মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

গাজাকে বসবাসের অনুপযোগী করতে কৃত্রিম পানির সংকট তৈরি করছে ইসরায়েল

গাজা উপত্যকাকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলতে ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে পানি সংকট সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছে প্যালেস্টাইন হিউম্যান রাইটস সেন্টার। সংস্থাটি জানিয়েছে, বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানির উৎস বন্ধ করে ফিলিস্তিনিদের ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে দখলদার বাহিনী।

শনিবার, ২২ মার্চ, বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি এই পানি সংকট এখন গাজার ২৩ লাখ মানুষের জীবনকে গভীর হুমকির মুখে ফেলেছে।

বিবৃতিতে সংস্থাটি স্পষ্ট করে জানায়, বিশ্ব পানি দিবসেও গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা থেমে নেই। বরং পানি সরবরাহ বন্ধ রেখে দখলদার বাহিনী সংকটকে আরও গভীর করছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজার পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, পানি পরিশোধনাগার ও স্যানিটেশন অবকাঠামোর ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে বলেও জানায় সংস্থাটি।

তাদের মতে, ইসরায়েলি সিদ্ধান্তে গাজার কেন্দ্রীয় পানি পরিশোধনাগারে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে।

প্যালেস্টাইন হিউম্যান রাইটস সেন্টার বলছে, এই অপরাধগুলো ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘বাড়াবাড়ি’ হিসেবে গণ্য হয়, যার উদ্দেশ্য গাজাকে বসবাসের অনুপযোগী করে ফেলা এবং সেখানে ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া।

তারা আরও জানিয়েছে, গাজার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিশুদ্ধ পানির উৎস এখন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে ফিলিস্তিনিরা এখন অত্যন্ত সীমিত ও দূষিত পানির ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছেন। আগে যেখানে প্রতিদিন জনপ্রতি পানি সরবরাহ ছিল ৮৬ লিটার, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ থেকে ১২ লিটারে।

পানি কর্তৃপক্ষ ও ফিলিস্তিনি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের বরাতে সংস্থাটি জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজার ৮৫ শতাংশের বেশি পানি ও স্যানিটেশন অবকাঠামো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে ফেলেছে।

‘অক্সফাম’–এর তথ্য উদ্ধৃত করে জানানো হয়, ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ৬৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পানি ও স্যানিটেশন নেটওয়ার্ক, ৮৫টি পানি পরিশোধনাগার, ২৪৬টি কূপ এবং ৪০টি বড় পানির ট্যাঙ্ক।

এসব তথ্য তুলে ধরে সংস্থাটি জাতিসংঘের পানি ও স্যানিটেশন অধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধিকে গাজাকে একটি পরিবেশগতভাবে বিপর্যস্ত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ, পানি ব্যবস্থার এই ধ্বংস সংক্রামক রোগ ও মহামারির ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে।

এছাড়া, তারা বলেছে, গাজার এই সংকটের পূর্ণ দায় ইসরায়েলকেই নিতে হবে। একই সঙ্গে তারা পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন এবং নাগরিক অবকাঠামোর সুরক্ষার দায়িত্ব পালনের দাবি জানিয়েছে।

এদিকে, ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, গাজায় সম্প্রতি ফের শুরু হওয়া হামলায় মঙ্গলবার ভোর থেকে শনিবার পর্যন্ত ৬৩৪ জন ফিলিস্তিনি শহিদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ১৭২ জন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

তেল আবিবের দাবি, এই হামলা ওয়াশিংটনের পূর্ণ সমর্থনে চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তির চরম লঙ্ঘন।

যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হলেও ইসরায়েল দ্বিতীয় ধাপে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। অথচ হামাস চুক্তির সব শর্ত মেনে চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জোট সরকারের চরমপন্থী অংশের চাপেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা