গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির দাবিতে আজ শনিবার সন্ধ্যায় তেল আবিবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বন্দিপরিবারদের একটি সংগঠন।
সংগঠনটি জানায়, বন্দি বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের ব্যর্থতা এবং দীর্ঘসূত্রিতার কারণে গাজায় আটক ৫৯ জন বন্দির জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। তারা অভিযোগ করেছে, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গিয়ে বন্দিদের জীবনকে বিপন্ন করছেন।
সংগঠনের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গণচাপ এবং শক্ত আন্দোলনের মাধ্যমেই কেবল বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করা সম্ভব। তাই সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণে অবিলম্বে একটি ব্যাপক গণআন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন।’
এদিকে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল-১২ এর এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৭০ শতাংশ নাগরিক নেতানিয়াহু সরকারের ওপর আস্থা হারিয়েছে।
বন্দিপরিবারদের অভিযোগ, নেতানিয়াহু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গাভির ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচের চরমপন্থী এজেন্ডা বাস্তবায়নে গাজায় স্থল অভিযান ও সামরিক হামলা বাড়িয়ে দিয়েছেন, যার ফলে বন্দিরা গুরুতর ঝুঁকিতে পড়েছে।
সম্প্রতি তেল আবিবজুড়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজপথ। হাজারো মানুষ এসব বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে। আন্দোলনকারীরা শহর অবরোধ ও ধর্মঘটের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
ইতোমধ্যে ইসরায়েলের সাবেক রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারাও পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের আশঙ্কা, সংকট অব্যাহত থাকলে দেশটি গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হতে পারে।
বিভিন্ন জরিপের চিত্র
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা শিনবেতের প্রধান রোনিন বারকে বরখাস্ত এবং গাজায় নতুন করে যুদ্ধ শুরুর সিদ্ধান্ত সরকারের প্রতি জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
- চ্যানেল-১২ জরিপ: ৭০% নাগরিক নেতানিয়াহুর প্রতি আস্থা হারিয়েছে।
- মাআরিব পত্রিকার জরিপ: ৫০% জনগণ নতুন বিচার ব্যবস্থা সংশোধন আইনগুলোর বিরোধিতা করছে এবং ৬৬% মনে করছে সরকার চরমপন্থী ধর্মীয় গোষ্ঠী ও শাসকজোটের মিত্রদের বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
- নির্বাচনী জরিপ: এখনই নির্বাচন হলে নেতানিয়াহুর ডানপন্থী জোট পাবে ৫০টি আসন, বিরোধীরা ৬১টি এবং আরব দলগুলো ৯টি।
কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট যদি নেতৃত্বে ফেরেন, তাহলে বিরোধীরা ৬৭টি আসন পেতে পারে, আর ডানপন্থীরা সঙ্কুচিত হয়ে যাবে ৪৪টি আসনে।
জরিপে আরও দেখা গেছে, চরমপন্থী নেতা স্মোত্রিচের ‘জায়োনিস্ট পার্টি’-র জনপ্রিয়তাও ক্রমেই কমছে।

রিজার্ভ সেনাদের প্রতিবাদ
এদিকে গাজার যুদ্ধে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মেডিকেল টিমের অন্তর্ভুক্ত বেশ কয়েকজন রিজার্ভ সেনা।
তারা এক পিটিশনে জানায়, গাজায় বর্বর আগ্রাসন, আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন, এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ বসতি স্থাপনের কারণে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তাদের মতে, বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপে কোনো অগ্রগতি না হওয়াও এই প্রতিবাদের অন্যতম কারণ।
পিটিশনের মাধ্যমে তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে—যেন যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের পরবর্তী ধাপ দ্রুত কার্যকর করা হয়।
সূত্র: আল জাজিরা