মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

পঞ্চাশ বছর পর ভিয়েতনামের বেদনা গাজায়, এক নতুন অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি

পঞ্চাশ বছর পর ভিয়েতনামের বেদনা গাজায়, এক নতুন অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি
পঞ্চাশ বছর পর ভিয়েতনামের বেদনা গাজায়, এক নতুন অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি। ছবি : আল জাজিরা

ভিয়েতনাম যুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পর ইতিহাস যেন নতুন করে নিজেকে লিখছে গাজায়। সময় বদলেছে, ভূপ্রেক্ষাপটও ভিন্ন, কিন্তু মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র একেবারে একই—ধ্বংস, অবরোধ, অনাহার আর সর্বগ্রাসী বাস্তুচ্যুতি। ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত ভিয়েতনামে যা ঘটেছিল, আজ ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় সেটাই ঘটছে আরও ঘন, আরও ভয়ংকরভাবে।

তৎকালীন ভিয়েতনামে মার্কিন বাহিনীর বিমান থেকে পড়েছিল হাজারো টন বোমা, যেগুলো গ্রাম আর শহরকে পরিণত করেছিল ধ্বংসস্তূপে। লক্ষ্য ছিল শুধু শত্রুকে পরাজিত করা নয়, বরং এমন এক দাগ কেটে যাওয়া, যা মুছে ফেলাও সম্ভব না।

আর আজকের গাজায়? প্রায় একই দৃশ্য। সেখানকার ৬০ শতাংশ ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। স্কুল, হাসপাতাল, বেকারি—কোনো কিছুকেই ছাড় দেওয়া হয়নি। পুরো গাজা যেন একটি টার্গেট হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভিয়েতনামের দীর্ঘ যুদ্ধ ২০ লাখ প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। গাজায় এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে ৫০ হাজারের বেশি মানুষের, যাদের বড় অংশই নারী ও শিশু। বাস্তবতা হলো, যুদ্ধের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় সাধারণ মানুষেরই—যারা লড়াইয়ের পক্ষেও না, বিপক্ষেও না।

গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে অগণিত পরিবার। জীবন্ত দাফনের মতো করুণ মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের। এখনও উদ্ধার হয়নি বহু মরদেহ, তাদের নাম-পরিচয় জানাও সম্ভব হয়নি।

ঘটনাগুলো যেন আরও বেশি কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে যখন দেখা যায়, গাজার ৯০ শতাংশ মানুষ আজ নিজেদের বাড়ি ছেড়ে ঘরহীন। ধ্বংস হয়েছে দেড় লাখের বেশি ঘরবাড়ি। মাটি এখন বিছানা, মাথার ওপর ছাদ নেই। নিরাপদ আশ্রয় এখন শুধু স্মৃতি।

ভিয়েতনামও এমন বাস্তুচ্যুতির গল্প জানে। সেখানেও ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ গোলাগুলি আর আগুনের ভয়ে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল।

শুধু বোমা নয়, যুদ্ধের আরেক অস্ত্র ছিল খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করা। ভিয়েতনামে যেমন ফসল ধ্বংস করা হয়েছিল, গাজায়ও তাই হচ্ছে। সীমান্ত বন্ধ, সরবরাহ বন্ধ, খাদ্য এখন যেন ওষুধ—দুষ্প্রাপ্য। পানির একফোঁটাও যেন স্বর্ণমূল্য।

জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছে—গাজার ২০ লাখের বেশি মানুষ এখন খাদ্য নিরাপত্তার চরম সংকটে, দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। কারণ একটাই—মানবিক সহায়তা পৌঁছাতেই দেওয়া হচ্ছে না।

ভিয়েতনাম আর গাজার যুদ্ধ, দুই ভিন্ন সময়ের, দুই ভিন্ন প্রেক্ষাপটের হলেও যেটা অভিন্ন, সেটা হলো সাধারণ মানুষের আর্তনাদ। যুদ্ধ যতবার ফিরে এসেছে, বারবার সেই মানুষই হেরেছে।

এই করুণ চিত্র দেখে শুধু সমবেদনা জানালেই হবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া—যাতে সাধারণ মানুষ রক্ষা পায়, সাহায্য পৌঁছে যায় এবং এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান হয় শান্তিপূর্ণভাবে।

সর্বশেষ