল। তবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মুশতাক আহমদ একটি চিঠির মাধ্যমে ইসরায়েলের এই স্বীকৃতিকে অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা করেন।

২০০৩ সালের নভেম্বর মাসে, বাংলাদেশ সরকার তেলআবিব ভ্রমণের চেষ্টার দায়ে সালাহ উদ্দিন চৌধুরী নামে এক বাংলাদেশি সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে। তিনি সরকারের আনুষ্ঠানিক অবস্থানের বিরুদ্ধে গিয়ে তেলআবিবে যেতে চেয়েছিলেন। তখন তাকে ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, দেশদ্রোহিতা ও অবমাননা’ করার অভিযোগে বিচারের সম্মুখীন করা হয় এবং তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ইসরায়েলের আমন্ত্রণ অস্বীকার

ইসরায়েল কয়েকবার ঢাকাকে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য আহ্বান জানালেও এসব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েল সরকারের এক মুখপাত্র ‘জেরুজালেম পোস্টে’ একটি বিবৃতি দেন। তাতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই! আমরা সংলাপ চাই! আমরা দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক চাই! আমরা বাংলাদেশের জনগণকে পবিত্র জেরুজালেমে আসার জন্য স্বাগত জানাই!’ তবে ২০১৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন যে, বাংলাদেশ সবসময় ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করে এবং ইসরায়েলি দখলদারিত্বকে কখনও মেনে নিবে না।

বাংলাদেশ এবং ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি শুধুমাত্র কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বিস্তৃত। এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ ইসরায়েলের সাথে বাণিজ্য নিষিদ্ধ রেখেছে, যদিও উভয় দেশই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) সদস্য।

ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশ: ৫০ বছরের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক

ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের সম্পর্কের সূচনা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়। সেসময়েই বাংলাদেশের তৎকালীন সরকার এবং প্যালেস্টাইন মুক্তি সংস্থার মধ্যে যোগাযোগ ছিল। যদিও আরব দেশগুলো বাংলাদেশকে একটি নতুন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিলস্ব করছিল, তবুও বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধের সময় ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি ব্যাপক সহায়তা প্রদান করেছিল। তখন বাংলাদেশ একটি চিকিৎসক দল এবং ত্রাণ পাঠিয়েছিল। এটিই ছিল বাংলাদেশ-ফিলিস্তিন দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা।

১৯৭৪ সালে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তখন পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার দ্বিতীয় সম্মেলনের ফাঁকে প্যালেস্টাইন মুক্তি সংস্থার সভাপতি ইয়াসির আরাফাত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত থাকে।

২০০৯ সালে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার পদক্ষেপ শুরু হয় এবং উভয় দেশ তাদের রাষ্ট্রদূত আদান-প্রদান শুরু করে। একই বছরের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের গোলাম আহমাদ ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাসের কাছে তার কূটনৈতিক কাগজপত্র জমা দেন। এবং ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নাহিদা সুবহান ফিলিস্তিনে বাংলাদেশের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত হিসেবে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র ও প্রবাসী মন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকির কাছে তার কূটনৈতিক কাগজপত্র উপস্থাপন করেন।

পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ-ফিলিস্তিন দুই দেশের সম্পর্ক ছিল ঐক্য ও সহযোগিতার। বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনি জনগণের সব ধরনের অধিকার আদায়ে জোর সমর্থন দিয়ে আসছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নীতির প্রতি তার অটুট বিশ্বাস এবং মানবিকতার প্রতি তার দায়বদ্ধতা প্রমাণ করেছে, ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সব প্রলোভন অস্বীকার করেছে। এমনকি তখন বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক সমস্যাসহ রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার মধ্যে ছিল।

সর্বশেষ