হামাসের সামরিক কাসসাম ব্রিগেড সম্প্রতি একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। তাতে গাজায় আটক এক ইসরায়েলি সেনাকে কথা বলতে দেখা যায়। তিনি নিজেকে ‘নম্বর ২৪’ হিসেবে পরিচয় দেন এবং জানান, যুদ্ধবিরতির পর মাত্র দুই মাসে তিনি দুবার ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছেন।
এর আগে কাসসাম ব্রিগেড আরেকটি ভিডিও প্রকাশ করেছিল, যেখানে গোলাবর্ষণের মধ্যে তাদের যোদ্ধাদের বন্দি উদ্ধারের চেষ্টা করতে দেখা যায়। তবে তাতে কোনো বন্দির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
নতুন ভিডিওতে দেখা যায়, বন্দির মুখ ও বাম হাত গুরুতরভাবে জখম। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েল আবার হামলা শুরু করার পর এক দফায় তিনি বোমার আঘাতে আহত হন। এরপর কাসসামের যোদ্ধারা তাঁকে একটি সুড়ঙ্গে সরিয়ে নেয়। কিন্তু সেখানে আবার বোমা পড়ে। অলৌকিকভাবে তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
ভিডিওবার্তায় বন্দিটি বলেন, ‘নেতানিয়াহু ও তাঁর সরকার যেটিকে ‘সামরিক চাপ’ বলছেন, সেটিই আমাদের এই দুরবস্থায় ফেলেছে। আমি চিকিৎসা পাচ্ছি না, হাসপাতালে নেওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই।’
তিনি আরও জানান, হামলার সময় তাঁর পাশে থাকা আরেক বন্দি ‘বার’-এর খোঁজ তিনি জানেন না। তাকে উদ্ধারের অনুরোধ বারবার করেও সফল হননি।
ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যার আগেই। বন্দিটি বলেন, ‘ইসরায়েল যখন স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন গাজার ভেতরে এখনো ৫৯ জন বন্দি রয়েছে। আপনারা কীভাবে পতাকা ওড়াবেন? কীভাবে বারবিকিউ করবেন? কীভাবে আনন্দ করবেন?’
তাঁর আকুতি সাধারণ ইসরায়েলিদের উদ্দেশে: ‘দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমি অনুরোধ করছি—বাড়িতে বসে থাকবেন না। সরকারকে এই পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করে তুলতে দেবেন না। আপনাদের সাহায্য ছাড়া আমাদের মুক্তি সম্ভব নয়। নেতানিয়াহু বলবেন, এটি মানসিক যুদ্ধ। কিন্তু আসল মানসিক যুদ্ধ চলছে আমার ভেতরে।’
ভিডিওর শেষদিকে বন্দিটি বলেন, ‘সম্ভবত এটাই আমার শেষ ভিডিও। আমার পরিবার, বাবা-মা আর সন্তানদের জন্য এটাই হয়তো শেষ বার্তা।’
ভিডিওটির শেষ অংশে কাসসাম ব্রিগেড হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়, ‘বন্দিদের মুক্তি কেবল বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমেই সম্ভব। সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।’
ভিডিওটি এমন সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজায় আরও বড় ধরনের সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করছে। দেশটির অভ্যন্তরে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন জোরালো হলেও সরকার দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘যুদ্ধ চলবে, যতক্ষণ না জীবিত ও মৃত সব বন্দিকে ফিরিয়ে আনা যায় এবং হামাস ধ্বংস না হয়।’
ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির বলেন, ‘গাজায় পূর্ণ সামরিক অভিযানের জন্য সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’
সূত্র: আল-জাজিরা